মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া জরুরী

38

নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাঁদের দাবি, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটার পরিমাণ ৫৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। কোটার যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অভিন্ন বয়সসীমা ও নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার না করা, অর্থাৎ কোটা সংস্কারের দাবি তাঁদের। এ দাবির পক্ষে তাঁদের যুক্তিও আছে। বলা হচ্ছে, কমসংখ্যক চাকরিপ্রত্যাশীর জন্য বেশি কোটা সংরক্ষণে একদিকে বেকার কমছে না, অন্যদিকে কোটায় নিয়োগ দেওয়ার মতো প্রার্থী না পাওয়ায় আসন খালি থেকে যাচ্ছে। সরকারি চাকরিতে যে কোটা সংরক্ষণ করা হয়, তার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনির জন্য কোটা ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, সব জেলার জন্য ১০ শতাংশ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত। ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটাও সংরক্ষণ করা হয়। দেখা যাচ্ছে, কোটা সংরক্ষণের কারণে ২৮তম বিসিএসে ৮১৩টি, ২৯তম বিসিএসে ৭৯২টি, ৩০তম বিসিএসে ৭৮৪টি, ৩১তম বিসিএসে ৭৭৩টি ও ৩৫তম বিসিএসে ৩৩৮টি পদ খালি থেকেছে। অন্যদিকে ৩৬তম বিসিএসে কোটা পূরণ না হওয়ায় ৩৭তম বিসিএস থেকে তা পূরণ করা হয়েছে।
অন্তর্র্বতীকালীন নিয়োগনীতি শিরোনামে কোটাভিত্তিক নির্বাহী আদেশ দেওয়া হয়েছিল ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন বছরে কোটাপদ্ধতি যৌক্তিক করার বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। বাস্তবে দেখা যায়, কোটা পূরণ না হওয়ায় অনেক পদে নিয়োগ হয় না। অথচ কোটার বাইরে থাকায় যোগ্য ও মেধাবী অনেকেই নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়। এসব পদ খালি থাকায় সরকার ও রাষ্ট্র যেমন মেধাবী ও দক্ষদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাচ্ছে না। এতে তরুণদের মধ্যে হতাশা দেখা দিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও কোটাপদ্ধতি আছে। কিন্তু বাংলাদেশের কোটা সংরক্ষণ করতে গিয়ে কোথাও মেধা বিসর্জনের ঘটনা ঘটে না। যোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগ লাভে বঞ্চিত হলে প্রশাসনে অদক্ষতা বিরাজ করবে।
কাজেই কোটাপদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। একটি সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া যেতে পারে। কোনো কারণে সংরক্ষিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধার ভিত্তিতে সেই পদ পূরণ করা যেতে পারে। এতে মেধাবীরা যেমন নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হবে না, তেমনি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদও খালি থাকবে না।