সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্টের বিশাল সমাবেশে নেতৃবৃন্দ ॥ দেশের মালিক জেগেছে, মালিকানা আদায় করেই ছাড়ব

40
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্টের বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ড. কামাল হোসেন

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা না না হলে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রাথমিকভাবে দুই দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার দ্বিতীয় দফা সংলাপ দফল না হলে পরদিন রাজশাহীমুখে রোডমার্চ এবং পরদিন উত্তরের মহানগরে জনসভার ঘোষণা এসেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা থেকে। পরে বরিশাল ও খুলনাতেও হবে জনসভা।
নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবি না মানলে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণাও এসেছে।
গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর সিলেট ও চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছে এই জোট। তবে রাজধানীতে এই প্রথম তারা সমাবেশ করেছে। আর এই কর্মসূচিকে ঘিরে জোটের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা।
কর্মসূচির দিন নগরীর বিভিন্ন প্রবেশপথে তল্লাশি এবং বাস চলাচল কমে যাওয়ার পরও ব্যাপক জনসমাগম হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
এই জনসভার পরদিনই গণভবনে যাচ্ছেন ফ্রন্ট নেতারা। গত ১ নভেম্বরের সংলাপে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আবার আলোচনা হবে সেখানে। আর এই আলোচনার আগে সমাবেশ থেকে কী ঘোষণা আসে, সেদিকে দৃষ্টি ছিল।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য সমাবেশের মতো এই কর্মসূচিতেও প্রধান অতিথি ছিলেন ড. কামাল হোসেন। তাঁর অভিযোগ, এই সরকারের কথার কোনো মূল্য নেই। বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলা হয়েছিল। শিগগির আর একটা নির্বাচন দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের কথার কোন মূল্য নাই।’
আন্দোলন করেই অধিকার আদায়ের কথাও বলেন ড. কামাল। বলেন, ‘ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সবাইকে পাহারাদার হতে হবে ভোটের অধিকারের জন্য। ভোটের অধিকার পাহারা দেওয়া মানে স্বাধীনতা পাহারা দেওয়া। আপনারা সবাই দাঁড়িয়ে যাবেন মানুষের অধিকার উদ্ধার করে ছাড়ব। দেশের মালিক জেগেছে, মালিকানা আদায় করেই ছাড়ব।’
এই সমাবেশে আসতে বাধা দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে ঐক্যফ্রন্ট নেতা বলেন, বাস বন্ধ করা হয়েছে, লঞ্চ বন্ধ করা হয়েছে। তবু হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে অধিকার আদায়ের ঘোষণা দিয়েছে।
ঐক্যফ্রন্টের আগের দুই জনসভায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না চাইলেও আজ সরাসরি বিষয়টি তোলেন ড. কামাল। বক্তব্য তিনি শুরুই করেন এভাবে, ‘আমি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। যে দেশে বিরোধী দলের নেত্রীকে শ্রদ্ধা জানানো হয় না, সে দেশে গণতন্ত্র থাকে না।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্য শেষ করে সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে দেন। কিন্তু ভুলে যান কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়টি। পরে মনে পড়ায় আবারও সে ঘোষণা আসে।
পরে ফখরুল বুধবারের সংলাপ সফল না হলে পরদিন রাজশাহী অভিমুখে রোডমার্চ, রাজশাহীতে জনসভা এবং নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা দেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পরাজিত করতে চাই। আমাদের সাত দফা দাবি মানতে হবে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’
সংলাপকে ‘প্রসহন’ আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আবার কাল সংলাপের ডাক দিয়েছেন, আমরা শান্তি, সংলাপ সমঝোতায় বিশ্বাসী। আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক। কিন্তু নাটক করলে চলবে না। আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।’
‘আমাদেরকে বলা হয়েছিল গ্রেফতার করা হবে না, মামলা দেয়া হবে না, কিন্তু এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে। আজকেও গ্রেফতার করা হয়েছে এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে।…আমাদের ২৫ রাখ আসামি। ১ সেপ্টেম্বর থেকে চার হাজার ৩৭১টি মামলা।’
‘আমাদের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট যারা আছে তাদেরকেও গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদেরকে তুলে নেয়া হচ্ছে কোথায়, আমরা জানি না। আমরা আর গ্রেফতার হতে চাই না।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কিন্তু বিএনপিতে যোগদান করি নাই। আমি ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছি। আপনারা যদি আগামী দিনে জিততে চান তাহলে নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি ভুলে যান। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পতাকা তলে আসুন।’
জনসভার প্রধান বক্তা আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, গায়েবি মামলা বন্ধ করতে হবে, নাইলে খবর আছে। জনতার আদালতে আপানাদের বিচার হবে।…দাবি মেনে নিন, নইলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমাদের দাবি না মেনে তফসিল ঘোষণা করলে নির্বাচন কমিশনের অভিমুখে পথযাত্রা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।’
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বুধবার যে সংলাপ হবে, সে সংলাপে শুধু মুখে নয়; লিখিত অঙ্গীকার করতে হবে। কাল আবার যাব, নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সে সরকারে শেখ হাসিনা থাকতে পারবে না। আমাদের দাবি না মানা হয় তবে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।’
সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেন, তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সরকারের কাছে প্যারোলে মুক্তি চাইবেন না তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘প্যারোল কেন? বেগম খালেদা জিয়াকে নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি। তাকে মুক্তি না দিলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এমপিরা সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্বাচন করবেন আর আমরা যারা একাধিকবার নির্বাচন করে দেশে সংসদ সদস্য হয়েছি তারা সুবিধা ছাড়া নির্বাচন করব তা হবে না।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কাদের সাহেব (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি চাইলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। তাকে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে অনুকম্পা করবে এমন কোনো মায়ের সন্তান বাংলাদেশে জন্মেনি।
আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘ঢাকায় বসে ডিজিটাল মেশিন টিপাটিপি করে ডিসি, এসপি আর ওসিদের দিয়ে ২০১৪ সালের মত নির্বাচন করবেন তা করতে দেয়া হবে না।’
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ জনসভায় বক্তব্য রাখেন।