দোয়ারাবাজারে সরকারি ওষুধ পোড়ানোন ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভ

6

দোয়ারাবাজার থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি ওষুধ পুড়িয়ে ফেলার কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যদিও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। তাই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
আবার সরকারি ওষুধ কেন মানুষের কাজে লাগল না, পুড়িয়ে ফেলতে হলো, বিষয়টির তদন্ত হওয়া দরকার বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তদন্তের দাবি করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের নৈনগাঁও গ্রামের দোয়ারাবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন গত সোমবার তাঁর ফেসবুক পেজে বেশ কিছু ছবি ও দুটি ভিডিও চিত্র পোস্ট করেন। এই ছবিগুলো ছিল দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক জায়গায় পড়ে থাকা বেশ কিছু পোড়া ওষুধের ছবি। এর মধ্যে অনেক ওষুধ ছিল আংশিক পোড়া। নানা প্রকারের ওষুধ কার্টনের ভেতর দেখা যাচ্ছিল। এসব পোড়া ওষুধদের ছবি ও ভিডিও দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।
দেলোয়ার হোসেন জানান, হাসপাতালের পাশেই তাঁর বাড়ি। হাসপাতালের মূল ভবনের পেছনে এক ব্যক্তি বিপুল পরিমাণ ওষুধ এভাবে আধা পোড়া অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে বিষয়টি জানান। পরে তিনি গিয়ে ছবি ও ভিডিও করে ফেসবুকে দেন। সোমবার তিনি এসব পোস্ট করার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়ায় রাতে এগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় অনেকেই সেখানে গিয়ে এসব ওষুধ দেখতে পাননি। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেন, হাসপাতালের আরেক পাশে নিয়ে এগুলো মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। এটিও তিনি লাইভ ফেসবুকে সরাসরি দেখিয়েছেন।
কলেজছাত্র দেলোয়ার হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষের অভিযোগ, দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে তাঁরা প্রয়োজনীয় ওষুধ পান না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ বলে বিপুল পরিমাণ ওষুধ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এতে সরকারের যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষও বঞ্চিত হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার নিশ্চয়ই চাহিদার ভিত্তিতে ওষুধ দেয়। তাহলে এত এত ওষুধ কেন থাকবে। এখানে নিশ্চয়ই ঘাপলা আছে। এটি খতিয়ে দেখা দরকার।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গতকাল রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার চিত্র ভালো নয়। মানুষ প্রয়োজনীয় সেবা পায় না। সভায় অনেকেই ওষুধের বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মানুষ যেখানে ওষুধ পায় না, সেখানে ওষুধ পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা এ ঘটনার তদন্ত চাই।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভান্ডাররক্ষক আব্দুল মনাফ বলেন, এসব ওষুধ বেশ পুরোনো। অনন্ত পাঁচ-ছয় বছরে জমা হয়েছে। কমপ্লেক্সের কাজ চলছে। এক ভবন থেকে আরেক ভবনে যাচ্ছেন তাঁরা। তাই অন্যান্য পরিত্যক্ত সামগ্রীর সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ওষুধও পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। তবে কত টাকার ওষুধ পোড়ানো হলো, সেটি তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দোয়ারাবাজার ম্যালেরিয়া জোন। প্রতিবছরই আমরা ম্যালেরিয়ার ওষুধ পাই। কিন্তু সে পরিমাণ রোগী না থাকায় প্রতিবছরই কিছু ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। যেসব ওষুধ পোড়ানো হয়েছে, সেখানে ম্যালেরিয়ার ওষুধই বেশি। সাধারণ ওষুধ কম।’ তিনি আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কমিটি করেই অন্যান্য মেয়াদোত্তীর্ণ সামগ্রীর সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পোড়ানো হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এখন অন্যভাবে প্রচার করে সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। এটা ঠিক নয়।