বিশ্বে মৃত্যু ২ লাখ ৬১ হাজার

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫৪ জন। মারা গেছেন দুই লাখ ৬১ হাজার ১২৯ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৪ জন। আরও ২২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৯৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যাদের মধ্যে ৪৯ হাজার ২৭২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আক্রান্ত দেশের মধ্যে এখনও শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর রয়েছে স্পেন, ইতালি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল, ইরান, চীন, কানাডা, পেরু ও বেলজিয়াম।
মার্কিন জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা সেন্টার থেকে দেয়া হালনাগাদ তথ্যে জানানো হয়েছে, মহামারী নোভেল করোনায় সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির দেয়া হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা এখন ৭২ হাজার ২৮৪ জন। চীনে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়া এ ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ ও মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। তাতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা এখন ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৫২ জন। আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্পেনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ৫০ হাজার ৫৬১। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু ব্রিটেনে ৩০ হাজারের কিছু বেশি। তবে যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর দুই লাখ ৭৩৯ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন। দেশটিতে সুস্থ হওয়ার হার ১৫ শতাংশের কিছু বেশি আর মৃত্যুর হার প্রায় ৬ শতাংশ। অর্থাৎ করোনায় আক্রান্ত প্রতি এক শ’ জনের মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন। যা বিশ্বে করোনায় গড় মৃত্যুর হারের চেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে করোনা। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা জনবহুল নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের। নিউইয়র্কে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত তিন লাখ ২১ হাজার রোগীর ২৫ হাজার ৭৩ জন মারা গেছেন। বিশ্বের যেকোন দেশের চেয়ে নিউইয়র্কে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। নিউইয়র্কের পর সংক্রমণ ও মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে নিউজার্সি। সেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজার ছয় শ’র বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে আট হাজার ২৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে আক্রান্ত ৭০ হাজারের প্রায় চার হাজার এক শ’ মারা গেছেন। নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির পর সংক্রমণের হিসাবে তালিকায় ওপরে রয়েছে ম্যাসাচুসেটস, ইলিনয়, ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান ও কানেক্টিকাট। দেশের এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির অর্থনীতি পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে তোড়জোড় চালাচ্ছেন তিনি। এদিকে জরুরী অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোয় যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের গবর্নর গ্রিচেন হুইটমারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু মিশিগানে। আক্রান্ত প্রায় ৪৫ হাজার রোগীর চার হাজার ১৭৯ জন মারা গেছেন।
জার্মানিতে স্কুল-দোকানপাট এ মাসেই খুলছে ॥ চলতি মাসেই সব দোকানপাট এবং স্কুল খুলে দিচ্ছে জার্মানি। দেশটির চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের গবর্নরের এক বৈঠকের পর এ বিষয়ে একটি খসড়া চুক্তি হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জার্মানিতে লকডাউন চলছে। দেশজুড়ে করোনার বিস্তাররোধ করতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ওই খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা কড়াকড়ি মে মাসেই তুলে নেয়া হতে পারে। ওই নথিতে বলা হয়েছে যে, নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। ফলে দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন শিথিলের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে লকডাউন পুরোপুরি তুলে নেয়া হবে কিনা সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। বুধবার দেশটির সংক্রামক রোগ বিষয়ক সংস্থা রবার্ট কোচ ইনস্টিটিউট (আরকেআই) জানিয়েছে, দেশটিতে নতুন করে আরও ৯৪৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী ওই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার সাত জন। অপরদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জার্মানিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ছয় হাজার ৯৯৬ জন। দেশটিতে ইতোমধ্যেই করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক লাখ ৩৫ হাজার এক শ’ জন। করোনার এ্যাক্টিভ কেস ২৪ হাজার ৯১৪। এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন এক হাজার ৯১৪ জন। মঙ্গলবারের হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৮৫৫ জন।
রাশিয়ায় আরও ৮৬ মৃত্যু ॥ সপ্তাহখানেক ধরে দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। সেখানে মাত্র চারদিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্ত হয়েছে অন্তত ১০ হাজার ৫৫৯ জন। এ নিয়ে দেশটিতে টানা চতুর্থদিন ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হলো। এর আগে, গত ৩ মে রাশিয়ায় করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিলেন ১০ হাজার ৬৩৩ জন, ৪ মে ১০ হাজার ৫৮১ জন ও ৫ মে শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ১০২ জন। বুধবার রাশিয়ার করোনা ক্রাইসিস সেন্টার জানিয়েছে, দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক লাখ ৬৫ হাজার ৯২৯ জন। মারা গেছেন এক হাজার ৫৩৭ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২১ হাজার ৩২৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের তালিকায় যোগ হয়েছে আরও ৮৬ জন। আর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন এক হাজার ৪৬২ জন। ক্রাইসিস সেন্টারের তথ্যমতে, বুধবার রাশিয়ায় দৈনিক রোগী বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। যা মঙ্গলবার ছিল অন্তত সাত শতাংশ। এদিন নতুন শনাক্ত রোগীদের মধ্যে চার হাজার ৩১৪ জন, অর্থাৎ প্রায় ৪০ শতাংশেরই শরীরে কোন ধরনের উপসর্গ দেখা যায়নি। করোনা সংক্রমণের হটস্পট এখনও মস্কো। গত ২৪ ঘণ্টায় এ শহরে পাঁচ হাজার ৮৫৮ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৯৭৩ জন। যা পুরো দেশেই আক্রান্তের সংখ্যার প্রায় অর্ধেক। বুধবার মস্কোতে দৈনিক রোগী বৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। মারা গেছেন ৫০ জন।
সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত ২০ হাজার ছাড়াল ॥ গত কয়েকদিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮৮ জন। নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হওয়াদের মধ্যে অধিকাংশই অভিবাসী শ্রমিক। তারা বিভিন্ন ডরমিটরিতে বসবাস করেন। গত কয়েক সপ্তাহে এসব ডরমিটরি থেকেই সংক্রমণ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে সিঙ্গাপুর। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ১৯৮ জন। মারা গেছেন ১৮ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক হাজার ৫১৯ জন। করোনার এ্যাক্টিভ কেস ১৮ হাজার ৬৬১। যাদের মধ্যে ২৪ জনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।
ভারতে আরও ১২৬ মৃত্যু ॥ মঙ্গলবার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজারের কাছাকাছি। বুধবার তা বেড়ে ৪৯ হাজার পেরিয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৯৫৮ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৪৯ হাজার ৩৯১ জন। ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা এখন এক হাজার ৬৯৪ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এর মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগীই কো-মর্বিডিটির কারণে মারা গেছেন।
নতুন করে আক্রান্ত যেমন বাড়ছে তেমনই করোনা রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটাও বাড়ছে উল্লেখজনকভাবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১৪ হাজার ১৮৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। করোনা সবচেয়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছে মহারাষ্ট্রে। সেখানে ১৫ হাজার ৫২৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৬১৭ জনের। মহারাষ্ট্রের ৩৬ জেলার মধ্যে ৩৪ জেলায় ছড়িয়েছে করোনা। সেখানে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও বেশি। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন দুই হাজার ৮১৯ জন। এর পরেই রয়েছে গুজরাট। সেখানে করোনা আক্রান্ত ছয় হাজার ২৪৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৬৮ জনের। সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৩৮১ জন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে দিল্লী। সেখানে আক্রান্ত পাঁচ হাজার ১০৪ জন। ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৪৬৮ জন। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে তামিলনাড়ুতে চার হাজার ৫৮, রাজস্থানে তিনি হাজার ১৫৮, মধ্যপ্রদেশে তিন হাজার ৪৯, উত্তরপ্রদেশে দুই হাজার ৮৮০, অন্ধ্রপ্রদেশে এক হাজার ৭১৭, পাঞ্জাবে এক হাজার ৪৫১, পশ্চিমবঙ্গে এক হাজার ৩৪৪ ও তেলঙ্গানায় এক হাজার ৯৬ সংক্রমিত হয়েছেন। কেরলে ৫০২ জন আক্রান্তের মধ্যে ৪৬২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি ॥ বুধবার দিনের শুরুতে নতুন করে আরও ২২ হাজার ৮৩৮ জনের আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। মারা গেছে ৯৪৩ জন। যুক্তরাষ্ট্রে সকালে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাশিয়ায় ৮৬, ব্রাজিল ৩৭, ইরানে ৭৮, বেলজিয়ামে ৩২৩, মেক্সিকোয় ২৩৬। এছাড়া আরও নতুন করে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।