ব্যাংক ঋণ প্রবণতা দূর হউক

10

দেশের ব্যাংক খাতে দুরবস্থা চলছে কয়েক বছর ধরেই। জানা যায়, সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আড়াই লাখ কোটি টাকায় উঠেছে। অন্যদিকে ছয় মাসেই ৪৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এটা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। সাধারণত অর্থবছরের শেষ দিকে সরকারের টাকার টান পড়ে বেশি। কিন্তু এবার শুরু থেকেই অর্থসংকটে রয়েছে সরকার। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে মুদ্রানীতিতেও পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়েই এই বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে হলো সরকারকে? বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রাজস্ব আদায় কম হওয়ার পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা পড়ায় সরকারকে বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়ন পাওয়ার আশা করা হয়েছে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা। কিন্তু এখান থেকেও আশানুরূপ ঋণ পাচ্ছে না সরকার।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর তেমন যদি হয়, তাহলে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দেখা দিতে পারে বিশৃঙ্খলা। দেশের অর্থনীতি বড় সংকটে পড়তে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা। নানা তৎপরতা চালিয়েও খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ বাড়ছে না। এখন সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকেই বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে নিলে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে না। তাতে বিনিয়োগে যে খরা চলছে, সেটা আরো খারাপ হবে। অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির আরো অবনতি হয়েছে। রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধির মাত্রা অনেক কমে গেছে। সঞ্চয়পত্রের বিক্রিও কমে গেছে। ফলে বাধ্য হয়েই সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। এমনিতেই ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে আছে। সরকার বেশি মাত্রায় ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আরো কমে যাবে। এর ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি ব্যাহত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনীতিতে সংকট বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ও উদ্বেগ বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার এই প্রবণতা কমানোর উদ্যোগ নেবে সরকার এটাই আমাদের প্রত্যাশা।