মানবপাচার, বৈধ থেকে হয়ে যায় অবৈধ, থাকে না হিসাবেও

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অনেকেই বৈধভাবে কাগজপত্র নিয়ে কোনো দেশে যান, কিন্তু পরে কারও প্ররোচনা কিংবা স্বেচ্ছায় অবৈধভাবে পাড়ি জমান অন্য দেশে। তাই মানবপাচারের হিসাবেও থাকেন না তারা। সম্প্রতি এই সমস্যাটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মানবপাচার নিয়ে আলোচনায় এ বিষয়টি উঠে আসছে।
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে ৮ থেকে ১০ লাখ শ্রমিক বিদেশে যান। বৈধভাবে বিদেশে যাওয়া ব্যক্তিরাও একটা সময় অন্য কোনো উন্নত দেশে অবৈধভাবে যাওয়ার প্ররোচনায় পড়ে পাচারের শিকার হন। তবে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এভাবে অবৈধভাবে অন্য দেশে যাওয়ার সময় যখন ধরা পড়ে কিংবা দুর্ঘটনার শিকার হয় তখন বিষয়টি সামনে আসে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মানবপাচার রোধে সরকারের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। জাতীয় পর্যায়েও কমিটি আছে। কমিটিগুলো জনগণকে সচেতন করার জন্য কাজ করে। ইমিগ্রেশন পুলিশ কাজ করে, আমাদের বিদেশি মিশনগুলোও কাজ করে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আইওএম বা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাকে নিয়ে কাজ করি, তাদের সঙ্গে আমাদের প্রজেক্ট আছে। আমরা পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে কাজ করি। বিভিন্ন এনজিও এটা নিয়ে কাজ করে।’
‘এ বিষয়ে (মানবপাচার) আমাদের আইন আছে, বিধি আছে, কর্মপরিকল্পনা আছে’ যোগ করেন তিনি।
মানবপাচারের কোনো পরিসংখ্যান আছে কি-না জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘মানবপাচার বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছি, আগে সেটা জানতে হবে। মাইগ্রেশন (বিদেশে গমন) হচ্ছে দুই ধরনের- লিগ্যাল ও ইলিগ্যাল মাইগ্রেশন (বৈধ ও অবৈধ)। আমাদের এখানে যে সমস্যাটা বেশি হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা হলো- বৈধভাবে কাগজপত্র নিয়ে বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য দেশে লোকজন যাচ্ছেন। সেখান থেকে আরও ভালো সুবিধার জন্য যখন অন্য দেশে চলে যায় সেটা হয় ইলিগ্যাল মাইগ্রেশন।’
তিনি বলেন, ‘যে লোকটি আমাদের এখান থেকে ভিসা নিয়ে দুবাই গেল, সেখানে দুই বছর কাজ করার পর কারও প্ররোচনা কিংবা কারও সঙ্গে যখন মিসর বা লিবিয়া হয়ে অন্য দেশে পাড়ি জমায় সেই হিসাবটা তো আমাদের পক্ষে পাওয়া মুশকিল হয়। তাই মানবপাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য বলা কঠিন।’
জাহাংগীর আলম বলেন, ‘আমরা যত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি, এই সমস্যাগুলোই আমরা বেশি ফেস করি।’
ভারতে বা ভারত দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি তরুণী পাচার হয়ে যাচ্ছে এবং গত এক দশকে অবৈধভাবে ভারতে পাঠানো হয়েছে প্রায় ৫ লাখ নারী ও শিশু, যাদের বয়স ১২ থেকে ৩০ বছর। এনজিও ও বিভিন্ন সূত্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ২০১৮ সালে ভারতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের একটি জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছিল।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘না দেখে কিছু বলা যাবে না। মানবপাচারের ইস্যুর ক্ষেত্রে আমরা একটি পক্ষ। আমরা আইন প্রয়োগের কাজটি করি। এছাড়া সীমান্ত রক্ষার কাজটি আমরা করি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এটি নিয়ে কাজ করে। সম্মিলিতভাবে হিসাব করলে মানবপাচারের প্রকৃত তথ্য জানা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতে যে যাচ্ছে সে বৈধ কাগজ নিয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয় বর্ডারে বাড়ির উঠান দিয়ে সীমান্ত। সেক্ষেত্রে আন-অফিসিয়ালি মানুষ যাতায়াত করে, কারও ধানি জমি এদেশে, বসতঘর ওই দেশে। এমন কিছু বিষয় তো থাকেই বর্ডারে, আমাদের এখানেও আছে। তারা যখন আসা-যাওয়া করে সেটার বৈধ বা অবৈধ সঠিক পরিসংখ্যান কী কারও কাছে থাকে? তারা (বিএসএফ) কীসের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান করেছে, আমরা সেটা জানি না।’