বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য হোতাদের চিহ্নিত করতে কমিশন হচ্ছে ॥ পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী- পররাষ্ট্রমন্ত্রী

69

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অবিলম্বে জাতীয় কমিশন গঠন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য খলনায়কদের মুখোশ উন্মোচন করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন দু’জনই বৈঠকে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এ কমিশন শুধু ১৫ আগস্ট ও ৩ নবেম্বর হত্যাকা-ের নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ডদের খুঁজে বের করবে। আর বিদেশে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত খুনীদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং খুনীদের সম্পত্তিও দ্রুত বাজেয়াফত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দন্ডিত পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় ক্ষমতাসীন জোটের পক্ষ থেকে এ দাবি জানান আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।
১৪ দলের উদ্যোগে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফিরিয়ে দিতে আগামী অক্টোবর মাসে ধারাবাহিকভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবে ১৪ দল। একই সঙ্গে বিভিন্ন দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রবাসী বাংলাদেশীদেরও সংগঠিত করা হবে। তিনি ১৪ দলের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর, যে সব দেশে খুনীরা পালিয়ে আছে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের সংগঠিত করে ওই সব দেশকে চাপ দেয়ার ব্যবস্থা করারও দাবি জানান।
তিনি দাবি করেন, খন্দকার মোশতাক আহমেদসহ জাতির পিতার হত্যাকারীদের সব সম্পত্তি বাজেয়াফত করতে হবে। যাতে তারা এই সম্পদ ব্যবহার করে দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে না পারে। তিনি বলেন, যারা গণতন্ত্র ও মানবতার কথা বলেন, তারা কিভাবে খুনীদের আশ্রয় দেন? যেদেশে আব্রাহাম লিংকন, মার্টিন লুথার কিংদের জন্ম সেদেশে খুনীরা আশ্রয় পায় কিভাবে? কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। সেই পিয়েরে ট্রুডো’র সন্তান জাস্টিন ট্রুডো বর্তমানে কানাডার প্রধানমন্ত্রী। তারপরও কানাডা কেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আশ্রয় দিয়েছে?
এসব দাবির জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। কানাডার আইনে মৃত্যুদ-ের বিধান নেই। যদি কোন দেশের কোন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেয় তাহলে তারা তাকে রেখে দেয়। তবে কানাডা নুর চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়নি। আমরা তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কানাডার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছি। আইনী এবং কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। একটু সময় হয়ত লাগবে, তবে কানাডা সরকার তাকে ফেরত দেবে।
তিনি বলেন, রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তাকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আগের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বেড়েছে। আর যাদের খবর পাওয়া যাচ্ছে না, আমরা কিন্তু তাদের খুঁজে বের করার ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক কথা এখন বলা যাবে না। তবে আমাদের কাজ যেভাবে চলছে আমরা তাদের খুঁজে বের করে ফিরিয়ে আনতে সফল হব।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনের নেপথ্যে কারা জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করতে একটি কমিশন করার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কমিশনে কারা থাকবেন, কার্যপরিধি কি হবে সেটা আলোচনা করা হবে। এই কমিশনের কাজ হবে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট এবং ৩ নবেম্বরের ঘটনার নেপথ্যে কারা জড়িত ছিল তাদের খুঁজে বের করা। খুনীদের ফিরিয়ে আনা বা অন্য বিষয়ের সঙ্গে এই কমিশনকে যুক্ত করতে চাই না। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনী নুর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আছে। আমি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সাহায্য চেয়েছি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে। তারা আমাকে বলেছে ওই খুনী রাশেদ চৌধুরী নাকি ডেভিড নামে আছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুনী রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে চিঠি দিয়েছেন। আর নুর চৌধুরী কানাডায় আছে। আমি কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি কোর্ট তো তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়নি, তাকে ফিরিয়ে দিন। তিনি বলেছেন আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যান। নুর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, বাকি দুই খুনী পাকিস্তান বা লিবিয়ায় আছে বলে অনেকে বলছেন। তবে এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। এটা আমাদের অক্ষমতা। এর কারণ ব্যাখ্যা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর তৎকালীন সরকার ও এরপর একাধিক সরকার খুনীদের মদদ দিয়েছে। প্রবাসী বাঙালীদের সপ্তাহে অন্তত একদিন খুনীদের ফেরত আনার দাবি জানানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে। তিনি বলেন, এতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়বে। তিনি বলেন, আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আয়োজনের আগেই তাদের দ- কার্যকরের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল, সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব অলিউর রহমান, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, গণআজাদী লীগের সভাপতি এসকে শিকদার, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্যপরিষদের নেতা অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।