জাফর ইকবালের উপর হামলার তদন্ত শুরু, দেখতে গেলেন প্রধানমন্ত্রী

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অধ্যাপক জাফর ইকবালের হামলার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। হামলাকারী অসুস্থ বলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পাওয়া যায়নি। এরইমধ্যে হামলাকারীর আত্বীয়দের নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের কাছে তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটনের লালবাগ বিভাগ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রসমাবেশ এবং কনসার্ট অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি এসব কথা জানান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বুঝতে পারছি হামলাকারি নিজে ব্যক্তিগতভাবে জঙ্গি মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে এবং এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশের আরও উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি এব্রাহিম খান, কোতয়ালি জোনের সিনিয়র পুলিশ কমিশনার বদরুল হাসান রিয়াদ,জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল প্রমুখ।
আইজিপি বলেন, জাফর ইকবাল আমাদের পুলিশ পরিবারের সন্তান। তার উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। ঘটনার শুরু থেকে পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে। প্রধানমন্ত্রী জাফর ইকবালের সার্বক্ষণিক চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তার উপর হামলাকারীদের মুলোৎপাটন এবং এর গভীরে যারা জড়িত তাদের জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।
মাদক প্রতিরোধ সম্পর্কে আইজিপি বলেন, কয়েকজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে না। জনগণকে সাথে নিয়ে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেই সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হবে। পারিবারিক মূল্যবোধ একটি মানুষের ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। মাদক সমস্যা নিরাময়ে পারিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
পুলিশ সদস্যদের মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি বলেন, যদি কোন পুলিশ সদস্য মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হয় আর এটা যদি প্রমাণ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যে জাতি রক্ত দিয়ে ভাষা ও দেশ অর্জন করতে পেরেছে, সে জাতি অবশ্যই মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে সব করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বর্তমানে আমাদের অন্যতম জাতীয় শত্রু মাদক, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস। এগুলো নির্মূলে আমাদের দ্বিতীয়বারের মত মুক্তিযুদ্ধের মতো আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজের সকলকে এসকল ব্যাধি নির্মূলে এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে উগ্রবাদীর হামলায় আহত বিশিষ্ট লেখক ও অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে দেখতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা ৫০মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী সিএমএইচে যান।
প্রধানমন্ত্রী প্রায় আধা ঘণ্টা চিকিৎসাধীন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের পাশে অবস্থান করেন। প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসারও খোঁজ-খবর নেন।
‘প্রধানমন্ত্রী জাফর ইকবালের সঙ্গে কথা বলেন এবং তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। চিকিৎসাধীন জাফর ইকবাল হাসিমুখে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।’
গত শনিবার নিজ কর্মস্থল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে ফয়জুর রহমান নামে এক যুবক ছুরি দিয়ে জাফর ইকবালের পেছন থেকে হামলা চালায়। হামলার পর রক্তাক্ত অবস্থায় জাফর ইকবালকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক জাফর ইকবালকে ওই রাতেই বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে সিলেট থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। রাতেই ২০ থেকে ২২ জন চিকিৎসক সেখানে উপস্থিত ছিলেন আর তাদেরকে নিয়ে গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ড।
বর্তমানে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন জাফর ইকবাল শঙ্কামুক্ত আছেন। ঢাকা সিএমএইচের চিকিৎসকরা এক ব্রিফিংয়ে জানান, জাফর ইকবালের মাথা, পিঠ ও হাতে ছুরির আঘাতের ছয়টি জখম রয়েছে। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত। তবে পুরো সুস্থ হতে কয়েক দিন সময় লাগবে। মাথার আঘাত স্কিন (চামড়া) ও মাসলে (পেশী) লেগেছে, ব্রেনে (মগজ) লাগেনি। পেটেও কোন আঘাত নেই।
সেদিনের হামলার সময় আটক ফয়জুর রহমান ওরফে শফিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব জানতে পারে, এই যুবক জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাফর ইকবালকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছে।