সিলেট-৫ আসনে লড়াই হবে ত্রি-মুখী

134

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। প্রচারণার শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী আলহাজ্ব হাফিজ আহমদ মজুমদার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সাংসদ সেলিম উদ্দিন কানাইঘাট-জকিগঞ্জে কয়েকটি জনসভায় বক্তব্য রাখেন। ধানের শীষের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুকের সমর্থনে কোন ধরনের সমাবেশের খবর পাওয়া যায়নি। গ্রেফতার এড়াতে ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা নীরবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত এ আসনে নির্বাচনে মোট ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক দুবারের সাংসদ আলহাজ¦ হাফিজ আহমদ মজুমদার, ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী মাওঃ ওবায়দুল্লাহ ফারুক ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান সাংসদ আলহাজ¦ সেলিম উদ্দিনের মধ্যে ত্রিমুখি লড়াই হবে বলে নানা শ্রেণী পেশার ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
প্রচারণার দিক থেকে আ’লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদার ও লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী সেলিম উদ্দিন এগিয়ে থাকলেও ঐক্য ফ্রন্টের মনোনিত ধানের শীষের প্রার্থী ওবায়দুল্লাহ ফারুক প্রচারণার দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন। ধানের শীষের সমর্থকদের ব্যাপক ধরপাকড় ও ঐক্য ফ্রন্টের নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়ি হাঠ-বাজারে পুলিশের অব্যাহত অভিযানের কারণে ধানের শীষের প্রচারণা থমকে গেছে। ধানের শীষের অনেক নির্বাচনী অফিস পর্যন্তও বন্ধ রয়েছে। এতে ভোটের লড়াই সুবিধা জনক আছেন আ’লীগের প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদার। অপর দিকে নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক প্রচারনা করে যাচ্ছেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম উদ্দিন এমপি। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিয়ানী বাজার উপজেলার বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন আ’লীগ ও জাতীয় পার্টির নির্বাচনী সমোজতার মাধ্যমে তিনি সিলেট-৫ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচনের পর থেকে কানাইঘাট-জকিগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন ও সবসময় নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে থাকার কারণে বিয়ানী বাজারের বাসিন্দা হলেও সেলিম উদ্দিন ভোটারদের মন জয় লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। সিলেট-৫ আসনে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম আগের মত শক্তিশালী না হলেও লাঙ্গল প্রতীককে বিজয়ী কারার জন্য দলীয় নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে আসনটি ধরে রাখার জন্য প্রতিদিন জেলা জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী মাঠে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাপক উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড করার কারণে সেলিম উদ্দিন এমপি নির্বাচনী মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে এসেছেন। আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক দুবারের এ আসনের সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদার একজন স্বজ্জন ব্যক্তি হিসাবে ভোটারদের কাছে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। নির্বাচনের শুরুতে নানা কারণে তিনি ভোটের লড়াইয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তার ভোট বাড়ছে। আ’লীগের নেতাকর্মীরা তাকে বিজয়ী করার জন্য শতশত নেতাকর্মীরা সরকারের উন্নয়ন মূলক কমর্কান্ড তুলে ধরে কানাইঘাট-জকিগঞ্জকে সব দিক থেকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আ’লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন মজুমদারকে বিজয়ী করার জন্য ভোটারদের সমর্থন আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ধর্ম ভিত্তিক দল আল-ইসলাহ তাকে সমর্থন দিয়েছে। সিলেট-৫ আসনে অতীতের সকল সংসদ নির্বাচনে আলেম উলামা অধ্যুষিত এ আসনে ধর্মপ্রাণ ভোটাররা জয়পরাজয় নিয়ামক ভূমিকা পালন করে থাকেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রয়ী সহ-সভাপতি মাওঃ ওবায়দুল্লাহ ফারুক একবার ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমিয়তের দলীয় প্রতিক খেজুর গাছ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে উল্লেখযোগ্য ভোট পান তিনি। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সাংসাদ মাওঃ ফরিদ চৌধুরীকে এবার মনোনয়ন না দিয়ে ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে মাওঃ ওবায়দুল্লাহ ফারুককে ধানের শীষের প্রার্থী করা হয়। কওমি পন্থী আলেম ওবায়দুল্লাহ ফারুক ভোটের মাঠে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। কানাইঘাট-জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মী শুরু থেকে ফারুকের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। জামায়াত ফারুককে প্রথমে মেনে না নিলেও নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে জামায়াত ধানের শীষের এ প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমর্থন দিয়ে মাঠে নামায় ভোটের লড়াইয়ে ওবায়দুল্লাহ ফারুক বেশ সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছেন। তার পর ফারুকের নিজ সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাংগঠনিক শক্তি নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় রয়েছে। জোটের শরীক দল খেলাফত মজলিস নির্বাচনী মাঠে ফারুকের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। জানা গেছে এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,২৪,৩১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১,৬৩,১৯১ জন আর মহিলা ভোটার ১,৬১,১২১ জন। এবারের নির্বাচনে এ আসন থেকে অন্যান্য দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত এম.এ মতিন চৌধুরী মিনার, ইসলামী আন্দোলন মনোনীত নুরুল আমিন হাতপাখা, গণফোরাম মনোনীত বাহার উদ্দিন আল রাজী উদীয়মান সূর্য, মুসলিম লীগ-বি.এম.এল মনোনীত শহীদ আহমদ চৌধুরী হারিকেন ও একমাত্র সতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আওয়ামীলীগ নেতা ফয়জুল মুনির চৌধুরী সিংহ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এ আসনের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য জাপা নেতা সেলিম উদ্দিন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহজোট থেকে হাফিজ আহমেদ মজুমদার নৌকা প্রতীক নিয়ে ১,০৯,৬৯০ ভোটে বিজয়ী হন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী মাওঃ ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী দাঁড়িপাল্লা নিয়ে ৭৮,০৬১ ভোট পেয়েছিলেন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী মাওঃ ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে ৭৭,৭৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ মনোণীত প্রার্থী হাফিজ আহমেদ মজুমদার পেয়েছিলেন ৫২,৮৮৫ ভোট। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত হাফিজ আহমেদ মজুমদার নৌকা প্রতীক নিয়ে ২৯,৪৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জামাতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে ২৮,১২০ ভোট পেয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওঃ ওবায়দুল হক মিনার প্রতীক নিয়ে ২৬,২৬৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে ছিলেন। আর এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। জাতীয় পার্টি আসনটি পুনরায় ধরে রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে বিগত ১৫ ফেব্র“য়ারীর ভোটার বিহীন নির্বাচন ছাড়া কখনও ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেনি। যার কারণে এবারের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য ঐক্য ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে শেষ মুহূর্তে এ আসনে নৌকা ও ধানের শীষের প্রতীকের মধ্যে তুমুল লড়াই হবে বলে অধিকাংশ ভোটাররা মনে করেন। লাঙ্গল প্রতীক নির্বাচনী লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকবে না।