বৃষ্টিতে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ॥ শাবির দু’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন, ডিভাইসসহ ৫ ছাত্র আটক

13
ডিভাইস ও মোবাইল এবং ক্যালকুলেটর সহ আটক ৫ জন।

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বৃষ্টি বিড়ম্বনার মধ্যে দিয়ে সিলেটের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে ‘এ’ ইউনিট ও বেলা আড়াইটায় ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এবার ভর্তি পরীক্ষায় ২৮টি বিভাগের অধীনে এক হাজার ৭০৩টি

শাবিতে বৃষ্টিতে ভিজে পরীক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ।

আসনের বিপরীতে ৭০ হাজার ৫৫৪ জন ভর্তিচ্ছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট ৩৩টি কেন্দ্রে ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং দুপুর আড়াইটার দিকে ৪৬টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা। এ উপলক্ষে মহানগরীতে ছিল যানজট।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাইল ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষা হলে প্রবেশ করার দায়ে ৫ পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। চারটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তাদেরকে আটকের পর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটককৃতদের কাছে থেকে এ সময় ক্যালকুলেটার, সিমসহ বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে।
আটককৃত শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন, বগুড়া সদর এর মো. মাকসুদুর রহমানের পুত্র স্বাদ মোহাম্মদ সাহল (ভর্তি পরীক্ষার রোল: ১৭২৪৮০০), একই জেলার বৃন্দাবন পাড়ার আব্দুল গফুর খলিফার পুত্র মো. মাহমুদুল হাসান (ভর্তি পরীক্ষার রোল: ১৭৩৬৯৮০), সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন এর পুত্র আহসান হাবিব (ভর্তি পরীক্ষার রোল: ১৭১৩৪৯৪), সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের মো. তৌহিদুল ইসলাম দুদু এর পুত্র ইব্রাহীম খলিল (ভর্তি পরীক্ষার রোল: ১৭১৩৪৮৮) এবং জাহিরুল ইসলাম খানের পুত্র মোহায়মিনুল ইসলাম খান রিফাত (১৭৩৩৭৫১)। তারা সকলেই এসপি ট্রাভেলস পরিবহনে করে সিলেট এসেছিলেন এবং সবাই বগুড়া থেকে এসেছেন।
শাবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘এ’ ইউনিটে ৬১৩টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ২৭ হাজার ৩৯ শিক্ষার্থী এবং ‘বি’ ইউনিটের ৯৯০টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেন ৪৩ হাজার ৫০৪ শিক্ষার্থী। এর বাইরে সংরক্ষিত আসন আছে একশটি। সবমিলিয়ে আসন সংখ্যা ১৭০৩টি। প্রতি আসনের বিপরীতে ৪২ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন।
পরীক্ষার্থীরা জানান, অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা দিয়েছেন। তবে সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় তাদের একটু সমস্যায় পড়তে হয়েছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে। আশা করি, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবো। তারা আরো বলেন, অনেক দূর থেকে পরীক্ষা দিতে এসে সুষ্ঠুভাবে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমাদের অনেক ভালো লাগছে।
জানা গেছে, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক মিলিয়ে অন্তত দুই লাখ লোকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে গতকাল শনিবার সিলেট নগরী। সকাল থেকেই পরীক্ষায় বাগড়া দেয় বৃষ্টি। বৈরী আবহাওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পড়েন বিড়ম্বনায়। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, আবার মুষলধারে বৃষ্টি কারণে কিছুটা বাধার সম্মুখিন হন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও বৃষ্টি বিড়ম্বনা ভোগান্তিতে ফেলে অভিভাবকদের। তারা আশ্রয় নেন বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা দোকানের চালা ও মার্কেটের সিঁড়িতে। সময় কাটাতে পত্রিকায় মনোনিবেশ ছিল অনেকের। এর আগে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকে হোটেল-মোটেলে স্থান না পেয়ে রাত কাটান মসজিদে। এসএমপি পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী অনেকেই তাদের গাড়ীগুলো নগরীর বাহিরে রেখে মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় কেন্দ্রে পৌছিতে হয়েছে। এর ফলে সিলেটের সব ক’টি সড়কে ছিল ব্যাপক যানজট। সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির দেওয়া ২০টি বাসেও পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন বাইকার সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবীরাও পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করেন কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে।
স্থানীয় লোকজন জানান, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সিলেটে লাখ খানেক মানুষের বেশি সমাগম ঘটেছে। এ অবস্থায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিথাকলে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যাতায়াতে খুবই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। যানজটে যাতায়াতের ঝামেলার পাশাপাশি বৃষ্টিতে এসুযোগে চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় চারটি কেন্দ্রে ৫ শিক্ষার্থী ক্যালকুলেটরের মধ্যে সিম ঢুকানো ডিজিটাইল ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষা হলে প্রবেশ করেন। পরীক্ষকদের নজড়ে পড়ার পর তাদের আটক করা হয় বলে জানান মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো: জেদান আল মুসা। তিনি জানান, মঈন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজ থেকে একজন, সিলেট সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে একজন, সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে একজন এবং মদিনা মার্কেটস্থ শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে দুই শিক্ষার্থীকে জালিয়াতির ডিজিটাল ডিভাইসসহ আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ক্যালকুলেটরে সিম ব্যবহার করে উত্তর আদান-প্রদান করার চেষ্টাকালে তাদেরকে আটক করা হয়।
এ ব্যাপারে শাবির প্রক্টর অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আটককৃতদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষার সার্বিক বিষয়ে তিনি বলেন, সকালে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া বিকেলে বি-১ ও বি-২ ইউনিটের পরীক্ষাও সফলভাবে সম্পন্ন হয়। পরীক্ষায় কোনো ধরনের অসংগতির খবর আমরা পাইনি।