দোয়ারাবাজারে পল্লী চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় সংকটাপন্ন ২৯ দিনের শিশু

10

দোয়ারাবাজার থেকে সংবাদদাতা :
বিএমডিসি আইন অনুযায়ী ফার্মেসীতে প্রেসকিপশন দেখে এন্টিবায়োটিক ঔষুধ বিক্রির বিধান থাকলেও ফার্মাসিস্ট দ্বারা প্রেসক্রিপশন করার কোনো বিধান নেই। কিন্তু তা মানা হচ্ছেনা কোথাও! গ্রাম এলাকার কতিপয় অসাধু ফার্মেসী ব্যবসায়ীরা দেদারসে যত্রতত্র প্রয়োগ করছেন এন্টিবায়োটিক ঔষুধ ও ইনজেকশক। তাদের দৌরাত্ম্য থেকে রেহাই পাচ্ছেনা নবজাতক শিশুরাও! দোয়ারাবাজার উপজেলায় মাত্র ২৯ দিন বয়সী এক নবজাতক শিশুর শরীরে টানা ৫ দিনে ১০টি এন্টিবায়োটিক ইনজেকশক প্রয়োগ করা হয়েছে। তাও আবার কোনো সরকারি অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়াই ফার্মেসী ব্যবসায়ী এক পল্লী চিকিৎসকের দ্বারা। পল্লী চিকিৎসকের এমন খামখেয়ালিপনায় শিশুর অবস্থা সংকটাপন্ন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে (১০ এপ্রিল) শনিবার তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চতুর্থ তলার শিশু ওয়ার্ডে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এখন তার চিকিৎসা চলছে। অপচিকিৎসার শিকার হওয়া এই শিশুর নাম মোহাম্মদ রাসেল মিয়া। সে উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম শুড়িগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমানের সন্তান। সাইদুর রহমান প্রতিবেদককে জানান, গত ৫ এপ্রিল সোমবার তার নবজাতক শিশুর ঠান্ডা কাশি জনিত সমস্যা দেখা দিলে তিনি স্থানীয় লেয়াকতগঞ্জ বাজারের সুজন ফার্মেসীতে ডাক্তার সুজন চক্রবর্তীর সরণাপন্ন হন। এই চিকিৎসক শিশুর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে টানা ৫ দিন শিশুর শরীরে ১০টি এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রয়োগ করেন। এরইমধ্যে শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শনিবার চিকিৎসক সুজন চক্রবর্তীকে না পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে শিশুটিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জানা যায়, পল্লী চিকিৎসক সুজন চক্রবর্তী দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি লিয়াকতগঞ্জ বাজারে প্রায় ২০ বছর যাবৎ ফার্মেসী ব্যবসার পাশাপাশি চিকিৎসা প্র্যাকটিস করে আসছেন। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সুজন ফার্মেসীর স্বত্ত্বাধিকারী পল্লী চিকিৎসক সুজন চক্রবর্তী ভুল চিকিৎসার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি জানান, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আর্থিক সমস্যার কারণে গ্রামের মানুষরা আমাদেরকে ধরে তাই আমরা চিকিৎসা করি। আমি রোগীর সমস্যা দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা করছি। ২৯ দিনের শিশুর ওপর এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ প্রাথমিক চিকিৎসার পর্যায়ে পড়ে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের রোলে এগুলো পরেনা। আমার চিকিৎসা হয়তো ভুল হতে পারে। ভবিষ্যতে এক্ষেত্রে আরো সতর্ক হবো। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সৈকত দাস প্রতিবেদককে জানান, সদর হাসপাতালে শিশুটির চিকিৎসা চলছে। তার ট্রিটমেন্ট করেছি। গ্রাম এলাকার মাত্র ২৯ দিনের বাচ্চার শরীরে এভাবে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রয়োগের অধিকার পল্লী চিকিৎসকের নেই। এটা অপচিকিৎসার পর্যায়ে পড়ে। এভাবে চলতে থাকলে শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। এটা বিএমডিসির আইনেরও লঙ্গন। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন ডাঃ শামস উদ্দিন প্রতিবেদককে জানান, রেজিস্টার ডাক্তার ছাড়া অনভিজ্ঞ পল্লী চিকিৎসকের দ্বারা কোনো ঔষুধ প্রয়োগ কিংবা বিক্রির বিধান নেই। এধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।