বৈদেশিক বাণিজ্যে শঙ্কা

2

২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও যুদ্ধ থামার আদৌ কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা এবং সমঝোতার চেষ্টা চললেও পরিস্থিতি বরং আরও জটিল ও ঘোরালো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্ব ইতোমধ্যে রাশিয়ার ওপর আরোপ করেছে নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ। সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে ইউক্রেনকে। যুদ্ধকবলিত অঞ্চলকে নো ফ্লাই জোন হিসেবে ঘোষণার চিন্তা-ভাবনাও চলছে। রাশিয়া অবশ্য বলেছে তা করা হলে দেশটি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে রাশিয়ার বিরোধিতা ও শত্রু বলে বিবেচনা করবে। আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান সুইফট ইতোমধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যাবতীয় আর্থিক লেনদেন স্থগিত করতে নির্দেশ দিয়েছে। ফলে সমূহ বিপাকে পড়েছে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যেরত দেশগুলো, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। ইতোমধ্যে দেশে গম ও রডের দাম বাড়তে শুরু করেছে, যা প্রধানত আমদানি করা হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। অন্যদিকে বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একটি বড় বাজার রাশিয়া। তদুপরি বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সরাসরি সহযোগিতা করছে রাশিয়া। সে অবস্থায় আর্থিক লেনদেন স্থগিত এবং যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে দুই দেশের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় আশঙ্কার কারণ রয়েছে নিশ্চয়ই। সর্বোপরি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ব বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পরিণামে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে, যার প্রভাব পড়বে সর্বত্র।
বাংলাদেশ মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে যাচ্ছে ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সঙ্গে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এগিয়ে নিতে ২০১৯ সালের মে মাসে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ইইইউভুক্ত পাঁচটি দেশ হলো- রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়া ও কিরগিজস্তান। বর্তমানে এই পাঁচটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১৫০ কোটি ডলারের বেশি। মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হলে এর পরিমাণ বাড়বে বহুগুণ। ইতোমধ্যে ১৯টি খাত চিহ্নিত করে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজও শুরু করেছে ওয়ার্কিং গ্রুপ। এসব দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, ওষুধ, আলু ও সবজি রফতানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সার্কভুক্ত ৮টি দেশের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বিধায় ইইইউভুক্ত দেশগুলো স্থানীয় বিপুল বাজার ধরার জন্য শিল্প-কারখানা স্থাপন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে লাভবান হতে পারবে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।