সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ ॥ আগামী নির্বাচনের পূর্বে সিলেটের চলমান সব উন্নয়ন প্রকল্প শেষ করুন

80

স্টাফ রিপোর্টার :
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি বলেছেন, সরকার জনগণের আর জনগণ সরকারের। সরকারের টাকা DSC_0080জনগণের টাকা। সরকার জনগণের কাছ থেকে যে ট্যাক্স নেয় সেটা আবার জনগণের স্বার্থে ব্যবহার করে। তাই জনকল্যাণে গৃহিত সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-কে আরো বেগবান করতে সবাইকে আরো বেশি সহযোগিতা করতে হবে।
মন্ত্রী শনিবার সিলেটে দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ও ব্যাংক এশিয়ার আর্থিক সহযোগিতায় সিলেট নগরীর নাইওরপুল পয়েন্টে সকালে সুন্দর্য্যবর্ধন ফোয়ারা উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী। পরে নগরীর নাইওরপুল জামে মসজিদ উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন শেষে কুশিঘাট এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“ত সিলেটের প্রথম মুসলমান গাজী বুরহান উদ্দিন (র.) মাজার মসজিদ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি সিলেট সদর উপজেলার বাদঘাটে নির্মাণাধীন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভায় যোগদান, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ মিলনাযতনে ‘আগামীর সিলেট, স্বপ্নপূরণের সিলেট’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কারিগরি সহায়তায় হযরত শাহপরাণ (র.) মাজার গেইট সংলগ্ন এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় যোগদান ও বিকেলে সিলেটের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সিলেট সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত, এলজিইডি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, সড়ক ও সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় যোগদন করেন।DSC_2019
বাদাঘাটে কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন : শনিবার সকাল ১১টায় অর্থমন্ত্রী সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাটে নির্মাণাধীন কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সেখানে কারাগার নির্মাণ কাজে নিয়োজিত গণপূর্ত বিভাগ, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। সভায় মন্ত্রী কারাগার নির্মাণ কাজের সর্বশেষ অগ্রগতির বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এ সময় গণপূর্ত বিভাগের অধীনে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান- নির্মাণাধীন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারটি দেশের অন্যান্য কারাগারের চেয়ে উন্নত প্রযুক্তি ও ডিজাইনে করা হচ্ছে। কারাগারের মোট কাজের প্রায় ৯৫ ভাগ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ভবনগুলোর ফিনিশিং কাজ, সিকিউরিটি ইকুপম্যান্ট, গাছ লাগানো, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ এর কাজ বাকী আছে, অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করে চলতি ২০১৭ সনের ডিসেম্বর মাসে কারাগারে কয়েদি উঠানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সিলেটের উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে কেন্দ্রীয় কারাগার প্রকল্প আমার প্রথম অগ্রাধিকার প্রকল্প। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ দেখতে চাই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সকল অসমাপ্ত কাজ শেষ করে প্রকল্পের উদ্বোধনে যা যা প্রয়োজন সব দ্রুত করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ.কে আবদুল মোমন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. গিয়াস উদ্দিন হায়দার, নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মিজানুর রহমান, সিলেট জেলা পরিষদ সদস্য এ.জেড রওশন জেবিন রুবা, মোহাম্মদ শাহানুর, মৌলভীবাজার পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট নুরে আলম সিরাজী, সিলেট সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াছ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বিধান কুমার সাহা, সাংবাদিক মকসুদ আহমদ মকসুদ, সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমির উদ্দিন আহমদ, মোজাহিদ আলী, আব্দুর রহমান প্রমুখ।pic--08-07-17---3
সিলেট সদর উপজেলায় উন্নয়ন মতবিনিময় সভা : শনিবার দুপুরে সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘আগামীর সিলেট, স্বপ্ন পুরণের সিলেট’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কারিগরী সহায়তায় হযরত শাহপরাণ (র.) মাজার গেইট সংলগ্ন এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন অর্থমন্ত্রী। সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আগামীর সিলেট নিয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রস্তুতকৃত একটি পরিকল্পনা প্রজেক্টরের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী খালেদ আশরাফ। ফাউন্ডেশনের আগামি সিলেট নিয়ে উপস্থাপিত পরিকল্পনায় অর্থমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমার শৈশব কৈশরের এক সময়ের সিলেট এখন আর নেই। মানুষ বাড়ার সাথে সাথে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ ইত্যাদির কারণে আজ সিলেট শপকিপার সিটিতে পরিণত হয়েছে। যেখানে ৪টি বাড়ি সেখানে ১টি শপিং সেন্টার। মন্ত্রী বলেন, এখনো সুযোগ আছে সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, পরিকল্পিত আদর্শ নগর গড়ে তোলার। এক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ সমস্যা যেগুলো আছে তা চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠা ও আন্তরিকতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ.কে আবদুল মোমন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী, খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট আফছর আহমদ, সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিলাল। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের পর্যালোচনা সভা : সিলেটের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শনিবার বিকেলে সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত, এলজিইডি, বিদ্যুৎ বিভাগ, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও সেতু বিভাগের সাথে সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় মিলিত হন অর্থমন্ত্রী।
সভায় তিনি বিভিন্ন দপ্তরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত উন্নয়ন প্রকল্পের পৃথকভাবে অগ্রগতি বিষয়ে অবহিত হন ও স্ব স্ব বিভাগের রিপোর্ট নেন। সভায় তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনে চলমান উন্নয়ন কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পের কাজ দ্রুত করার তাগিদ দেন।
বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনা ও সিলেটে ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে অবিলম্বে লোডশেডিং বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিদ্যুৎ বিভাগকেও তিনি নির্দেশ দেন।
সভায় মন্ত্রী সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাটে নির্মাণাধীন কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন তেমুখি-বাদাঘাট প্রায় ৫ কিলো মিটার সড়ক ৬ লেনে উন্নিতকরণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য সড়ক ও সেতু বিভাগকে নির্দেশ দেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ড. এ.কে আব্দুল মোমেন, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব। সভায় বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিভিন্ন দফতরের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমুহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে শেষ করার জন্য বিভিন্ন দফতরের পদস্থ কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী।