শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়ার চাপ

26

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ‘লকডাউন ঘোষণা’ কার্যকর অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা, এটা প্রমাণিত। তবে লকডাউনের ব্যাপ্তি ও মেয়াদ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আবার সুষ্ঠুভাবে এবং যথাসময়ে কার্যকর করতে না পারলে এই অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা সুফল দেয় না, এটাও প্রমাণিত। লকডাউনের অবসানের প্রক্রিয়া নিয়েও কথা রয়েছে হুট করে একেবারে তুলে দেওয়া হবে, নাকি পরিস্থিতি পর‌্যালোচনা করে স্থানে স্থানে এবং ধাপে ধাপে তোলা হবে। লকডাউন ব্যবস্থা চীনের অভিজ্ঞতাপ্রসূত, তারা কিন্তু গোটা দেশ লকডাউন করেনি; বরং সীমান্ত বন্ধ করেছে এবং প্রাদুর্ভাবের মূল কেন্দ্র লকডাউন করেছিল। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলোতে কড়া নজর রেখেছিল; দেশের বাকি অংশ স্বাভাবিক ছিল। অন্যান্য দেশ লকডাউন জারিতে বিলম্ব করেছে বা বাস্তবায়নে শিথিলতা দেখিয়েছে। বাস্তবায়নে সুষ্ঠুতা ও কঠোরতা থাকলে এই ব্যবস্থার ব্যাপ্তি ও মেয়াদ কমানো সম্ভব। চীনই উদাহরণ, তারা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় পূর্ণ মাত্রায় শুরু করে দিয়েছে।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ব্যাপক মাত্রায় বিঘ্নিত হলে গোটা অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। অতএব, লকডাউন ব্যবস্থা নিয়ে গঠনমূলক চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী মহলের পক্ষ থেকে শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়ার চাপ বাড়ছে। চাকরিজীবী, কর্মজীবী মানুষের পক্ষ থেকেও তাগাদা রয়েছে। বেকারত্ব রোধ, দরিদ্রদের কাজের সুযোগ, অর্থনীতির ক্ষতি কমিয়ে রাখতে এ ধরনের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে। সরকারপ্রধানও বলেছেন, ধীরে ধীরে কিছু শিল্প-কারখানা চালু করতেই হবে। পরিস্থিতি বুঝে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে শ্রমিকদের, কর্মজীবী মানুষের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে রোজার সময় সীমিত পরিসরে কিছু শিল্প-কারখানা চালু করা যেতে পারে।

উদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতিতে সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে লকডাউন থাকলে অনেক মানুষ কাজ হারাবে, চরম খাদ্যসংকটে পড়বে; সেবা খাত এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়বে। অতএব, মানুষের জীবনপ্রবাহ সচল রাখার স্বার্থে, অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার স্বার্থে পরিস্থিতির সার্বিক পর‌্যালোচনা জরুরি এবং ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে শিল্প-কারখানা ও সেবা খাত সক্রিয় করার কথা এখন ভাবতে হবে এবং জনস্বাস্থ্যের দিকে তীক্ষদৃষ্টি রেখে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো মহল যাতে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নাগরিকদের এবং জাতীয় অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে না পারে, সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। ব্যবস্থাপনায় কোনো ধরনের ভ্রান্তি বা শিথিলতা শুধু অর্থনীতিকে নয়, জনগণকেই বিপন্ন করে তুলবে। দরকার নিবিড় ভাবনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত।