ইনজেকশন নয় এবার নাকে নেওয়ার টিকা, ট্রায়ালের আবেদন হচ্ছে বাংলাদেশে

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এবার আর ইনজেকশন দিয়ে নয়, নাক দিয়ে টেনে নেওয়া যাবে- এধরণের একটি টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য আবেদন করা হচ্ছে। এই টিকার সবচেয়ে বড় সুবিধা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি গ্রহণ করতে কোনও টিকা কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই। ঝামেলা থাকবে না টিকা সংরক্ষণেরও, দরকার হবে না বিশেষ সংরক্ষণ বা পরিবহন ব্যবস্থারও।
টিকাটি উদ্ভাবন করেছে সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইউনিভার্সিটি। আর মানবদেহে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য সুইডেনের ইম্যিউন সিস্টেম রেগুলেশন হোল্ডিং এবি বা আইএসআর কন্ট্রাক্ট রির্সাচ অর্গানাইজেশন ( সিআরও) হিসেবে বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে। যদি বাংলাদেশ এই টিকার হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন পায় তাহলে নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ এই টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকাতে থাকবে।
একইসঙ্গে বাংলাদেশে এই টিকা তৈরির জন্য গত ৬ জুলাই বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ইউনিমেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে আইএসআর।
আশা করা হচ্ছে আগামী মাসে অর্থ্যাৎ সেপ্টেম্বরে এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)তে আবেদন করা হবে।
এই টিকা উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন-এর সেক্রেটারি জেনারেল ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর। বাংলাদেশে তিনি এ কাজে প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর হিসেবে কাজ করছেন।
অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, বিশ্বজুড়ে এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাসের নানা টিকা আবিস্কারের চেষ্টা হচ্ছে। আর এর ভেতরেই সুইডেনে একটি ভালো টিকা আবিষ্কার হয়েছে, যেটা ন্যাজাল এবং ওরাল– দুইভাবেই দেওয়া যাবে। প্রাণীদেহে স্টাডিতে এর কার্যকারিতা শতভাগ দেখা যাচ্ছে। আর এখন যদি নাক দিয়ে গ্রহণ করা যায়- এমন টিকা আবিষ্কার হয়, তাহলে এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। যদি এই টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটা সফলভাবে করা যায় তাহলে টিকার ক্ষেত্রে বিশাল এক পরিবর্তন আসবে।
কেমন হবে এই টিকার ধরণ- জানতে চাইলে অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, এটা পাউডার জাতীয় টিকা হবে, যার কারণে বিশেষ কোনও পরিবহণ বা বিশেষভাবে সংরক্ষণের কোনও বিষয় থাকবে না।
এটা কোনও কোল্ড চেইন বা ফ্রিজে রাখার দরকার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এটিকে সাধারণ তাপমাত্রায় রাখা যাবে এবং যেহেতু নিডেললেস অর্থ্যাৎ, সুঁই লাগে না তাই এটা পুরোপুরি গ্রিন টেকনোলজি। এই টিকা সংরক্ষণ করার জন্য ইলেক্ট্রেসিটি খরচ করতে হবে না, যেমনটা মডার্না বা ফাইজারের ক্ষেত্রে হচ্ছে।
আফ্রিকান দেশ বা অনুন্নত দেশগুলোতে কোল্ড চেইন মেইনটেন করা খুব কঠিন। আর যার কারণে কোল্ড চেইন ঠিকমতো মেনটেইন না করার ফলে অনেক টিকা নষ্ট হয়ে যায়।
কোল্ড চেইন নেই, এটা একটা ব্রেকথ্রু
এই টিকার কার্যকারিতা সর্ম্পকে বলতে গিয়ে অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, টিকাটি নাক দিয়ে নেওয়ার কারণে নাক এবং মুখের মধ্যেই যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে, তেমনি শরীরে ভিতরে যাওয়ার পর শরীরের মধ্যেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে।
ইনজেকশন ফর্মে টিকা এখন যেটা দেওয়া হচ্ছে, সেটায় কেবল শরীরের ভেতরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হচ্ছে- আর এটাই হচ্ছে এই দুই ধরনের টিকার মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য।
তবে গত তিনমাস ধরে কাজ করা হলেও এ বিষয়ে এখনও কিছু বলা হয়নি আমাদের পক্ষ থেকে। সেটা কেন হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাণীদেহে ট্রায়াল সাকসেসফুল হয়েছে। কিন্তু চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য দরকার হিউম্যান ট্রায়ালেও একইরকম ফলাফল পাওয়া। সেটা না হলে এই মুহূর্তে আসলে হৈচৈ করার মতো কিছু বলা যাবে না। তবে তিনি বলেন, কিন্তু তারপরও আমরা আশাবাদী এর ভালো একটা রেজাল্ট হবে।
এখন দরকার ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স
বাংলাদেশে এই ট্রায়াল করার জন্য বিএমআরসির ইথিক্যাল অ্যাপ্রুভাল দিলে হিউম্যান ট্রায়াল করা সম্ভব হবে, আর হিউম্যান ট্রায়াল করার পর তার রেজাল্ট পেলে একটা ব্রেকথ্রু-যার একটি পার্ট হবে বাংলাদেশ, বলেন অধ্যাপক আহমেদুল কবীর।
তিনি জানান, এই টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর হিসেবে কাজ করছেন তিনি, সঙ্গে আরও আছেন মেডিসিন বিভাগের আরেক স্বনামধন্য চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ।
আর এজন্য প্রটোকল তৈরির কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রটোকল আমরা তৈরি করেছি। আগামী সপ্তাহে এটা বিএমআরসিতে সাবমিট করব, যদি তাদের অনুমোদন পাই তাহলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাংলাদেশে হবে।
আর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ধাপের কাজ হবে মুগদা মেডিক্যাল কলেজে, সেখানে ১৮০ জন মানুষের উপর এই ট্রায়াল হবে। “১৮০ জন নিয়েই পরিকল্পনা করা হচ্ছে, এখন ভলান্টিয়ার হিসেবে যারা এই টিকা দিতে রাজী হবেন, শুধু তাদেরকেই নেওয়া হবে”।
এখানে রেন্ডেমাইজ চয়েস হবে-কোনও বাধাধরা মানুষকে দেওয়া হবে না, বলেন অধ্যাপক আহমেদুল কবীর।