উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক

224

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পার্লামেন্টের সদস্য ও ইতালির রাজনীতিক বারবারা মাতেরা ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) কাছে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর ইবিএ চুক্তির বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। গত আগস্টে তিনি ইসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তানীতি বিষয়ক হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ ফেদেরিকা মোগেরিনির কাছে এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করছে। দেশের ভেতরে এ নিয়ে প্রবল আপত্তি আছে, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোও এর সংস্কার চেয়েছে।
মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় কনভেনশনের নিরিখে তিনি বলেন, প্রত্যেকের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। জেনারেল স্কিম অব প্রেফারেন্সের (জিএসপি) আওতায় বাংলাদেশ ইইউর বাজারে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছাড়া অন্য সব পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পায়। কিন্তু বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার হুমকিতে পড়েছে। এ কথা কি ইউরোপীয় কমিশন স্বীকার করে? যদি করে থাকে, তাহলে আইন সংস্কারে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহী করার জন্য কমিশন কী উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়ে ইসি কী ভাবছে।
জানা যায়, সম্প্রতি মাতেরার প্রশ্নের লিখিত জবাব দিয়েছেন মোগেরিনি। তিনি বলেছেন, ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের আওতায় ইইউ বাংলাদেশ সরকারের কাছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, শ্রমাধিকার প্রভৃতি প্রসঙ্গ তুলে ধরেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিস ও বাংলাদেশে ইইউ ডেলিগেশন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনে ও অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে এসব ইস্যু তুলে ধরা ও উদ্বেগ জানানো অব্যাহত রাখবে ইইউ। তিনি জানান, জিএসপি বিষয়ক ইবিএ চুক্তির নিরিখে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পৃক্ততা বেড়েছে। এর অংশ হিসেবে শ্রম ইস্যুতে গুরুত্ব দিয়ে প্রথম কারিগরি মিশন সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেছে। সফরের পরই বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন করেছে। সংশোধিত আইনটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। মিশনের প্রতিবেদন ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ইসি পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে। পর্যবেক্ষণের ফল সন্তোষজনক না হলে মানবাধিকার ও শ্রমাধিকার পরিস্থিতি দেখতে ইবিএ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কমিশন।
শ্রম ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইইউর উদ্বেগ রয়েছেই। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতির অগ্রগতির জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল তারা। অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও কাম্য মাত্রায় হয়নি। ইদানীং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা তথা মানবাধিকার প্রসঙ্গ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ইইউ সুনজরে দেখছে না। দেশেও এ ব্যাপারে প্রবল আপত্তি রয়েছে। এসব ব্যাপারে ইসি-ইইউর মূল্যায়ন আমলে নেওয়া উচিত। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আমলে নিতেই হবে। আশা করি, সরকার যথাযথ বিবেচনাপ্রসূত ব্যবস্থা নেবে।