সিলেট বিভাগের শীর্ষ উলামায়ে কেরামের আহবান \ জুম্মা, জামাত ও তারাবীর জন্য মসজিদকে উন্মুক্ত করে দিন

35

হাদিসে আছে-নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপদ দেখলে মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নিতেন। সালাত ইত্যাদি ইবাদাতের মাধ্যমে উত্তরণের জন্য দোয়া করতেন।
মুমিনদের বিশ্বাস মতে কোন রোগ বা ভাইরাস আল্লাহর হুকুম ছাড়া অন্য কারো মাঝে সংক্রমিত হতে পারে না।
কোন অসুস্থ ব্যক্তি যেন সুস্থ ব্যক্তির নিকট না যায়—এই হাদিসের আলোকে নিশ্চিতভাবে অসুস্থদের মসজিদ থেকে বারণ করার এখতিয়ার কোন সরকার বা কর্তৃপক্ষের থাকলেও নিশ্চিতরূপে সুস্থব্যক্তিদের মসজিদে গিয়ে জামাত আদায় করতে বাধা দেয়ার শরয়ী অধিকার নেই।
মহানবী (সা.) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলে বহুবার মহামারী দেখা দিলেও মসজিদে জামাত বন্ধ করার কোন নির্দেশ জারি করা হয় নি।
কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, গত ৬ এপ্রিল দেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ২৯ মার্চের যৌথ বৈঠকে সিদ্ধান্তকৃত ৮ শ্রেণির লোক ছাড়াও অন্যান্য সুস্থ সবল ব্যক্তিদেরও পাঁচ ওয়াক্তি জামাতে ৫জন ও জুম্মার জামাতে দশজনের অতিরিক্ত মুসল্লীর অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়।
যা গত ২৯ তারিখের যৌথবৈঠকের সিদ্ধান্তের অতিরিক্ত হওয়ার পাশাপাশি নিম্নকারণ সমূহের আলোকে আল্লাহ প্রদত্ত বর্তমান মহাদুর্যোগ লাঘবের ক্ষেত্রে আশঙ্কাজনক।
মহামারী যে সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন তিনি ছাড়া আর কেউ এ থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা রাখেন না। মসজিদে সংখ্যা নির্ধারণের ফলে অনেক নিয়মিত নামাযী ব্যক্তিও ফরয নামায আদায়ে অক্ষম হয়ে পড়েছেন।
কারণ প্রায় মসজিদে সর্বক্ষণ তালা লাগানো থাকে। এতে কোনা ব্যক্তি একা ফরয নামায আদায় করাও সম্ভব হয় না। এর জন্য আল্লাহর গজব আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক নামাযী মসজিদে গিয়ে প্রার্থনা করায় দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ বলতে গেলে নেই-ই।
অন্যদিকে ঢাকাসহ বড়বড় শহরগুলোতে সরকার নির্ধারিত সংখ্যামত জামাত চালু থাকা সত্তে¡ও শতকরা ৯৫% আক্রান্তই সেসব শহরের বাসিন্দা। এতে বুঝা যায়, মসজিদ বন্ধ করায়-ই গজব আরো বেড়ে চলেছে।
কাঁচাবাজার, মোদি দোকান ও ব্যাংক সমূহে জনসমাগমের ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব তো দূরের কথা সামাজিক দূরত্বের নিয়মও পূর্ণরূপে মানা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মসজিদের মত কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এমনকি গ্রামাঞ্চলের কোন কোন বাজারে হাজারো মানুষের ভিড় সারাদিন চলতে দেখা যাচ্ছে। সেটাকে মানবিক প্রয়োজন মেনে নেয়া গেলেও ধর্মীয় কারণে ৫/১০ মিনিটের জমায়েত সহ্য না করার ব্যাপারটি ধর্মবিরোধীদের ষড়যন্ত্র বলে অনেকে মনে করছে।
বাজার ও মার্কেটে ভোর থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ঘন্টার পর ঘন্টা কোয়ারেন্টইন আইন ভঙ্গ করে কেনাকাটা চলতে দেয়া হলেও নিয়ম মেনে মসজিদে জড়ো হতে না দিলে ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেট নগরীসহ প্রিয় বাংলাদেশ আল্লাহর মারাত্মক রোষানলে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
পতিতাবৃত্তির চেয়ে ঘৃণ্য ও রোগ সংক্রমণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ আর কিছু নেই। কিন্তু আমাদের জানামতে ব্যাপকভাবে এখনো পতিতাবৃত্তি পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়নি। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে পতিতাবৃত্তির চেয়ে মসজিদে জামাতের ক্ষেত্রে বেশি কড়াকড়ি করাটা জাতীয় লজ্জার ব্যাপার।
তাই আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীরা ৮ শ্রেণির লোক ছাড়া বাকীদের মসজিদে গিয়ে জুম্মা, জামাত ও তারাবীহ পড়তে বাঁধা না দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, সংখ্যার দিক থেকে মসজিদকে উন্মুক্ত করে দেয়া ছাড়া সরকার ঘোষিত অন্যান্য দিকনির্দেশনা মেনে চলার ব্যাপারে আমরা সবাই একমত।
বিবৃতিদাতারা হলেন, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালিম বাংলাদেশের সভাপতি ও জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর এর মহাপরিচালক আল্লামা শায়খ যিয়া উদ্দিন, জামেয়া কাসিমুল উলূম দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ.)’র মুহতামিম আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি, আযাদ দ্বীনী এদারা পূর্ব সিলেটের সভাপতি আল্লামা আলিমুদ্দিন দূর্লভপুরী, মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, সুনামগঞ্জ গাজীনগর মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস আল্লামা নুরুল ইসলাম খান, পীরে কামেল, ওলি ইবনে ওলি আল্লামা রশিদুর রহমান ফারুক শায়খে বরুণী, জকিগঞ্জ মুন্সিবাজার মাদরাসার শায়খুল হাদিস ও মুহতামিম আল্লামা মুকদ্দস আলী, গলমুকাপন মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস আল্লামা শায়খ আব্দুস শহীদ গলমুকাপনী, বিশিষ্ট শায়খুল হাদিস মাওলানা শায়খ ফজলুর রহমান বানিয়াচঙ্গী, জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গার মুহতামিম শায়খ মুহিউল ইসলাম বুরহান, সহ সভাপতি আল্লামা শায়খ শফিকুল আহাদ, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালিম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা শায়খ আব্দুল বছির, দিরাই, জামেয়া মাদানিয়া আঙ্গুরার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও মাদানিয়া কুরআন শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি মাওলানা ফয়জুল হাসান খাদিমানী, সিলেট বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ও ধনকান্দি মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুশতাক আহমদ খাঁন, শায়খুল হাদিস মাওলানা আব্দুল মালিক রূপসপুরী, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি