কানাইঘাটে ডাকাতের গুলিতে নিহত ইফজাল হত্যা মামলার নতুন মোড় ॥ পিবিআই’র হাতে পরিকল্পনাকারী সহ ২ জন গ্রেফতার

37
কানাইঘাটের ছোটদেশ গ্রামে ডাকাতের গুলিতে নিহত ইফজালের বাবা আব্দুল জলিলের সাথে কথা বলছেন পিবিআই’র সিলেটের এসপি খালেদুজ্জামান।

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
বিগত আড়াই বছর পূর্বে কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের ছোটদেশ আগফৌধ গ্রামের আব্দুল জলিলের বাড়িতে ডাকাতিকালে ডাকাতদের গুলিতে নিহত জলিলের পুত্র ইফজাল উদ্দিনের হত্যা মামলা আদালতের নির্দেশে পুনরায় পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর ডাকাতি ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নতুন করে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই কর্মকর্তারা। নিহত ইফজালের চাচাতো ভাই এজাহার বহির্ভূত আসামী আব্দুল্লাহকে সম্প্রতি গ্রেফতার করে পিবিআই’র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দীর সূত্র ধরে কিভাবে চাচা আব্দুল জলিলের বাড়িতে বিভিন্ন এলাকা থেকে পেশাদার ডাকাতদের এনে ডাকাতি সংঘটিত করে চাচাতো ভাই ইফজাল উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়, তার বর্ণনাও পিবিআই’র কাছে দেয় আব্দুল্লাহ ও অপর গ্রেফতারকৃত আসামী কাওছার আহমদ। গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় মামলার অধিকতর তদন্ত করার জন্য ডাকাতের গুলিতে নিহত ইফজাল উদ্দিনের বাড়িতে আসেন সিলেট পিবিআই’র এসপি খালেদুজ্জামান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কামরুজ্জামান। এ সময় তারা নিহত ইফজালের স্ত্রী সহ বৃদ্ধ বাবা আব্দুল জলিলের সকল বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং যেখানে ডাকাতরা ইফজালকে গুলি করে হত্যা করে তার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনার সাথে মামলায় উল্লেখিত আসামীদের পাশাপাশি প্রকৃত পক্ষে কারা জড়িত ছিল তা উদঘাটন করার জন্য আরো একটি বাড়িতে যান তারা।
উল্লেখ্য গত ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল গভীর রাতে একদল অস্ত্রধারী ডাকাত বৃদ্ধ আব্দুল জলিলের পাকা বাড়িতে হানা দিয়ে ঘরের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের অবস্থান টের পেয়ে পাশের একটি বসত ঘর থেকে ডাকাতদের প্রতিরোধ করার জন্য তার ছেলে ইফজাল উদ্দিন ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় ডাকাতদের সাথে তার ধস্তাধস্তি হলে ডাকাতির সাথে জড়িত কয়েকজনকে চিনে ফেললে ডাকাত দল ইফজালকে পেটে গুলি করে হত্যা করে। পরে নিহত ইফজালের বাবা আব্দুল জলিল বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে ডাকাতি ও হত্যার সাথে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) গ্রেফতারকৃত ৫ জন সহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট প্রেরণ করেন।
জানা যায় কয়েক মাস পূর্বে মামলার বাদী চার্জশীটের অসন্তোষ প্রকাশ করলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য সিলেট পিবিআইকে নির্দেশ প্রদান করেন। এতে পিবিআই দায়িত্ব পেয়ে ঘটনার সাথে আর কারা কারা জড়িত রয়েছে তা চিহ্নিত করতে তদন্তে নামেন। তদন্তকালে ডাকাতি ও ইফজাল হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নিহতের আপন চাচাতো ভাই একই গ্রামের আব্দুস শুক্কুরের পুত্র আব্দুল্লাহকে ১৩ অক্টোবর গ্রেফতার করে পিবিআই। এরপূর্বে গত ৬ সেপ্টেম্বর বীরদল ভাড়ারীফৌদ গ্রামের সইদুর রহমানের পুত্র কয়ছর আহমদকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এ দুইজনকে গ্রেফতার করার পর কীভাবে আব্দুল জলিলের বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল এবং ইফজালকে গুলি করে কারা হত্যা করেছে তা স্বীকার করে। তবে থানা পুলিশের চার্জশীটে পিবিআই’র হাতে গ্রেফতার আব্দুল্লাহ ও কয়ছরের নাম ছিল না।
পিবিআই’র এসপি খালেদুজ্জামান তদন্তকালে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, আমরা ইতিমধ্যে ডাকাতি ও হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত আব্দুল্লাহ ও কয়ছরকে গ্রেফতার করেছি। তারা স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছে। শীঘ্রই ডাকাতি ও ইফজাল উদ্দিন হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট প্রদান করা হবে।