দেশে ভ্যাকসিন নীতিমালার প্রয়োজন

7

দেশে একটি ভ্যাকসিন নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশেই যাতে আরও উন্নত ও সর্বাধুনিক মানের গবেষণাগারসহ ভ্যাকসিন তৈরি করা যায় বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগ-ব্যাধির প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য সে উদ্যোগও নেয়া হবে। স্থাপন করা হবে আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞান গবেষণাগার ও ভ্যাকসিন উৎপাদন কেন্দ্র। সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, বাংলাদেশ পানিসম্পদ ইনস্টিটিউট এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উদ্যোগে এক সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। এর জন্য শীঘ্রই উচ্চপর্যায়ের একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে ভ্যাকসিন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা অতিমারী দেশে দেশে ভ্যাকসিন তৈরির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সর্বোপরি অপরিহার্যতা সবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, নিজস্ব ভ্যাকসিনের উপযোগিতা ও উপকারিতা কতটুকু। মেধাস্বত্ব কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত ও সংরক্ষিত থাকায় বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিন তৈরি করে কুক্ষিগত করে রেখেছে নিছক ব্যবসায়িক স্বার্থে। ফলে বিশেষ করে দরিদ্র ও অনুন্নত দেশগুলো যথাসময়ে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয় ও হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নিজেদের উদ্যোগে দেশেই করোনাসহ এ্যাভিয়েন বা বার্ডফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কলেরা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মাসহ নানা হন্তারক ব্যাধির ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। সংসদীয় কমিটি ইতোমধ্যে সরকারী এসেনসিয়াল ড্রাগস ইন্টারন্যাশনালকে করোনা ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নিতে বলেছে।
কোভিড-১৯ প্রতিষেধক ভ্যাকসিনও দেশে তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় দেশীয় ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিডেটের সঙ্গে চীনের সিনোফার্মের ফর্মুলায় করোনার টিকা তৈরির জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে ইতোমধ্যে। বাংলাদেশে তৈরি চীনের এই করোনা প্রতিরোধক টিকা বাজারে আসতে পারে কয়েক মাসের মধ্যে। সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই টিকা ইনসেপ্টা থেকে সরাসরি কিনে প্রয়োগ করবে জনসাধারণের মধ্যে গণটিকাদান কর্মসূচীর আওতায়। তাতে বিদেশ থেকে টিকা আমদানি অথবা অনুদানের টিকার ওপর আর নির্ভর করতে হবে না। তদুপরি হবে মূল্য সাশ্রয়ী।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে জাতিসংঘ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে করোনার টিকা বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন, যেটি যথার্থ ও সময়োপযোগী। ফলে সারা বিশ্বে টিকার সুষম বণ্টন ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে না। টিকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উন্নয়নশীল ও গরিব দেশগুলো। এই মুহূর্তে অন্তত দেড় শ’ কোটি ডোজ টিকা কিনে নিয়েছে বিশ্বের ৩টি উন্নত দেশ। ফলে বাকি দেশগুলোতে দেখা দিয়েছে টিকার জন্য হাহাকার, যা কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই।