বাংলা-ভারতের নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হোক

24

ভারতের লোকসভা (পার্লামেন্ট) নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। ৫৪২ আসনের লোকসভায় বিজেপি পেয়েছে ৩০২ আসন, গত নির্বাচনের চেয়ে ২০ আসন বেশি। আর ক্ষমতাসীন জোটের অন্যান্য দল মিলে তারা মোট আসন পেয়েছে ৩৫০টি, আসন বেড়েছে ১৫টি। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রধান রাহুল গান্ধী পরাজয় মেনে নিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। টেলিফোনালাপে এবং বার্তা পাঠিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। ভারতীয় জনগণের এই রায়কে আমরাও সম্মান জানাচ্ছি।
অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে রীতিমতো ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। ২০১৯ সালে সেই ইতিহাসকে তিনি আরো বেগবান করলেন ভূমিধস বিজয়ের মধ্য দিয়ে। তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার ও অতীতের দেশ পরিচালনার প্রতি ভারতীয় জনগণের যে বিপুল আস্থা রয়েছে, সেটিই ফুটে উঠেছে এই নির্বাচনে। ৯০ কোটি ভোটারের দেশটিতে দীর্ঘ ৩৮ দিন ধরে সাত দফায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছোটখাটো গোলযোগ ও অনিয়মের কিছু অভিযোগ থাকলেও সার্বিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ছিল। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবার অপ্রত্যাশিত ফলাফল করেছে। আগের নির্বাচনে ৪২ আসনের পশ্চিমবঙ্গে যেখানে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র দুটি আসন, এবার তারা পেয়েছে ১৮টি আসন। অন্যদিকে রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল পেয়েছে ২২টি আসন, অর্থাৎ তারা হারিয়েছে ১২টি আসন। এ ছাড়া কংগ্রেস ও বাম জোট দুটি করে আসন হারিয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা একে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য অশনিসংকেত হিসেবেই দেখছেন। তাঁরা মনে করছেন, সামনের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদলও ঘটে যেতে পারে।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্বিতীয় দফায় মোদির এই বিপুল বিজয় বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক হবে। ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তনের আশঙ্কা নেই। তাঁরা মনে করছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান তা আরো গতি পাবে। দেশ পরিচালনায় এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবার মোদি অনেক বেশি আস্থা নিয়ে কাজ করতে পারবেন। ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান হতে পারে বলেও আশা করছেন তাঁরা। এর মধ্যে অন্যতম হলো তিস্তা চুক্তি। মোদির প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে এই চুক্তি সম্পাদন করা সম্ভব হয়নি।
ভারত বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। বেশ কিছু আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে দেশ দুটি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তার মধ্যে বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া ও নেপাল) অন্যতম। আমরা আশা করি, ভারতের নতুন সরকারের নেতৃত্বে আঞ্চলিক উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।