উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে দুর্নীতি বন্ধ হোক

44

বর্তমান সময়ে মানুষে মানুষে যোগাযোগ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে অর্থ লেনদেনের পরিধিও। সেই বর্ধিত চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রকম লেনদেন ব্যবস্থা। দেশে অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংসহ প্রযুক্তিনির্ভর নানা লেনদেন ব্যবস্থা ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। আর এই সুযোগে বাড়ছে মুদ্রাপাচারের পরিমাণও। এর প্রধান কারণ, প্রযুক্তিনির্ভর লেনদেন ব্যবস্থা যে হারে বাড়ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না মুদ্রাপাচার রোধে গৃহীত উদ্যোগ। বাড়ছে না নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের গবেষণায়ও উঠে এসেছে এমন তথ্য।
আমাদের মনে রাখতে হবে, মুদ্রাপাচার শুধু একটি অর্থনীতিরই ক্ষতি করে না, একটি দেশের উন্নয়নও ব্যাহত করে। অনেক ক্ষেত্রে দেশটিকে পিছিয়ে দেয়। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে মুদ্রাপাচার ক্রমেই বাড়ছে। সুইজারল্যান্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকে মুদ্রাপাচার বেড়েছে ২০ শতাংশ, পাচার হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। শুধু সুইজারল্যান্ডেই নয়, অন্যান্য দেশেও মুদ্রাপাচারের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পের আওতায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি বাংলাদেশি সেখানে বাড়ি কিনেছে। ১২৬টি দেশের মধ্যে এই প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ রয়েছে তৃতীয় স্থানে। ওয়াশিংটনভিত্তিক অর্থপাচারবিরোধী সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে দেশ থেকে ছয় লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতা রোধ করা না গেলে বাংলাদেশের সব উন্নয়ন প্রচেষ্টাই একসময় মুখ থুবড়ে পড়বে।
বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রধান নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রাপাচার রোধে তাদের বিশেষায়িত শাখাও রয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষতা নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। মুদ্রাপাচার রোধে আরো কিছু সংস্থা কাজ করছে। তাদের ফলাফলও সন্তোষজনক নয়। আমাদের প্রতিবেশী অনেক দেশই মুদ্রাপাচার রোধে যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে। ভারতে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে মুদ্রাপাচার অর্ধেকে নেমে এসেছে। নেপালে চার ভাগের এক ভাগে নেমেছে, এমনকি পাকিস্তানেও মুদ্রাপাচার অনেক কমেছে। তাহলে আমরা পারছি না কেন? আমাদের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে। সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ভারতসহ অনেক দেশের চুক্তি রয়েছে, যার ফলে সুইস ব্যাংকে রাখা সেসব দেশের আমানতকারীদের তথ্য দেশগুলো পেয়ে যায়। বাংলাদেশ এখনো সে ব্যবস্থা করতে পারছে না কেন?
বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের তালিকায় এর আগে শীর্ষে ছিলেন। তথ্য অনুযায়ী, যাঁরা জনগণের অর্থে সরকারের দেওয়া প্রচুর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এ দেশে ব্যবসা করেন। পাচারের তালিকায় তারপরই রয়েছেন দুর্নীতিবাজরা। উন্নয়নকে গতিশীল করতে হলে তাঁদের রুখতেই হবে।