করোনা ভাইরাসের ধাক্কা

19

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। এমনকি দেশের বাইরেও বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার পরও আশঙ্কামুক্ত থাকা যাচ্ছে না। শুধু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাস কী প্রভাব ফেলতে পারে, এটাও এখন আলোচনার বিষয়। কারণ চীন থেকে বছরে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২.৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০২১ সাল নাগাদ এটি ১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে এমনটি আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে চীনা অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় অবকাঠামো উন্নয়নের বড় প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিতে বাধা তৈরির আশঙ্কা হয়েছে। কাক্সিক্ষত সময়ে কাজ না এগোলে বাড়তে পারে প্রকল্প ব্যয়ও। এর পাশাপাশি পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুেকন্দ্র, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা বাইপাস সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের নাগরিকরা বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত আছেন।
আবার আশঙ্কার পাশাপাশি আশাজাগানোর মতো কিছু বিষয়ও আছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পে নতুন করে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই রোগ চীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে আমাদের রপ্তানিতে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এ অবস্থায় কোনো দেশই আরো অন্তত কিছু দিন চীন থেকে তৈরি পোশাকপণ্য কিনবে না। সে ক্ষেত্রে চীনের অনেক অর্ডার বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। আমাদের রপ্তানিতে যে ধাক্কা লেগেছে, তা কেটে যেতে পারে। করোনাভাইরাসের কারণে মেইনল্যান্ড চায়নায় বড় বড় কোম্পানির বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ হয়ে আছে। ফলে তাদের বিক্রিতে ভাটা পড়তে পারে, চীনের অভ্যন্তরে উৎপাদনও কমে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে চীনের কিছু তাৎক্ষণিক কার্যাদেশ (অর্ডার) ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো কিছু অর্ডার বাংলাদেশেও চলে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা লাভবান হব। আমাদের রপ্তানিতে এখন যে মন্দা চলছে, সে ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে হলেও তা কেটে যাবে এমন সম্ভাবনা দেখছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, পরিস্থিতি জটিল হলে কিছু ক্রেতা চীনের বিকল্প খুঁজবে। বাংলাদেশ নতুন ওয়ার্ক অর্ডারের ক্ষেত্রে আংশিক সুবিধা পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে। তবে তার জন্য আমাদের প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির প্রায় সব সূচক নিম্নমুখী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৈরী হাওয়ার মধ্যে আরএমজির অর্ডার যদি বাংলাদেশে আসে, তাহলে করোনাভাইরাস আমাদের জন্য আশীর্বাদই বয়ে আনবে বলা যায়। করনোভাইরাসের কারণে ধাক্কা সামলে উঠার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে পারলে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।