তাহিরপুরে অনির্দিষ্ট কালের নৌযান বন্ধের ঘোষণা, স্মারকলিপি প্রদান

8

 

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ার কারণে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে ৩ শুল্কস্টেশনের ব্যবসায়ীরা। একারণে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌপরিবহণ বন্ধের ঘোষণা দিয়ে গত শনিবার থেকেই উপজেলার বড়ছড়া, বাগলী ও চারাগাঁও শুল্কস্টেশনের বৈধ কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহণ বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়াও গত রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে স্মারকলিপি।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা গেছে- তাহিরপুর সীমান্তের বড়ছড়া, বাগলী ও চারাগাঁও শুল্কস্টেশন দিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত বৈধ কয়লা ও চুনাপাথর বাল্কহেড ও স্টিলের ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে পাটলাই নদী পথে পরিবহণ করা হয়। গত ৫ মাস যাবত উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের পাটলাই নদীর ডাম্পের বাজার ও শ্রীপুর বাজারের দুই স্থানে প্রতি নৌকা থেকে খাস আদায়ের নামে ১০-১৫ হাজার ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিøউটিএ) নামে প্রতি নৌকা থেকে ২০ থেকে ৫০হাজার পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করে কিছু লোক। তাদের কথা মতো টাকা না দিলে নৌকা আটক করে রাখাসহ শ্রমিকদের করা হয় মারধর।
এব্যাপারে বড়ছড়া কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক সমিতির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন- সরকারের রাজস্ব দিয়ে বৈধ ভাবে ভারত থেকে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী করে উপজেলার ৩ শুল্কস্টেশনের প্রায় ৭শত ব্যবসায়ী। তারপর আমদানীকৃত সেই বৈধ কয়লা ও চুনাপাথর পাটলাই নদী দিয়ে পরিবহণ করার সময় দুই দফা চাঁদা দিতে হয়। অন্যদিকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রশাসনের সযোগীতায় অবৈধ ভাবে কয়লা ও চুনাপাথর পাঁচার করছে চোরাকারবারীরা। নদী পথে চাঁদাবাজি ও চোরাচালানের কারণে আমরা বৈধ ব্যবসায়ীরা অতিষ্ট, হচ্ছি অনেক ক্ষতিগ্রস্থ্য। এসব বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনকে বারবার জানানোর পরও কোন সমাধান না হওয়ায়, আমরা সকল ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের স্মারকলিপি দিয়েছি এবং অনির্দিষ্ট কালের জন্য পরিবহণ বন্ধ ঘোষনা করেছি।
উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রাশিদ মিয়া, শাজাহান খন্দাকার, ধন মিয়া, ব্যবসায়ী আবুল বাশার খান ও বাবুল মিয়া বলেন- তাহিরপুর সীমান্তের যেদিকে যাবেন শুধু হাবিব সারোয়ার তোতলা আজাদের নাম শুনবেন। সে একাধিক মামলার আসামীদেরকে সোর্স নিয়োগ করে প্রতিদিন কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁরের পর প্রতিনৌকা থেকে ২৫ থেকে ৪০হাজার টাকা চাঁদা নেয় পুলিশ, সাংবাদিক ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে। তার কথা মতো কাজ না করলে মামলা-হামলার হুমকি দেয়। তার মাধ্যমে সোর্সরা অবৈধ পথে করে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করে কম দামে বিক্রি করার কারণে আমরা বৈধ মালামাল রাজস্ব দিয়ে এনেও বিক্রি করতে পারিনা। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজাদ ও তার সোর্সদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না।
তাহিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি ও চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সদস্য রমেন্দ্র নারায়ন বৈশাখ বলেন- সীমান্ত চোরাচালানের জন্য বিজিবি দায়ী। কারণ তারা যদি সুযোগ না দিতো তাহলে কেউ কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করতে পারতো না, চাঁদাবাজিও করতে পারতো না। প্রতি মাসে যখন সভা হয়, আমি এসব নিয়ে প্রতিবাদ করি।
এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা সাংবাদিকদের জানান- কয়লা বোঝাই নৌকা থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের একটা অভিযোগ আছে। তারা এব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে প্রশাসনের তহশিলদারের মাধ্যমে খাস আদায় করা হয়। এছাড়া বিআইডবিøউটিএর বিষয়টিও তদারকির জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।