বিনামূল্যে টিকা

4

মহান জাতীয় সংসদের চলমান বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও জোর দিয়ে বলেছেন যে, দেশের সব মানুষ বিনামূল্যে পাবে করোনার টিকা। দেশের অন্তত ১০ কোটি অর্থাৎ ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় এনে করোনার বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি তথা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সরকার বদ্ধপরিকর। জুলাই মাসে আরও টিকা আসছে। তখন পুনরায় শুরু হবে দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচী। ইতোমধ্যে চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে টিকা আমদানির। টিকা কেনা হচ্ছে জনসন এ্যান্ড জনসন থেকেও। দেশেও টিকা তৈরির প্রস্তুতি চলছে। টিকা কেনার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতের জরুরী চাহিদা মেটানোর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ। ১০ হাজার চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। করোনার কারণে ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ১৭ বিলিয়ন ডলার। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। চলতি বছরও বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। অতঃপর প্রধানমন্ত্রী আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন যে, দেশে কেউ না খেয়ে থাকবে না। তদুপরি বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবে সবাই।
দেশে করোনার প্রতিরোধে চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। প্রথমবারের মতো এই টিকা দেয়া শুরু হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ রাজধানীর চারটি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও নার্সদের। টিকা পাবে বিদেশীরাও। চীন বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে কয়েক লাখ ডোজ টিকা উপহার দিয়েছে বাংলাদেশকে। ফলে দেশে চলমান টিকার প্রয়োগে আর বাধা থাকছে না। উল্লেখ্য, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ টিকা অর্থ পরিশোধসহ লিখিত চুক্তি থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে সরবরাহ করতে না পারায় বাংলাদেশের কাছে বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ ও কেনার কোন বিকল্প ছিল না। সরকার ইতোমধ্যে চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যালের গ্রুপ সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা আমদানির বাণিজ্যিক চুক্তি চূড়ান্ত করেছে। ফলে সারাবিশ্বে টিকার সুষম বণ্টন ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে না। টিকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উন্নয়নশীল ও গরিব দেশগুলো। এই মুহূর্তে কয়েক শ’ কোটি ডোজ টিকা কিনে নিয়েছে বিশ্বের ৩টি উন্নত দেশ। ফলে বাকি দেশগুলোতে দেখা দিয়েছে টিকার জন্য হাহাকার, যা কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই।
বাংলাদেশে টিকা সরবরাহ ও প্রয়োগ করা হচ্ছে সরকারী ব্যবস্থানায় সারাদেশে। এর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ২৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবেলার জন্য তৈরি হয়েছে নির্দেশিকা। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশেষ সাফল্য রয়েছে, যার স্বীকৃতি মিলেছে জাতিসংঘ বিশ্বব্যাংক ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক। বাংলাদেশ যথাসময়ে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকাদানের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনে সক্ষম হবে বলেই প্রত্যাশা।