দুর্ঘটনার নামে হত্যাকান্ড বন্ধ হোক

27

কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিদিন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হতাহতের বহু ঘটনা ঘটছে। গত শনিবারও রাজধানীসহ ফরিদপুর, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, গাজীপুর ও হবিগঞ্জে দুর্ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফরিদপুরে সেতুর রেলিং ভেঙে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে মুহূর্তেই আটজনের প্রাণক্ষয়। মর্মন্তুদ এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ২৬ বাসযাত্রী। একই জেলার নগরকান্দায় অন্য এক দুর্ঘটনায় মারা গেছে মা ও ছেলে। এ ছাড়া বগুড়ার শিবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, ময়মনসিংহের ভালুকা, দিনাজপুরের হিলি, ঢাকার আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও পাবনার ঈশ্বরদীতে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে আরো আটজনের। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সন্ধান করতে গেলে প্রধান যে দুটি কারণ সামনে চলে আসবে তা হচ্ছে, অদক্ষ চালক ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন। চালকের অসতর্কতা এবং দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্টদের অনীহাই সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এআরআই বলছে, দেশে ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে। আর চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে ৩৭ শতাংশ। একই সঙ্গে সড়ক নির্মাণে প্রকৌশলগত ত্রুটি ও পথচারীদের অসচেতনতাও দায়ী। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলার কারণ খুঁজতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটিও একই ধরনের তথ্য পেয়েছে। সমস্যা সমাধানে ১১১টি সুপারিশও চূড়ান্ত করেছে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটি। সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৬তম সভায় একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনের পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে বাস্তবায়নযোগ্য ১১১টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে আশু করণীয় ৫০টি, স্বল্পমেয়াদি ৩২টি ও দীর্ঘমেয়াদি ২৯টি সুপারিশ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্রুততম সময়ে সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক সচেতনতা ও শিক্ষা, প্রচার-প্রচারণা, মহাসড়কে প্রকৌশলগত ত্রুটি সমাধান, গতিরোধক, বাস স্টপেজ, ডিভাইডার, লেন, লেভেলক্রসিং, মহাসড়কের সঙ্গে গ্রামীণ রাস্তার সংযোগ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করা। সড়কমন্ত্রী বলেছেন, এ প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করা হবে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ফের বৈঠকে বসার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় চায় একটি টাস্কফোর্স গঠন করে ওই টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা রোধে ওই সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে। স্বল্পতম সময়ে আইনটি কার্যকর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আমরাও চাই যেকোনো মূল্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরুক। বন্ধ হোক প্রাণহানি, দুর্ঘটনার নামে হত্যাকাণ্ড।