ব্যাংকিং খাতে শৃংখলা আসুক

8

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিন থেকেই এক ধরনের বিশৃঙ্খলা চলে আসছে। বেড়েছে খেলাপি ঋণ। আগে মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতেই খেলাপি ঋণের এই সংস্কৃতি প্রবল ছিল, এখন সে পথে পা বাড়াচ্ছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোও। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দেশের ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশের ১০ কোটি আমানতকারীর ব্যাংকে জমানো প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকাই ঋণ আকারে নিয়ে নিজেদের পকেটে পুরে রেখেছেন মাত্র কয়েক শ ব্যাংক পরিচালক। তাঁরা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবেন বলে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ওই ব্যাংকে রাখা গ্রাহকের আমানতের বিরাট অংশ নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন। এসব ঋণের বড় অংশ খেলাপি হলেও বছরের পর বছর তা নিয়মিত হিসেবে প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই নৈরাজ্যের প্রভাব পড়ছে বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। সৎ উদ্যোক্তা ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সংকটের মধ্যে চলছে ব্যাংকিং খাত। শুধু ব্যাংক নয়, ঋণের মচ্ছব ও অনিয়মের এই মহাযজ্ঞ চলছে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও।
বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের বেশির ভাগই দেশের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। আগেও পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকেই বেশি মাত্রায় ঋণ নিতেন এবং পরিশোধ করতেন না। যখন খেলাপি হয়ে যেত, তখন বেনামি ঋণ সৃষ্টি করে ওই ঋণ পরিশোধ দেখাতেন। আবার অনৈতিকভাবে নিজেদের ঋণের সুদ মওকুফ করে নিতেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিচালকরা যেভাবে ভাগাভাগি করে ঋণ নিচ্ছেন, তা ব্যাংকিং খাতের জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত এবং সুশাসনের পরিপন্থী। পরিচালকরা যদি ব্যাংকিং খাত থেকে এভাবে বিশাল অঙ্কের ঋণ নেন, তা অবশ্যই ব্যাংকের জন্য ক্ষতিকর। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত বলে মনে করেন তাঁরা। প্রয়োজনে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার একটা সিলিং বেঁধে দেওয়ার পক্ষেও মত দিয়েছেন তাঁরা।
এমন পরিস্থিতিকে ভয়ংকর খারাপ নজির বলে অভিহিত করেছেন অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা। তাঁরা অবিলম্বে ব্যাংকিং খাতের এমন দুষ্টচক্র ভেঙে দিতে বলেছেন। তাঁরা মনে করেন, পরিচালকদের দখলে বিপুল অঙ্কের ঋণ কেন্দ্রীভূত হওয়া খাতটির জন্য হুমকি ও উদ্বেগের বিষয়। এটা সুশাসনেরও পরিপন্থী। আমরা আশা করব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেবে।