আমি আ’লীগ ছাড়িনি, আ’লীগও আমাকে ছাড়েনি -লতিফ সিদ্দিকী

38

কাজিরবাজার ডেস্ক :
হজ্ব নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে মন্ত্রিসভা এবং আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত লতিফ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, তিন দল ছাড়েননি।
নিজের বহিষ্কার হওয়াকে সন্তানকে মায়ের শাসন হিসেবে উল্লেখ করেন টাঙ্গাইল আওয়ামী লীগের এক সময়ের দাপুটে নেতা। বলেন, কোন সন্তান যখন ভুল করে তখন মা তাকে বকাঝকা করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তাই বলে কি কোন মা তার সন্তানকে মন থেকে বের করে দেয়?’।
‘সুতরাং আমিও আওয়ামী লীগ ছাড়িনি, আওয়ামী লীগও আমাকে ছাড়েনি।
বহিষ্কার হওয়া রাজনৈতিক জীবনে নতুন নয় জানিয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি তো এর আগেও পাঁচবার দল থেকে বহিষ্কার হয়েছি।
শনিবার বিকালে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ইছাপুর শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত ইউনিয়র পরিষদ চেয়ারম্যানের সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথি হয়ে যোগ দেন লতিফ সিদ্দিকী।
২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি সফরে গিয়ে দলীয় এক সভায় হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন লতিফ সিদ্দিকী। ওই বক্তব্য বাংলাদেশে গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে প্রথমে মন্ত্রিসভা এবং পরে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। আর লতিফ সিদ্দিকী সংসদ সদস্য পদ ছাড়ার পর ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাসান ইমাম খাঁন জয়ী হয়ে আসেন।
যুক্তরাষ্ট্রে দেয়া বক্তব্য প্রকাশের পর ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৮টি জেলায় ২২টি মামলা হয়। সেসব মামলার বিচার এখনও শেষ হয়নি।
২০১৪ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে ধানমন্ডি থানায় আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যান লতিফ সিদ্দিকী। ২০১৬ সালের ২৯ জুন জামিনে মুক্ত হন তিনি। এরপর সংসদে দিয়ে বক্তব্য রেখে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
মুক্তি পাওয়ার পর বেশ কয়েক মাস চুপচাপ থাকা লতিফ আবার আলোচনায় আসেন ২০১৭ সালে। হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার তিন বছর পর ওই বছর তিনি হজ করে আসেন।
লতিফ সিদ্দিকীর আবার নিজ এলাকায় যাওয়া নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই নানা কানাঘুষা চলছিল। আর তাকে ঘিরে আয়োজনে ব্যাপক লোক সমাগমও হয়।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি কেন দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছি, কেন কারাগারে গিয়েছি তা আমিই ভাল জানি। দল থেকে বহিষ্কার হলেই দলকে বহিষ্কার করা যায় না। আওয়ামী লীগের জন্মদাতা নেতাদের মধ্যে আমিও একজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে সিদ্দিকী বলেন, আমি যখন টাঙ্গাইলে আসি তখন আমার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ দিয়ে রাখে। তার মানে নেত্রী আমাকে কাজে লাগাবে। আপনারা শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখুন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার অংশ নেয়ার গুঞ্জন নিয়েও কথা বলেন লতিফ সিদ্দিকী। বলেন, এক বাচাল ফোন করে আমার কাছে মতামত চেয়েছে আমি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসব কি না। আচ্ছা এ ব্যাপারে আমি মতামত বা সিদ্ধান্ত দেবার কে?’
‘মতামত দেবে জনগণ। আমি সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা রাখি না। সিদ্ধান্ত দেবে সময়। সিদ্ধান্ত দেবে পরিবেশ। নেতার প্রতি আমার আস্থা আছে।
এর আগে কালিহাতী উপজেলার বাংড়া ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক হাসমত আলীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
এ সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত আনোয়ার উল আলম শহীদ খান। বক্তব্য রাখেন লতিফ সিদ্দিকীর সহধর্মিনী লায়লা সিদ্দিকী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনিছুর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ তোতা, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মোল্লা, এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নূর-এ-আলম সিদ্দিকী।
লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী বিকম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এফবিসিসিআই এর পরিচালক আবু নাসেরও এই অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন।
বহিষ্কৃত নেতার সাথে তাদের অতিথি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।