অটোরিক্সা ধর্মঘটের প্রথমদিনে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ, যানজটমুক্ত নগরী

18
সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিক্সা মালিক ঐক্য পরিষদ আহূত ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির প্রথম দিনে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের তেলিবাজারে শূন্য রাস্তা।

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে ৫ দফা দাবিতে গতকাল সোমবার সকাল থেকে ৪৮ ঘন্টার ধর্মঘটের প্রথম দিন অতিবাহিত করেছে সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন। এতে যাত্রীদের পোহাতে হয়েছে চরম দুর্ভোগ। তবে এ ধর্মঘটের ফলে নগরীতে ছিলো না কোন যানজট।
সোমবার সকালে থেকে ৫ দফা দাবিতে কর্ম বিরতিকে কেন্দ্র করে সিলেটে বন্ধ রয়েছে সিএনজি অটোরিক্সা। ফলে সড়কে সিএনজি অটোরিক্সা না পেয়ে পায়ে হেঁটে কেউ আবার অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে লেগুনা বা রিক্সা দিয়ে নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বেশি দুর্ভোগে পড়েন চাকরিজীবী লোকজন।

বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট পালন করছে সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা। সিএনজি বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। ফলে বাড়তি চাপ পড়েছে নগর এক্সপ্রেসের উপর।

সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল, কাজিরবাজার ব্রিজ, জিতু মিয়ার পয়েন্ট, তালতলা, বন্দরবাজার, আম্বরখানা এলাকাগুলোতে অন্যান্য দিনের মতো নেই সিএনজি অটোরিক্সার জটলা। তাই বাধ্য হয়ে রিক্সা বা পায়ে হেঁটে অফিসে যান লোকজন। দুর্ভোগে পড়া নারী ও শিশুদের নিয়ে অনেককে টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান করতে দেখা যায়। অনেকে বাসে উঠতে চাইলেও জায়গা না থাকায় উঠতে পারছিলেন না।
সিলেট একটি প্রাইভেট অফিসে কাজ করেন ফখরুল আহমদ। তিনি বলেন, প্রতিদিন সিএনজি দিয়ে অফিসে যাতায়াত করি। গতকাল প্রায় ৩০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি কোনো সিএনজি নেই। আর লেগুনা ও রিক্সায় অতিরিক্ত টাকা যাচ্ছে তাই বন্দর থেকে হাঁটা শুরু করেছি।
করিম মিয়া জানান, সিলেটে জরুরি একটি কাজে রবিবারে এসেছিলাম। গতকাল বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। হোস্টেল থেকে বের হয়ে জানতে পারলাম ধর্মঘট। সড়কপথে যেকোনো সময় যানবাহন পাওয়া যায়। সে জন্য সিএনজিতে যাতায়াত করি। তবে কয়েক দিন পরপর ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তার মতো অসংখ্য মানুষ সিলেট এসে বেকায়দায় পড়েন। সিএনজির জন্য অপেক্ষা করছেন কিন্তু পাচ্ছেন না।
সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী রত্না বেগম জানান, নগরীর শিবগঞ্জ থেকে পায়ে হেঁটে আম্বরখানা এসেছি। অটোরিক্সা নেই। রিক্সাতে উঠতে চাইলে পাওয়া যায়নি।
সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ জানান, গ্রীল সংযোজনের সিদ্ধান্ত বাতিল একটি মীমাংসিত বিষয়। ঢাকা চট্টগ্রাম ছাড়া অধিকাংশ জেলায় সিএনজিতে গ্রীল নেই। আমরা বিগত দিনে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল আব্দুল মুহিতের সাথে আলাপ করে বিষয়টি মীমাংসা করেছি। সে সময় সিদ্ধান্ত হয় অন্যান্য জেলায় গ্রীল কার্যকর করার পর সিলেটে তা বাস্তবায়ন করা হবে। এরপর কিছুদিন এ বিষয় নিয়ে কথা বন্ধ ছিলো। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন’র সাথেও আমরা বৈঠক করেছি, তিনিও আমাদের পাশে আছেন। কিন্তু প্রশাসন আমাদের পাশে নেই। মহানগরীতে ব্যাটারি চালিত রিক্সা নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তা বন্ধ করা হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করতে হয়। বছর শেষে আমরা ট্যাক্স দিচ্ছি, কিন্তু আমাদের এই সেবাটুকু নিশ্চিত করতে ব্যর্থ কর্তৃপক্ষ।
এসব দাবী কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না জানতে চাইলে জাকারিয়া জানান, সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন সংগঠনটিতে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। আঞ্চলিক পরিবহন কমিটিতে আমাদের সংগঠনের কোনো প্রতিনিধি নেয়া হয়নি। আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সাথে বৈঠক করে পরিবহন সংশ্লিষ্ট সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রতিনিধি না থাকায় আমাদের দাবী উত্থাপনের সুযোগ হয় না। এখন আঞ্চলিক পরিবহন কমিটিতে আমাদের সংগঠনের প্রতিনিধি চাই। এছাড়া, মেট্রোসিটির আওতাধীন মহাসড়কগুলোতে গাড়ি চালানোর অনুমতি চায় সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন। দাবী আদায় না হলে কাল ২৩ ডিসেম্বর সভা শেষে সিলেট মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচী পালন করবে সংগঠনটি।