বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক

40

নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পূর্ণ করল নতুন এক অনুষঙ্গ নিয়ে। এ বছরই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি মিলেছে জাতিসংঘের কাছ থেকে। একসময় যে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলা হতো, সেই বাংলাদেশ আজ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে গেছে। ২০১৫ সালেই বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ডে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে উঠেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আজকের এই অগ্রযাত্রার স্বীকৃতি মিলেছে বিশ্ব থেকে। বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বনেতৃত্বের আস্থা বেড়েছে। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠি তারই প্রমাণ বহন করে। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন এক বিস্ময়। গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ইনক্লুসিভ ইকোনমিক ইনডেক্স’ অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, আজকের বাংলাদেশ একদিন পাকিস্তানের অংশ ছিল। ১৯৭১ সালে এই বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল অনেকটাই শূন্য হাতে। সেই বাংলাদেশ আজ বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার সাহস দেখাতে পারছে। নিজস্ব অর্থায়নে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির আকার ২০ লাখ কোটি টাকা। গত এক দশকে দেশের বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার যে হারে বিনিয়োগ করেছে, তাতে অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত বিরোধের মামলায় বিজয় থেকে শুরু করে অনেক অর্জন গত এক দশকে। রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় থাকলে যে একটি দেশের উন্নয়ন যেকোনো বাধা পেরিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারে, তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। দেশের সড়ক যোগাযোগ থেকে শুরু করে সব ধরনের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এসেছে জোয়ার। অর্থনৈতিক সক্ষমতায় বাংলাদেশ যে আর পিছিয়ে নেই, তা জেনেছে বিশ্ব। ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগে বিদেশিদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের তৈরি পোশাক শিল্প আজ বিশ্বে সমাদৃত। বিশ্ববাজারে ব্র্যান্ড বাংলাদেশ বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। আয়তনে বিশ্বের ৯৪তম দেশ হয়েও সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং ধান ও মাছ উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ শীর্ষ অবস্থান বাংলাদেশের। দেশের বাজেটের আকার বেড়েছে। দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২৪ শতাংশে। বেড়েছে রপ্তানি। মাত্র দুই কোটি ডলার রিজার্ভ ছিল যে দেশের, সেই রিজার্ভ এখন তিন হাজার ৩৩৭ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ৭.২৮ শতাংশ। এখন প্রয়োজন এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এগিয়ে যাওয়া।
বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে সবার আগে যেটা প্রয়োজন তা হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারলে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। দেশের কল্যাণে রাজনৈতিক সরকারের ধারাবাহিকতার ফসল জনগণের ঘরে যাবে।