লকডাউন নিয়ে সিলেটে চরম বিভ্রান্তি

61

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে এখনই লকডাউন কার্যকর হচ্ছে না। ওপর থেকে নির্দেশনা না আসা এবং সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল রাতে এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করলে গতকাল বুধবার সিলেট সার্কিট হাউসে মাল্টিসেক্টরিয়াল কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্তের বরাত দিয়ে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, সভায় সিলেটে রেড, গ্রীণ, ইয়োলো জোনে শুধু ভাগ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কবে নাগাদ লকডাউন দেয়া হবে সেটা সিদ্ধান্ত হয়নি। সিভিল সার্জন আরো বলেন, জুন মাস ব্যাংকিংখাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে মাসটির গুরুত্ব অনেক। এসব বিবেচনা করেই মূলত লকডাউন করা হচ্ছে না। আলাপকালে পুরো তথ্য না জেনে বিভিন্ন মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিভিল সার্জন।
সিলেট জেলার বিভিন্ন এলাকা ও মহানগর এলাকার রেড জোনের প্রস্তাব করা ১৯টি ওয়ার্ডে লকডাউন কার্যকর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ইয়েলো জোন ও গ্রীণ জোনে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়ার কথা ছিল। সে ছক অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করার কথা থাকলেও আপাতত হচ্ছে না।
সিলেটে লকডাউন করা নিয়ে গত মঙ্গলবার সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলো আজ বৃহস্পতিবার থেকে রেড জোন চিহ্নিত হওয়া এলাকাকে লকডাউন করা হতে পারে। তবে মঙ্গলবার রাতে সিটি করপোরেশনে এক বৈঠকে শনিবার থেকে সিলেট নগরীতে লকডাউন কার্যকরের প্রস্তাব দেন মেয়রসহ কাউন্সিলররা। অপরদিকে, গতকাল বুধবার সিলেটে করোনা মোকাবেলায় মাল্টিসেক্টরাল কমিটির বৈঠকে এখনই লকডাউন না করার সিদ্ধান্ত হয়।
লকডাউন ও পৃথক জোনে ভাগ করা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই সমন্বয়হীনতায় জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসক ও করোনা মোকাবেলায় জেলা মাল্টিসেক্টরাল কমিটির সভাপতি কাজী এম. এমদাদুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেছেন, সিলেটে জোন ভিত্তিক লকডাউনের জন্য এখনও কোন নির্দেশনা আসেনি। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, কিছু কিছু ফেসবুক পেজ ও আইডি থেকে কখনও বৃহস্পতিবার কখনও আগামী শনিবার থেকে সিলেটে জোনভিত্তিক কঠোর লকডাউন কার্যকর করা হবে বলে প্রচার করা হচ্ছে। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় রেড, গ্রীণ, এবং ইয়েলো জোন নির্ধারণ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী সিভিল সার্জনের কার্যালয় এবং সিটি করপোরেশন জোন নির্ধারণ করে তালিকা জমা দিয়েছেন। এই জোনগুলোর কোথায় কি ব্যবস্থা নেয়া হবে, সে ব্যাপারে এখনও সরকারের কোন নির্দেশনা আসেনি। ফলে আজ বৃহস্পতিবার কিংবা পরশু শনিবার থেকে জোনভিত্তিক কড়া লকডাউন জারি করার খবর অসত্য এবং ভিত্তিহীন।
গত ১৪ জুন নগরীর ১৯ টি ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে এসব এলাকা লকডাউন করার একটি প্রস্তাবনা সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। এরপর গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে সিলেট সার্কিট হাউসে বৈঠকে বসে করোনা মোকাবেলায় গঠিত জেলা মাল্টিসেক্টরাল কমিটি। সিলেটের জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভা শেষে কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল বলেছিলেন, আমরা রেডজোন চিহ্নিত হওয়া এলাকাকে লকডাউন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে মানুষজনকে একদিনের সময় দিতে চাই। তাই বৃহস্পতিবার থেকে এটি কার্যকর হবে।
এ ব্যাপারে বুধবার বিকেলে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, সিভিল সার্জন থেকে জোন ভিত্তিক যে তালিকা করা হয়েছিল তা বুধবারের জেলা মাল্টিসেক্টরাল কমিটির বৈঠকে গ্রহণ করা হয়নি। ওই তালিকায় কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। এজন্য আক্রান্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এই তালিকার উপর ভিত্তি করে রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোন করা হবে। পরে তা কেন্দ্রীয় কারিগরি কমিটিতে পাঠানো হবে। তারা এটা পর্যালোচনা করে মতামত দিবে। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় কারিগরি কমিটির মতামত নিয়ে জেলা মাল্টিসেক্টরাল কমিটি আবার বৈঠক করবে। ওই বৈঠকে জোন ভিত্তিক ম্যাপ তৈরি করা হবে। কারণ ম্যাপ না হলে সেনাবাহিনী, পুলিশ বা অন্যকেউ কাজ করতে পারবে না। সেই ম্যাপ নিয়ে সিভিল সার্জন ঘোষণা দিবেন কোন কোন এলাকা লকডাউন হবে। আসলাম উদ্দিন বলেন, আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে আমরা আশা করছি সকল প্রক্রিয়া শেষ হবে। এরপরই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং কার্যকর হবে।