নীতিবহির্ভূত পিআইসি গঠন ও অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ ॥ দোয়ারাবাজারে পাউবো’র হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

14
দোয়ারাবাজারে পাউবো’র হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম।

দোয়ারাবাজার থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নীতিবহির্ভূত পিআইসি গঠন, অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদানে অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণে জলাবদ্ধতা ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশংকা করছেন ভুক্তভোগিরা। এ ব্যাপারে ২৫ মার্চ জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন উপজেলার ৯ নং সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মামুনুর রশীদ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নীতিমালা অনুযায়ী বিগত বছরগুলোতে স্থানীয় কৃষক ও ইউপি সদসদের পরামর্শে পিআইসি গঠন করে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ গ্রহণের মাধ্যমে উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের কানলার হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলেও চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরে তা মানা হয়নি। উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের স্বার্থে স্থানীয় দোসরদের যোগসাজশে অতিরিক্ত বরাদ্দ গ্রহণে অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের ফলে ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম জলাবদ্ধতাসহ দীর্ঘস্থায়ী বন্যার হুমকির সম্মুখিন। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গত মাসিক সভায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্যরা সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানান। বিগত বছরগুলোতে মাত্র ৫/৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হলেও চলতি বছরে চেইনেজ পরিবর্তন করে ১৪/১৫টি প্রকল্প ও পিআইসি গঠন একেবারে অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়। যার ফলে বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার সৃষ্টি করবে। অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, উপরোক্ত প্রকল্পের ৭/৮টির পিআইসির সাথে পাউবো’র দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী জড়িত রয়েছেন। আর সেজন্যই আমার ইউনিয়নের প্রকল্প গ্রহণ ও পিআইসির তালিকা চাইলে আমাকে তা দেয়া হয়নি। বরং স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে প্রদত্ত উপজেলা কমিটির রেজুলেশন ও স্বাক্ষরবিহীন একটি তালিকায় আমার ইউনিয়নে ১৪টি প্রকল্প রয়েছে বলে জানতে পারেন ইউপি চেয়ারম্যান মামুন। সেসব প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণে সীমাহীন অনিয়ম ছাড়াও স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর হিসাব দেখালেও মূলত: কাজ করানো হয় মাটি কাটার (ড্রেজার) দিয়ে। এ ছাড়ওা প্রতিটি প্রকল্পের পাশে সাইনবোর্ড টানানোর নির্দেশ থাকলেও তা মানা হয়নি। তাই সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সুরমা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামকে জলাবদ্ধতা ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবল থেকে রক্ষা ছাড়াও সরকারি অর্থ লোপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিহীত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মামুনুর রশীদ।
সুরমা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হাওরপাড়ের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, হাওর রক্ষা বাঁধের প্রকল্পগুলোতে সামান্যতম কাজ করে বরাদ্দের অর্থ লোপাটের মহোৎসব চলছে। এ বছর বাঁধে নিম্নমানের কাজ হওয়াতে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্তের আশংকা রয়েছে। সুরমা ইউনিয়নের কানলার হাওরের নাইকোর সড়ক পার্শ্ববর্তী (শান্তিপুর) বাঁধ কেটে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে ৪১ নং পিআইসি সভাপতি এখলাছ ফরাজী বলেন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য বাঁধটি সামান্য পরিসরে কেটে দেয়া হয়েছে। এতে ক্ষতির তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে নির্মাণাধীন বাঁধের কাজে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। পাউবো’র দোয়ারাবাজার উপজেলার দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী শাফিউল ইসলাম আর্থিক ফায়দা হাসিলসহ অভিযোগে প্রতিবেদককে বলেন, পিআইসি ও প্রকল্প গঠন, বাঁধ নির্মাণসহ কেনোকিছুতেই অনিয়ম করা হয়নি। সবকিছুই বিধি মোতাবেক করা হয়েছে।