বিদেশ গমনার্থে সতর্কতা

80

অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা কিছুটা কমলেও এখনো সে সংখ্যা যে খুব একটা কম নয়, সেটি প্রকাশ পেল সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাধারণ ক্ষমার আওতায় বৈধতা পাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা থেকে। সেখানে তিন মাসের সাধারণ ক্ষমা দুই দফা সময় বাড়িয়ে পাঁচ মাস করা হয়, যা শেষ হচ্ছে আজ। এই সময়ে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি বৈধতা পেয়েছে। কয়েক হাজার বাংলাদেশিকে জেল-জরিমানা ছাড়াই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাত নয়, অনেক দেশেই বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে পাড়ি জমায়। এর বেশির ভাগই হয়ে থাকে মানবসম্পদ রপ্তানিকারী কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান ও মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে। এরা বিদেশে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়। মালয়েশিয়ায় পুলিশি তল্লাশি শুরু হলেই অনেক অবৈধ বাংলাদেশিকে পাওয়া যায়। তাদের অনেক হৃদয়বিদারক কাহিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অনেকের ঠাঁই হয় গভীর জঙ্গলে। অনাহারে দিন কাটাতে হয়। অসুস্থ হলে কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। অনেকে মারাও যায়। কিন্তু তার পরও থামছে না অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমানোর দুঃখজনক ঘটনা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর সেখানকার দূতাবাসে বৈধতা পাওয়ার আসায় হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রতিদিন ভিড় জমাতে থাকে। তাদের অনেকের মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও ছিল না। ছিল না ওয়ার্ক পারমিট বা কাজ করার বৈধ ভিসা। অনেকে ভ্রমণভিসা নিয়ে সেখানে গিয়ে ভিসার মেয়াদের পরও থেকে গেছে। দূতাবাসের কর্মীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে তাদের বৈধ কাগজপত্র করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট করে দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশ থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন পেতে তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে বলে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়। দূতাবাস দেশটির সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দুই দফায় দুই মাস সময় নিয়েছে। তাদের আন্তরিকতা না থাকলে ৪০ হাজার বাংলাদেশির বৈধতা পাওয়া রীতিমতো অসম্ভব হয়ে যেত। দূতাবাস কর্মীরা এ জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
অতীতে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে বাংলাদেশিদের গণকবর পাওয়া গেছে। অনেকে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছে। মরুভূমিতে অনেকের অনাহারে মৃত্যু হয়েছে। দেশে কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় তরুণদের মধ্যে যেকোনো উপায়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর এই বেপরোয়া প্রবণতা দেখা যায়। আর তার সুযোগ নেয় এক শ্রেণির প্রতারকচক্র। এ থেকে তরুণসমাজকে রক্ষা করতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি বৈধভাবে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রক্রিয়াগুলো সহজ করতে হবে।