দুই শর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অবশেষে মুক্তি পাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সরকার তাঁকে বিশেষ মানবিক বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে দণ্ডাদেশ স্থগিত রেখে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলেই আইনমন্ত্রী তাঁর মুক্তির বিষয়ে মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছেন। এর ফলে ২ বছর ৪৫ দিন পর আজ বুধবার যে কোন সময় তিনি মুক্তি পেতে পারেন।
এদিকে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ব্যাপারে স্বস্তি প্রকাশ করলেও শর্তসাপেক্ষে মুক্তির বিষয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। খালেদা জিয়ার মুক্তির আদেশে কি আছে তা দেখে পরবর্তীতে এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন বলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় জানান। আর খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁর বোন সেলিমা ইসলাম।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোঃ শহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, আমরা কিছুক্ষণ আগে আইন মন্ত্রণালয়ের ফাইলটি পেয়েছি। এখন সামারি করে তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে মুক্তির আদেশ কারাগারে পৌঁছে যাবে। তখন তিনি মুক্তি পাবেন। জেল কোড অনুযায়ী যে ব্যবস্থা নেয়ার সেটা তো নিতে হবে। কখন তিনি মুক্তি পাবেন জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব বলেন, আমাদের কাজ আমরা করেছি, গতকাল (মঙ্গলবার) না হলে আজ (বুধবার) নাগাদ আশা করি তিনি মুক্তি পেয়ে যাবেন।
মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে এবং বয়স ও মানবিক বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে ৪০১ ধারায় শর্তসাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়া ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে এ সময় তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার জন্য আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মতামত দিয়েছি। সেই মতামত এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে গেছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই সরকার মানবিক কারণে সদয় হয়ে তাঁকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা (উপধারা-১) অনুযায়ী এটা আইনী প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে আইনী প্রক্রিয়ায় দুই শর্তে তার দ-াদেশ স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। দুই শর্তের মধ্যে রয়েছে ঢাকার নিজ বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেবেন এবং উক্ত সময়ে তিনি দেশের বাইরের গমন করতে পারবেন না।
কবে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই তিনি মুক্তি পাবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেদিন থেকে তার মুক্তির আবেদন গ্রহণ করবে, সেদিনই তিনি মুক্তি পাবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো মানে তাকে সুইসাইডের মুখে ফেলা। অতএব তিনি বাসাতেই থাকবেন। বাসায় থেকেই চিকিৎসা নেবেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আগে ৬ মাস যাক, তারপর দেখা যাবে। আরও এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এখানে কিন্তু বলা হচ্ছে না, তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। সেটা তার অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। তবে শর্ত হচ্ছে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবে না।
খালেদা জিয়ার মুক্তির সিদ্ধান্ত জানার পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকালে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার বোনসেলিমা ইসলাম। মঙ্গলবার বিকেলে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরও বলেন, এখনও সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে কারাগার থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সারাদেশের মানুষ এখন করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তিকে দেশের মানুষের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির বলে মনে করছি। জানতে পেরেছি আইনমন্ত্রী একটা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে ৪০১ ধারায় বয়সের কথা বিবেচনা করেই ৬ মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর সেটা শর্তসাপেক্ষে। শর্ত হচ্ছে তাকে বাসায় থাকতে হবে এবং দেশে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এটুকুই আমরা এখন পর্যন্ত জানি। দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা বৈঠক করবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবে স্কাইপের মাধ্যমে যুক্ত হবেন এবং তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমরা পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
ফখরুল বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আতঙ্ক সৃৃষ্ট হয়েছে। সারাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। সেজন্য আমাদের দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা সবাই শান্ত থাকবেন। এছাড়া যাতে কেউ করোনায় আক্রান্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সারাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়েছিল। মুক্তি পাওয়ায় তারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। খালেদা জিয়া এখন সুচিকিৎসার সুযোগ পাবেন। কিন্তু তিনি যেহেতু বাহিরে চিকিৎসা করতে পারবেন না, তাই এ বিষয়টা নিয়ে আমরা অনেকটা চিন্তিত।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক ভাবছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আজকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটাকে আমাদের ভাল করে দেখতে হবে। ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে তারপর বলতে পারব। খালেদা জিয়ার মুক্তিতে করোনা মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের কোন কাজে আসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার কোন কারণ দেখছি না। তিনি বলেন, শর্তসাপেক্ষে মুক্তির বিষয়টা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে সেটা আমরা আলোচনা সাপেক্ষে জানতে পারব।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলেই বিএসএমএমইউতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। সবার আগে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ আরও ক’জন নেতা। পরে অন্য সিনিয়র নেতারাও সেখানে যান। এ সময় দলের কিছু কর্মী-সমর্থকও সেখানে গিয়ে জড়ো হন।