দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দিতে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ৩০

196

স্টাফ রিপোর্টার :
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকায় দু’পক্ষের ব্যাপক সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ জন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বরইকান্দি ৩ নং রোড এলাকার পশ্চিম মহল্লা-দুখিরপাড়ায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রায় ১০টি দোকানপাট ভাংচুর করা হয় এবং গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটে। তখন স্থানীয় জনতা এর প্রতিবাদে টেকনিক্যাল-কামালবাজার সড়ক প্রায় এক ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেয় তারা।
নিহতরা হচ্ছেন- দক্ষিণ সুরমা থানার বরইকান্দি ৩নং রোডের মৃত শফিক মিয়ার পুত্র গেইট-গ্রীলের ব্যবসায়ী বাবুল আহমদ (২৭) ও নগরীর দরগামহল্লা এলাকার চন্দনটুলার বাসিন্দা ও যুবলীগ নেতা ফারুকের বড় ভাই মাসুক আহমদ (৪৫)। ৩ ভাই এক বোনের মধ্যে নিহত বাবুল আহমদ সবার ছোট।
আহতরা হচ্ছেন- ২নং বরইকান্দি ইউনিয়নের আ’লীগের সভাপতি গৌছ মিয়া (৫০), বরইকান্দি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আহমদ হোসেন (৪০), বরইকান্দি ৩নং রোডের শফিক মিয়ার পুত্র সেবুল আহমদ (২৮), গৌছ মিয়ার পুত্র মোস্তাক আহমদ (১৮), মৃত নছির মিয়ার পুত্র দুলাল আহমদ (২৮), ফরিদ মিয়ার পুত্র সোহাগ আহমদ (১৮), ফজল মিয়া (৪০), ওমর আলীর পুত্র সামাদ মিয়া (১৯), সঞ্জু মিয়ার পুত্র ইমন আহমদ (২৫), রফিক মিয়ার পুত্র সাহেদ আহমদ শান্ত (২৭) ও জামাল আহমদ (২৫)। আহতদের মধ্যে বেশী গুলিবিদ্ধ। তাদেরকে ওসমানী হাসপাতাল ও বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বরইকান্দি বাবুল আহমদ ও মাসুক মিয়াকে ওসমান হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। আহতদের মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়-গত সোমবার রাত সাড়ে ৭ টার দিকে মোটরসাইকেল দিয়ে বরইকান্দির এলাকার এক যুবককে ধাক্কা দেয়ায় এলাকার ৩নং রোডের যুবকদের সাথে ১০নং রোডের কয়েকজন যুবকের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশসহ স্থানীয়রা উভয় পক্ষকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ১০নং রোডের কাজীবাড়ীর বাসিন্দা ও কোম্পানীগঞ্জ তেলিখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলফু মিয়া তার লোকজনকে বুলেট গ্র“ফ জ্যাকেট পরিহিত করে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মারামারি করার জন্য ৩ নং রোডের বাবুল আহমদসহ লোকজনকে ডাকাডাকি শুরু করলে আবারও দু’পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় রহস্যজনকভাবে পুলিশের উপস্থিতিতে আলফু মিয়ার লোকজন গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তখন বাবুল আহমদ ও মাসুক মিয়া নিহত ও অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয় লোকজন এর প্রতিবাদে সিলেট টেকনিক্যাল-কামালবাজার সড়ক প্রায় এক ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। তখন উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে আইন-শৃংখলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর বরইকান্দি ৩নং ও ১০নং রোডে আতংক বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত বাবুল আহমদের বড় ভাই হেলাল আহমদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত সোমবার রাতে বরইকান্দি ৩নং রোডে সুমন অটো রাইসমিলের সামনে বাবুল আহমদের বাইসাইকেল আলফু মিয়ার ছেলের মোটর সাইকেলে ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের বাকবিতন্ডা হয়ে পরবর্তীতে বিষয়টি শেষ হওয়ার চেষ্টা চলে। এ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলফু চেয়ারম্যান ভোলাগঞ্জ থেকে প্রায় ৫০ জন সন্ত্রাসী ভাড়া করে তাদের শরীরে বুলেট জ্যাকেট পড়িয়ে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সঞ্জিত হয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় আমাদের বাড়িতে হামলা চালায় ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে আমার ভাই বাবুল আহমদ এবং মঙ্গলবার রাতে আত্মীয় মাসুক আহমদ ঘটনার বিষয়টি জানতে আসা তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয় এবং ২৫/৩০ জন তাদের গুলিতে আহত হন। তিনি বলেন, ঘটনায় মামলা নয়, হত্যার বদলে হত্যা বলে জানান তিনি।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব (গণমাধ্যম) বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন- বরইকান্দি এলাকার এক যুবক চলন্ত অবস্থায় বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য এক যুবককে ধাক্কা দেয়ার পর উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সোমবার রাতে। পরে পুলিশ ও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলেও গতকাল মঙ্গলবার সকালে উভয় পক্ষ আবার সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় গুলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে দু’জন নিহত হয়। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।