পরলোকে ট্র্যাজিক কিং দিলীপ কুমার

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
হিন্দি চলচ্চিত্র ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা নায়ক দিলীপ কুমার আর নেই। বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটায় মুম্বাইয়ের পিডি হিন্দুজা হাসপাতালে ৯৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তিনি। তার প্রকৃত নাম মুহম্মদ ইউসুফ খান। প্রায় ছয় দশকের অভিনয় জীবনে মাত্র ৬৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন ট্র্যাজিক কিং খ্যাত এই নায়ক। তার মৃত্যুতে ভারতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীসহ বলিউডসংশ্লিষ্ট প্রায় সকলে দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
বলিউডের এই চির সবুজ নায়কের অফিসিয়াল টুইটার এ্যাকাউন্ট থেকে বুধবার সকালে তার পারিবারিক বন্ধু ফয়সাল ফারুকী প্রথমে এই মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেন। তিনি লিখেন, বিষণ্ন হৃদয় এবং গভীর দুঃখের সঙ্গে আমি আমাদের প্রিয় দিলীপ সাহেবের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করছি। কয়েক মিনিট আগে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৯ জুন থেকে হিন্দুজা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি ছিলেন দিলীপ কুমার। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। বুধবারই তাকে মুম্বাইয়ের সান্তাক্রুজ কবরস্থানে দাফন করা হয়।
১৯৪৪ সালে জোয়ার ভাটা ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন তিনি। এরপর ১৯৫৫ সালে দেবদাস, ১৯৫৭ সালে নয়া দৌড়, ১৯৬০ সালে মুঘল-এ আযম, ১৯৬১ সালে ক্রান্তিসহ একের পর এক হিট ছবি উপহার দেন। তার সর্বশেষ ছবি কিলা যা ১৯৯৮ সালে মুক্তি পায়। এছাড়া ‘আন্দাজ’, ‘শক্তি’, ‘কারমা’, ‘সওদাগর ছবিতেও অনবদ্য অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেন দিলীপ কুমার। তার জন্ম ১৯২২ সালে অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারে। তিনি পাঠানদের অন্যতম গোত্র আওয়ান পরিবারের সন্তান। তারা ছিলেন ১২ ভাইবোন। বাবার নাম লালা গুলাম সরোয়ার। বাবা ছিলেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। ফলের জমজমাট ব্যবসা ছিল তার।
ত্রিশের দশকের শেষ দিকে ইউসুফ খানের পরিবার স্থায়ীভাবে মুম্বাইয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি একটি ক্যান্টিন চালাতেন এবং স্থানীয় বাজারে শুকনো ফল সরবরাহ করতেন।
এদিকে স্বামীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন বলিউডের আরেক অভিনেত্রী সায়রা বানু। তিনি বলেন, দিলীপ সাহেবকে ছাড়া আমার জীবন অর্থহীন, আমি কিছু ভাবতেই পারছি না। তিনি আর নেই। ১৯৬৬ সালে ২২ বছরের ছোট সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার। তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক ৫৫ বছর অতিক্রম করেছে। এই দম্পতির কোন সন্তান নেই। সায়রা বলেন, আল্লাহ্ আমার বেঁচে থাকার কারণটাই নিয়ে গেল। দয়া করে সবাই প্রার্থনা করুন।
দিলীপ কুমার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। সেরা অভিনেতার পুরস্কার হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার পেয়েছেন আট বার। মনোনীত হয়েছেন ১৯ বার। ফিল্ম ফেয়ার লাইফ টাইম এ্যাচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে। ১৯৮০ সালে মুম্বাই শহরের সম্মানিত শেরিফ পদটি অলঙ্কৃত করেন তিনি। ভারত সরকার চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তাকে পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ ও দাদা সাহেব ফালকে সম্মাননায় ভূষিত করে। এছাড়া ১৯৯৭ সালে পাকিস্তান সরকার দিলীপ কুমারকে নিশান-ই-ইমতিয়াজ খেতাব দেয়ার পর তা নিয়ে ভারতে বিতর্ক দেখা দেয়। কিন্তু দিলীপের পক্ষে অবস্থান নেন বর্তমান ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী।
এই মহাতারকার মৃত্যুর খবর প্রচারের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক ও সমবেদনার বার্তা আসতে থাকে। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ লিখেছেন, ‘দিলীপ সাহেব ভারতে এক ইতিহাস রচনা করেছিলেন। তিনি সব ভারতীয়ের অন্তরে সারা জীবন জীবিত থাকবেন।’ নরেন্দ্র মোদি এক টুইটে লিখেছেন, ‘দিলীপ কুমারজি একজন সিনেমার কিংবদন্তি হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি অতুলনীয় মেধার অধিকারী ছিলেন, যে কারণে প্রজন্মান্তরের দর্শকরাও তার অভিনয়ে শিহরিত হয়েছেন। তার এই প্রস্থান আমাদের সাংস্কৃতিক জগতে একটি ক্ষতি।’ তার পরিবার, বন্ধু ও অসংখ্য ভক্তের প্রতি সমবেদনা। শান্তিতে থাকুন। এরপর সায়রা বানুকে ফোনে সমবেদনা জানান মোদি।
মমতা ব্যানার্জী টুইটারে লিখেছেন, ‘দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে আমি শোকাহত। তার অভিনয় ভবিষ্যত প্রজন্মের সিনেমাপ্রেমীদের মনে গেঁথে থাকবে। আমার আন্তরিক সমবেদনা সায়রা বানুকে।’ রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘দিলীপ কুমারজির পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং ভক্তদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। ভারতীয় চলচ্চিত্র দুনিয়ায় তাঁর অভাবনীয় অবদানের কথা আগামী প্রজন্মও মনে রাখবে।’
অমিতাভ বচ্চন লিখেছেন, ‘একজন প্রতিষ্ঠানের বিদায়। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস যখন লেখা হবে, তখন সেটা শুরু হবে দিলীপ কুমারকে দিয়ে, শেষও হবে তাঁকে দিয়ে। তাঁর আত্মার শান্তি ও তাঁর পরিবারের তাঁকে হারানোর শূন্যতা সহ্য করতে পারে, সে জন্য দোয়া করি। বেদনার্ত হৃদয়ে আসুন করজোড় করি, করজোড় করি, করজোড় করি।’
অক্ষয় কুমার টুইটে লিখেছেন, ‘সারা দুনিয়ার কাছে অন্য কেউ হিরো হতে পারে। কিন্তু আমাদের অভিনেতাদের কাছে তিনিই ছিলেন হিরো। দিলীপ কুমার স্যার, আপনি একটা যুগকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা, তাঁর আত্মার জন্য শান্তি কামনা।’