জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা

34

নির্বাচন সামনে রেখে জঙ্গিরা আবার আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কা এরই মধ্যে অনেক মহল থেকে করা হয়েছে। কিছু আলামতও পাওয়া গেছে। গত ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গিরা র‌্যাব সদস্যদের ওপর গুলি ও বোমা হামলা চালায়। তাদের আস্তানা থেকে একে-২২ রাইফেলসহ বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই জঙ্গিদের গ্রেপ্তার এবং অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। গণমাধ্যমে উঠে আসছে জঙ্গিদের নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার খবর। এমন সব আশঙ্কার মধ্যে জঙ্গিদের কৌশল সম্পর্কে আরো একটি ভয়ংকর তথ্য পাওয়া গেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সন্ত্রাসবিরোধী একটি সূত্র থেকে। সে তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গিরা প্রথমে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে অপহরণ ও জিম্মি করবে। এরপর তাকে বা তাদের হত্যার হুমকি দিয়ে অপহৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদেরও জঙ্গি হামলায় ব্যবহার করা হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে অপহৃত ব্যক্তিকেও হামলায় ব্যবহার করা হবে। এই তথ্য পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজির সই করা অনুরূপ আরেকটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে সব পুলিশ ইউনিটে।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ নিয়েছিল ২০০৪-০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। তার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর অব্যাহত প্রচেষ্টায় জঙ্গিবাদীদের নেটওয়ার্ক অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু এ জন্য জাতিকে অনেক বড় মূল্য দিতে হয়েছে। অনেক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। জঙ্গি হামলার সেই বিভীষিকাময় দিনগুলো এখনো মানুষ ভুলতে পারেনি। তাই কেউ চায় না এ দেশে তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক। তা সত্ত্বেও এটা বাস্তব যে জঙ্গিরা নিঃশেষ হয়ে যায়নি। নানাভাবে তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। দেশের বাইরে এবং দেশের ভেতর থেকেও অনেকে এদের আর্থিক ও অন্যান্যভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেও এখানে জঙ্গিবাদকে উসকে দেওয়ার নানা অপচেষ্টা রয়েছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক মহল থেকেও জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেসব দেশে জঙ্গিবাদ শক্ত শিকড় গেড়ে বসেছে, সেসব দেশের পরিস্থিতি আমরা দেখছি। পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা সোমালিয়ার মতো পরিস্থিতি আমরা বাংলাদেশে দেখতে চাই না। তাই জঙ্গিবাদের প্রশ্নে কারো মধ্যে কোনো ধরনের আপসকামিতা থাকা উচিত নয়।
জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু তৃপ্তির ঢেকুর তোলার সময় এখনো আসেনি। আমাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক আরো শক্তিশালী করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্তি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। তাদের কাজের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। জঙ্গিদের বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে। কোনো জঙ্গি যেন আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।