সিয়াম সাধনার মাস

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ মাহে রমজানের ৫ম দিবস। আমাদের আখিরাতমুখী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠার এটিই সময়। বর্তমান সমাজে ‘চেতনা’ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত। যেকোন ব্যাপারে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক কার্যপরিসরে মৃতপ্রায় ও উদাসীন এ সমাজকে জাগিয়ে তোলার জন্য আমরা ‘চেতনা’র প্রয়োগ করি। কিন্তু একটি বিশেষ চেতনা জাগরুক করতে পারলে আমাদের হাজার অচেতন অবস্থা কেটে উঠত। মানুষ ধনের প্রতিযোগিতা, মানের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতো না, অবতীর্ণ হতো সত্যনিষ্ঠ ও আমানতদার প্রমাণের প্রতিযোগিতায়। ফলে লাভ হতো যে, প্রতিযোগিতার বাজারে দুর্বল শ্রেণী মাঠে মারা যেত না, ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার স্বার্থে মানুষ যা-তা করার সাহস পেত না। মাস্তান কমতো, দুর্নীতি আর দুর্নীতিবাজ দুটোই নিপাত যেত। লোকেরা অন্যের অনিষ্ট চিন্তা না করে ত্যাগী মনোভাব নিয়ে সমাজ সুন্দরে অবদান রাখত। সে বিশেষ চেতনাটি হলো আখিরাতের ভয় বা পরকালীন চেতনা। মনে মনে এ হিসাবটা বারবার করে দেখা যায় যে, আমার সুনির্দিষ্ট এ দুনিয়াবী জীবনের পরে বহুত কষ্টার্জিত ধনসম্পদগুলো আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকছে কিনা। বস্তুত দেখা যায় বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বাদশাহ থেকে নগণ্য ফকির পর্যন্ত জন্মকালীন সময়ে যে অসহায় অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, ঠিক একই অসহায় ও নিঃস্ব বদনে ভূগর্ভে (মাটির নিচে) চলে যেতে হয়।
কোন এক বাদশাহ তাঁর বাদীকে খুব ভালবাসতেন। এ ভালবাসার উপহারস্বরূপ তিনি বাদীকে একটি শাহী ক্ষমতাদান করলেন। ক্ষমতাটি হলো : যদি তুমি কোন বোকা লোক পাও তবে তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করবে। এরপর থেকে থুথু খাওয়ার ভয়ে শাহী মহলে সবাই চিন্তাভাবনা করে চলতে লাগলো। এমনকি শিক্ষিত পন্ডিতরাও বেশ সতর্ক। বাদী কোথাও বোকা লোক পেল না যার মুখে থুথু ফেলা যায়। একদিন বাদশাহ কঠিন অসুখে-। তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। সবাইকে ডেকে ডেকে আখেরি বিদায় নিচ্ছেন। বাদীকেও ডেকে বিদায় চাচ্ছেন তিনি। বাদশাহ বলছেন : বাদী আমি চললাম।’ বাদী আরজ করলেন, বাদশাহ নামদার, আপনি কোথায় যাচ্ছেন? উত্তরে বাদশাহ : আমি এমন জায়গায় যাচ্ছি যেখান থেকে কেউ কোন দিন ফিরে আসে না।’ বাদী : বাদশাহ সালামত! আপনার সঙ্গে সেবা কায্যের বাদী, লোকজন, বিছানাপত্র, সৈন্য সামন্ত, তখত ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে? বাদশাহ বললেন : না বাদী! ওখানে দাসদাসী, সৈন্য সামন্ত, লোকজন, বিছানাপত্র কিছুই নেয়া যায় না। তবে যে জিনিসের বিনিময়ে এগুলোর চেয়ে বেশি দামী বিছানা পত্র, সেবিকা, আরাম আয়েশ পাওয়া যায় আমি তো তার কিছুই সংগ্রহ করিনি বাদী। আমি যে আজ রিক্তহস্ত। এত কিছু থেকেও আজ শূন্য হাতে আমাকে বিদায় নিতে হচ্ছে বাদী। আমি জীবনে এত বোকামি করেছি। আজ আমি বুঝতে পেরেছি আমার মতো বোকা আর একটিও নেই।
বাদীঃ বাদশা মহান! আজ থেকে বারো বছর আগে আপনি আমাকে থুথু নিক্ষেপের ক্ষমতা অর্পণ করেছিলেন। আমি এত দিন তেমন কোন বোকা লোক না পেয়ে সেই ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারিনি। আজ আমি বুঝতে পারছি আপনি সে বোকা। এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে আরাম আয়েশের জন্য আপনার যা দরকার এ সবই আপনি করেছেন; বরং অনেক বাড়িয়ে করেছেন। দাসী দরকার একজন, যোগাড় করেছেন হাজার জন। হাতি-ঘোড়া, দালান-কৌটা সব করেছেন এই রূপ। অথচ চিরকাল যেখানে থাকতে হবে সেখানকার জন্য আপনি কিছুই করেন নি। তাই আপনি সে বোকা শ্রেষ্ঠ- যার মুখে এই অধম বাদী থুথু নিক্ষেপ করতে পারে!
কুরআনুল কারীমে এসেছে : ওয়া তাজাওয়াদু ফাঈন্না খাইরাজ্জাদি ত্ তাকওয়া অর্থাৎ হে মানুষেরা! তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করে নাও তবে মনে রেখো যে, তাকওয়াই হলো উত্তম পাথেয়।’ তাকওয়া মানেই হলো পরকালীন জবাবদিহিতার মানসিকতায় উজ্জীবিত হয়ে হালাল হারাম বাছ বিচার করে চলা। আসলে দুনিয়ার বুকে খুব নগণ্য পরিমাণ মানুষই পরকালকে অস্বীকার করে। অপর পক্ষে প্রায় সকলেই আখিরাতকে মানুষের অবধারিত চিরস্থায়ী মঞ্জিল হিসেবে বিশ্বাস করে। কিন্তু সমস্যা হলো কাজের মাঝে এ বিশ্বাস সংরক্ষণ করে না। এতেই বিপত্তি। আখিরাতের জন্য তো বটেই, দুনিয়ার সুখ-সৌন্দর্যের জন্যও চাই পরকালীন সচেতনতা সর্বক্ষণ।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফে বলেনÑ অনন্তর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে বিন্দু পরিমাণ নেক আমল করবে, সে তা দেখতে পাবে। আর যে ব্যক্তি বিন্দু পরিমাণ বদ আমল করতে সেও তা দেখতে পাবে। (যিলযাল: ৭-৮)
আর পার্থিব জীবনতো খেলা ও তামাশা ব্যতীত কিছুই নহে, আর মুত্তাকীদের জন্য পরকালের বাসস্থানই উত্তম, তোমরা কি ভেবে দেখনা? (আনআম ৩২)
হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা.) রাসূলে কারীম (স.) হতে বর্ণনা করেছেন, কিয়ামতের দিন আদম সন্তানকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও (স্ব-স্থান হতে) নড়তে দেয়া হবে না। ১. তার জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত করেছে। ২. যৌবনের সময়টাকে কিভাবে ব্যয় করেছে। ৩. ধন সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে। ৪. তা কোনপথে ব্যয় করেছে। ৫. সে দ্বীনের কতটুকু জ্ঞানার্জন করেছে সে অনুযায়ী আমল করেছে কিনা। (তিরমিযী শরীফ)।