অশ্লীলতার বীভৎস রূপ এবং তার প্রতিকার

597

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥

(পূর্ব প্রকাশের পর)
বুহতান আরবী শব্দ। আভিধানিক অর্থ-অপবাদ, দুর্নাম, মিথ্যা, রটনা, ইত্যাদি। ইসলামের চিরস্থায়ী বিধান হলো, কারও প্রসংসা করতে হলে তার অসাক্ষাতে আর সমালোচনা করতে হলে সাক্ষাতে করতে হয় এ বিধান লংঘন করে যখনই কারও অসাক্ষাতে নিন্দা, সমলোচনা বা কুৎসা রটনা হয়, তখন তা শরীয়ত বিরোধী কাজে পরিণত হয়। এ ধরনের কাজ তিন রকম হতে পারে এবং তিনটি কবীরা গুনাহ। প্রথমত, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ বা দোষ আরোপ করা হয়, তা যদি মিথ্যা বা প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রমাণহীন হয়, তবে তা নিছক অপবাদ। আরবীতে একে বুহতান বা কাযাফা বলা হয়। ইসলামী বিধানে চোখলখোর ও পেছনে নিন্দাকারী এবং গীবতকারী সম্পর্কে কঠিন আযাবের ঘোষণা ও সর্তক করে দেওয়া হয়েছে। ইসলামী শরীয়তে গীবত হারাম। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন। ওহে যারা ঈমাম এনেছ! তোমরা অনেক অনুমান বর্জন কর। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান পাপ। আর তোমরা কারও দোষ অনুসন্ধান কর না এবং একে অপরের গীবত কর না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করতে পারবে? তোমরা তো অবশ্যই ঘৃণা কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চই আল্লাহ বড় তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। “ আল-কুরআন, ৪৯ :১২”। এ প্রসঙ্গে হাদীসের এক বর্র্ণনায় এসেছে : আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত. তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন : মি‘রাজের রাত্রিতে আমি একদল লোকের পাশ দিয়ে গমনের সময় দেখলাম তারা স্বীয় মুখমন্ডল ও বুকের মাংস পিতল বা তামার নখ দ্বারা ছিন্ন করছে। আমি জিব্রাঈলের কাছে জানতে চাইলাম এরা কারা? তিনি বললেন : ওরা মানুষের মাংস ভক্ষণ করতো ও তাদের সম্মান হরণ করতো। “ ইমাম আবূ দাউদ, আস-সুনান, অধ্যায় : আদাব, পরিচ্ছেদ : গীবাহ, খ. ৫., পৃ.১৯৪ হাদীস নং- ৪৮৪৭”।
হাদীসের অপর এক বর্ণনায় এসেছে : আবু বারযা আসলামী ও বারা ইবনে আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত তারা বলেন: রাসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন হে মু‘মিন সম্প্রদায়! যারা মুখে ঈমামের অঙ্গীকার করেছো; কিন্তু এখনো তা অন্তরে প্রবেশ করেনি। তোমরা মুসলমানদের অগোচরে তাদের নিন্দা করোনা এবং তাদের দোষ অন্বেষণ করো না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের দোষ অন্বেষণ করে আল্লাহ তা‘আলা তার দোষ অন্বেষণ করেন। আর আল্লাহ তা‘আলা যার দোষ অন্বেষণ করেন তাকে স্বীয় গৃহে লাঞ্ছিত করেন। “ ইমাম আবূ দাউদ, প্রাগুক্ত, অধ্যায় : আদব, খ. ৫, পৃ. ১৯৪-১৯৫ হাদীস নং-৪৮৮০; আলবানী, সহীহুল জামে’, খ.২, পৃ. ১৩২২-১৩২৩, হাদীস নং- ৭৯৮৪”।
গীবত করা সর্বসম্মতভাবে হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ। অনুরূপভাবে গীবত শ্রবণ করাও হারাম নিষিদ্ধ কর্ম। কারণ মানুষের চোখ কান ও অন্তর সবকিছুতেই স্বীয় কৃতকর্মের জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন : নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। “আল-কুরআন, ১৭ :৩৬”। মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ.) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন চোখ, কান ও অন্তকরণকে প্রশ্ন করা হবে। কানকে প্রশ্ন করা কবে : তুমি সারা জীবন কি কি শুনেছ? চোখকে প্রশ্ন করা : হবে তুমি সারা জীবন কি কি দেখেছ? অন্তঃকরণকে প্রশ্ন করা হবে : তুমি সারা জীবন মনে কি কি কল্পনা করেছ এবং কি কি বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করেছ? যদি কান দ্বারা শরীয়ত বিরোধী কথাবার্তা শুনে থাকে; যেমন কারও গীবত এবং হারাম গানবাদ্য কিংবা চোখ দ্বারা শরীয়ত বিরোধী বস্তু দেখে থাকে; যেমন বেগান স্ত্রী লোক বা সুশ্রী বালকের প্রতি কু-দৃষ্টি করা বা অন্তরে কুর‘আন ও সুন্নাহ বিরোধী বিশ্বাসকে স্থান দিয়ে থাকে অথবা কারও সম্পর্কে প্রমাণ ছাড়া কোন অভিযোগ মনে কায়েম করে থাকে, তবে এ প্রশ্নের ফলে আযাব ভোগ করতে হবে। “ মুফতী মুৃহাম্মদ শফী, তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন, অনু: মুহিউদ্দঅন খান, মদীনা মুনাওয়ারা : খাদেমূল হারামাইন কোরআন মদ্রণ প্রকল্প, পৃ.৭৭”। এছাড়া আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মু‘মিনগণের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন : তারা (মু‘মিনরা) যখন অবাঞ্ছিত বাজে কথাবার্তা শ্রবন করে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। “ আল-কুরআন, ২৮ :৫৫”। এখানে আয়াতটি বর্ণনা মূলক হলেও তা দ্বারা মু‘মিনদের কে অনর্থক ও বাজে কথা শ্রবণ থেকে নিষেধ করার নির্দেশ্যতুল্য। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মু‘মিনগণের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে ইরশাদ করেন : এবং যারা অনর্থক কথাবার্তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় বা নির্লিপ্ত থাকে। “ আল-কুরআন, ২৩ : ৩”।
উল্লেখ্য যে, যে লোক কোন পুরুষ বা মেয়েলোককে যিনা বা পুংমৈথুনর মিথ্যা অপবাদ বা অভিযোগে অভিযুক্ত করবে, এ অভিযোগ রাষ্ট-প্রধান তথা প্রশাসন কর্তৃপক্ষের নিকট দায়ের হবে, তাকে আশি দোররার শাস্তি দেওয়া হবে। এভাবেই জনগণের মান মর্যাদা রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইসলামে এ ব্যবস্থা না থাকলে সমাজে এই পাপের ব্যাপক প্রচলন হত এবং তার ফলে বহু মানুষকেই নানাভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে হতো। তবে অভিযোগকারী যদি তার অভিযোগের সমর্থনে চারজন প্রত্যক্ষদশীর সাক্ষ্য পেশ করতে পারে, তাহলে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে। কুরআন মাজিদে এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : আর যেসব লোক সুরক্ষিত চরিত্রবান মেয়েলোকের উপর যিনার অভিযোগ আনে, পরে সেজন্য চারজন সাক্ষী উপস্থাপন করে না, তাদের আশিটি বেত্রাঘাত করো। তাদের সাক্ষ্য কখনই কবুল  করবে না। ওরা ফাসিক। তবে যারা এ অপবাদ থেকে তওবা করবে ও নিজেদের সংশোধন করে নেবে, আল্লাহ (তাদের জন্য) নিশ্চই ক্ষমাশীল, অতীব দয়াবান। “ আল-কুরআন, ২৪ : ৪-৫। প্রকাশ থাকে যে, অখিভযোগকারী যদি স্বাধীন ও শরীয়াত পালনে বাধ্য হওয়ার উপযোঘী হয় এবং অভিযোগটা হয় যিনা করার এবং তা মিথ্যা হয় বা প্রমাণিত না হয়-তাহলে উপরোক্ত শাস্তি তাদের উপর কার্যকর  করা একান্তই কর্তব্য। আর অভিযোগ যদি যিনা বা পুংমৈথুন ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে হয় ( আর তা প্রমাণিত হয়) তাহলে তার উপর তাযীর ধার্য হবে। যিনার মিথ্যা অভিযোগ ‘হদ্দ’ ধার্য হচ্ছে, অথচ, কাউকে কুফর বা মুনাফিকীর অভিযোগে মিথ্যাভাবে অভিযুক্ত করা হলে তাতে হদ্দ ধার্য হয় না। এর মূলে কি তাৎপর্য নিহিত, এ নিয়ে লোকেরা পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকে।
এ পর্যায়ে আমাদের জবাব স্পষ্ট। বস্তুত কারোর বিরুদ্ধে যিনার মিথ্যা অভিযোগ তোলা অত্যন্ত মারাত্মক ধরণের অপরাধ, তাতে কোনই সন্দেহ নেই এর পরিণতি ও প্রতিক্রিয়া সমাজে খুব ভয়াবহ হয়ে দেখা দেয়। তাতে সমাজে নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা, চরিত্রহীনতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত ব্যক্তি জনগণের আস্থা থেকে চিরদিনের তরে বঞ্চিত হয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে সমাজে যে ব্যাপক প্রচারণা চলতে থাকে তাকে মিথ্যা প্রমাণ করা ও তার খারাপ প্রতিক্রিয়া রোধ করা বা তার কু-প্রভাব মুছে ফেলা তার পক্ষে কখনই সম্ভবপর হয় না। তাকে সারাটা জীবন মিথ্যা কলংকের বোঝা বহন করে অতিবাহিত করতে হয়। এ অবস্থা আরও মম্যান্তিক হয়ে দেখা দেয় , যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি কোন মেয়েলোক হয়। এই কলংক শুধু তাকেই ক্ষত-বিক্ষত করে না, তার পিতৃপুরুষ ও তার গর্ভজাতদের মুখকে কালিমা লিপ্ত করে। আর অবিবাহিতা হলে তো তার পক্ষে বিবাহিত হওয়ার আশা প্রায় শেষ হয়ে যায়। কুফরীর মিথ্যা অভিযোগের তুলনায় যিনার মিথ্যা অভিযোগ অত্যন্ত ভয়াবহ, প্রথমটি দ্বিতীয়টি তুলনায় অনেক হালকা হয়ে থাকে। কেননা কারোর বিরুদ্ধে সেরূপ অভিযোগ উঠলেও তার বাস্তবে ইসলাম অনুসরণ ও শরীয়তের হুকুম আহকাম পালন তাকে জনগণের সম্মুখে মিথ্যা অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে অনেক সাহায্য করে। তাতে লজ্জার খুব একটা কারণ ঘটে না। কিন্তু যিনার মিথ্যা অভিযোগ একটি ব্যক্তির-সেই সাথে আর বহু ব্যক্তির জীবনকে চিরতরে কলঙ্কিত করে রাখে। অবশ্য এই শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে যার প্রতি অপবাদ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে পাঁচটি শর্ত আর অপবাদ দাতার মধ্যে তিনটি শর্ত পাওয়া যেতে হবে। যার প্রতি অপবাদ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে যে পাঁচটি শর্ত বিদ্যামান থাকতে হবে তা নিম্নরূপ: (১) তাকে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে; (২) বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন হতে হবে; (৩) মুসলিম হতে হবে; (৪) স্বাধীন হতে হবে; (৫) সচ্চরিত্রর অধিকারী  হতে হবে।
অতএব, কোন শিশু,পাগল, অমুসলিম, পরাধীন এবং চরিত্রহীন ব্যক্তির প্রতি অপবাদ দেয়া হলে এ শাস্তি প্রযোজ্য হবে না, তবে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় শাস্তি প্রযোজ্য হতে পারে। আর অপবাদদাতার  মধ্যে যে তিনটি শর্ত বিদ্যামান থাকতে হবে তা হলো:- (১) অপবাদ দাতাকে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে; (২) বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন হতে হবে। (৩) স্বাধীন হতে হবে।  ড. ওকাজ ফাকরী আহমদ, ফালসসাসাফাতুল ‘উকূবাতু ফীশ শারী‘আতিল ইসলামীয়্যাহ ওয়াল ক্বানূন, রিয়াদ! মাকাতাবাতুল ‘ইলমিয়্যাহ, তা. বি., পৃ.৫০”।
অতএব, অপবাদদাতা যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক, পাগল হয়, তবে শরী’য়ী শাস্তি প্রযোজ্য হবে না এবং দাস-দাসী হলে অর্ধেক শাস্তি প্রযোজ্য হবে। তাই কাফিরদেরকেও শাস্তি দেয়া হবে, এমনকি নারীকেও শাস্তি দেয়া হবে। অপবাদমূলক লেখনী সাধারণভাবে বলা হয় এমন একটি লেখনী যা একজন ব্যক্তির কুৎসা রটনা করা এবং তাকে ঘৃণ্য এবং ঘৃণার পাত্র বানায়। আর এটি তাকে মানুষের কাছে ও হাস্যকর ও ঠাট্টার পাত্র হিসাবে পরিগণিত করে। “ঞযব উবভধসধঃরড়হ অপঃ ১৯৫২. ংং ১্৬, এড়ষফংসঁঃয া চৎবংংফৎধস খঃফ (১৯৭৭) ছই ৮৩ ধঃ ৮৭, ঢ়বৎ ডরহব ঔ., এষবধাবং া উবধশরহ (১৯৮০)অপ ৪৭৭ ধঃ ৪৮৭, (১৯৭৯) ২ অষষ ঊজ ৪৯৭ ধঃ ৫০৩, ঢ়বৎ ঠরংপড়ঁহঃ উরষলযড়ৎহব”. তবে অপবাদমূলক লেখনীর এ সংজ্ঞাটি টর্ট আইনের দৃষ্টিতে পরিপূর্ণ সংজ্ঞা নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে লর্ড এ্যাটবিল এর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন এভাবে: “ অপবাদমূলক লেখণীর মাধ্যমে একজন ব্যক্তির সামাজিক অধিকারের ভিত্তিতে অনেক বাদীকে নীচু করে দেয়।” বহুল প্রচলিত এ সংজ্ঞাটি  “খধি ড়ভ ঈৎসরহধষ খরনবষ”  আইনের ধারা বলে গ্রহণ করা হয়েছে। “অফধসং (১৮৮৮) ২২ ছইউ ৬৬, ঈঈজ. খধি ঈড়স ডড়ৎশরহম চধঢ়বৎ ঘড় ৮৪ ঢ়ধৎধ ৩৮; ঞযব উবভধসধঃরড়হ অপঃ ১৯৫২. ংং ১্৬, এড়ষফংসঁঃয া চৎবংংফৎধস খঃফ (১৯৭৭) ছই ৮৩ ধঃ ৮৭, ঢ়বৎ ডরহব ঔ., এষবধাবং া উবধশরহ (১৯৮০)অপ ৪৭৭ ধঃ ৪৮৭, (১৯৭৯) ২ অষষ ঊজ ৪৯৭ ধঃ ৫০৩, ঢ়বৎ ঠরংপড়ঁহঃ উরষলযড়ৎহব”.
অপবাদমূলক লেখনীর প্রকাশনা আইন হলো লঘু অপরাধ। এ অপরাধে জড়িত ব্যক্তিকে “উবভধসধঃড়ৎু খরনবষ” আইন-১৮৪৩ এর দ্বারা ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে। ঔ.জ. ঝঢ়বহপবৎ রহ জবংযধঢ়রহম ঃযব ঈৎরসরহধষ খধ,ি ২৮৫, য়ঁড়ঃবফ নু খড়ৎফ ঊফসঁহফ উধারবং, (১৯৭৯) ২ অষষ ঊজ ধঃ ৫০৫; ঈঋ খধি ঈড়স ডড়ৎশরহম চধঢ়বৎ ঘড় ৮৪, চধৎধং ঘড়.৩৬ ্ ৩৭; ঋড়ষফংসরঃয া চৎবংংফৎধস খঃফ (১৯৭৭) ২ অষষ ঊজ ৫৫৭ ৯ডরবহ ঔ. ঈঋ উবংসরহফ া ঞযড়ৎহ (১৯৮২) ৩ অষষ ঊজ ২৮৬৮., (১৯৮৩) ১ ডখজ ১৬৩ (ঞধুষড়ৎ ঔ); ঝরৎ ঔড়যহ ঝসরঃয ্ ঐড়মধহ, ঈৎরসরহধষ খধ,ি এৎবধঃ ইৎরঃধরহ: ঞযব ইধঃয চৎবংং, চ. ৭৩৭ এ আইনে  যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, কানাডা, চিলা,প্যারাগুয়ে, ফ্রান্স, হংকং, হাঙ্গেরি, ইন্ডিয়া, আয়্যারল্যান্ড, ইটালি, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, পোল্যান্ড, সিংগাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, ইউনাইটেড স্ট্যাট অব আমেরিকায় বলবৎ রয়েছে”। মিথ্যা অপবাদমূলক প্রকাশনা হলো, অপরাধ আইন ১৮৪৩ এর ধারা অনুযায়ী একটি লঘু অপরাধ। যেটার শাস্তি দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড। যদি এটি প্রমাণিত হয় যে, অপরাধী এটি জানতেন যে অপবাদটি মিথ্যা অথবা এটা যদি সত্য হয়, তবে সাধারণ অপরাধ আইনে দোষী সাব্যস্ত হবে এবং তার শাস্তি এক বছর সশ্রম কারাদন্ডের বেশি হবে না। “ইড়ধষবৎ া জ (১৮৮৮) ২১ ছইউ ২৮৪. যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, কানাডা, চিলা,প্যারাগুয়ে,ফ্রান্স, হংকং, হাঙ্গেরি, ইন্ডিয়া, আয়্যারল্যান্ড, ইটালি, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, পোল্যান্ড, সিংগাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, ইউনাইটেড স্ট্যাট অব আমেরিকায় এ আইনটি জারী আছে ”। ছয়. সমকামিতা : বর্তমান বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টিকারী মরণ ব্যাধি এইডস, যার পরিণাম নিশ্চিত মৃত্যু। ১৯৮১ সালে দিকে বিজ্ঞানিরা এ রোগের খবর পেলেন। বিজ্ঞানীরা এ রোগের কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে বলেন, এটি একটি বদমায়েশী রোগ, যা শুধু, মাত্র দুশ্চরিদেরকে আক্রমণ করে। ডা: রবার্ট রেডিফিল্ড বলেন, অওউঝ রং ধ ংবীঁষষু ঃৎধহংসরঃঃবফ ফরংবধংব. অর্থাৎ এইডস হচ্ছে যৌন অনাচার থেকে সৃষ্ট রোগ। রেডফিল্ড আরো বলেন. আমাদের সমাজের (মার্কিন সমাজের) অধিকাংশ নারী-পুরুষের নৈতিক চরিত্র বলতে কিছুই নেই। কম-বেশি আমরা সকলেই ইতর রতিঃপ্রবণ মানুষ হয়ে গেছি। এইডস হচ্ছে স্রষ্টার তরফ থেকে আমাদের উপর শাস্তি ও অন্যদের জন্য শিক্ষা ও বটে। আমেরিকার প্রখ্যাত গবেষক চিকিৎসক ডনডেস সারলাইস বলেন. বিভিন্ন ধরনের পতিতা আর পুরুষ সঙ্গীরা এইডস রোগ সৃষ্টি, লালন পালন করে এবং ছড়ায়। ডা: জেমস চীন বলেন : দু হাজার সালের আগেই শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ইতর রতিঃপ্রবণতা লাভ করবে। পেশাদার পতিতা ও সৌখিন পতিতাদের সংস্পর্শে যারা যায় এবং ড্রাগ গ্রহণ করে তারাই এইডস জীবানু সৃষ্টি করে এবং তা ছড়ায়। এক কথায় অবাধ যৌনাচার, পতিতাদের সংস্পর্শ, সমকামিতার কু-অভ্যাস ও ড্রাগ গ্রহণকেই এইডসের জন্য দায়ী করা হয়। সম্প্রতি এ ভয়ংকর ব্যাধি আল্লাহর দেয়া বিধি নিষেধ অমান্যকারীদের উপর দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন: তাদের দুষ্কর্ম তাদেরকে বিপদে ফেলেছে, এদের মধ্যে যারা পাপী তাদেরকেও অতি সত্বর দুস্কর্ম বিপদে ফেলবে। তারা তা প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না। “ আল-কুরআন, ৩৯ : ৫১। এ রোগটির কারণে পূরো সমাজেই সব সময়ে ভীত সন্ত্রস্ত, অশান্তি ও অস্থিরতার মধ্যে অবস্থান করছে। কি জানি কোন সময় এই এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।
এ মরণব্যাধির উৎপত্তি ঘটেছিল লূত (আ.) এর সম্প্রদায়ের কুকর্মের জন্য। আর সেটি হলো লূত (আ.) এর সম্প্রদায় ব্যভিচার করেছিল, মহিলা বাদ পুরুষে-পুরুষে।সে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:- “ আমি লূতকে প্রেরণ করেছি, যখন সে স্বীয় সম্পদায়কে বলল: তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বের কেউ করেনি। তোমরা তো নারীদের ছেড়ে কামবশত পুরুষদের কাছে গমন কর। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ।- আল-কুরআন, ৪২ : ৪৭”। ১৯৮৫ সালের অন্যাকে পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে: ১৪,৭৩৯ জন এইডস রোগ আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ১০৬৫৩ জন রোগীাই পুরুষ সমকামী। আমেরিকার মত উচ্চ শিক্ষিত সভ্য এবং সর্বদিক থেকে শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার হয়ে সমকামিতার মত নিকৃষ্ট ঘৃণিত মানবতা বিরোধী অশ্লীলতাকে যদি আইন করে বৈধ করে তাহলে কিভাবে সম্ভব অশ্লীলতাসহ মানব সভ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে  কামপ্রবৃত্তি ও লোভ-লালসার জালে আবদ্ধ হয়ে লজ্জা-শরম ও ভাল-মন্দের স্বভাবজাত পার্থক্য বিসর্জন দিয়ে পার্লামেন্টে বৈধ ঘোষণা করা হয় তখন স্বাভাবিখভাবেই তা সমাজে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। আর তখনই সেই সমাজে আল্লাহর গজবের উপযুক্ত হয়ে যায়। তারা এমন প্রকৃতির বিরুদ্ধে নির্লজ্জতায় লিপ্ত হয় যা হারাম ও গোনাহ তো বটেই, স্স্থু স্বভাবের কাছে ঘৃণ্য হওয়ার কারণে সাধারণ জন্তু জানোয়ারও এর নিকটবর্তী হয় না। মানুষের পাশাপাশি ও লজ্জাকর অশোভন আচরণ যে কত দ্রুত সমাজ সভ্যতাকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়, আধুনিক শিক্ষিত পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থা কিভাবে ভয়াবহ ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে তা সমস্ত বিশ্ববাসী আজ হাড়ে হাড়ে উপলদ্ধি করতে পারছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:- “যারা নিকৃষ্ট বস্তু করেছে তার বদলাও সেই পরিমাণ নিকৃষ্ট এবং অপমান তাদের চেহারাকে আবৃত করে ফেলবে। তাদেরকে আল্লাহর হাত থেকে বাঁচাতে পারবে এমন কেউ নেই।” আল-কুরআন, ১০:২৭। আজ এই যস আতঙ্কে সমগ্র বিশ্ব প্রকম্পিত, সমস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, সারা বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞাপনীগণ এই ভয়াবহ মরণব্যাধি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েয়ে। এই মহামারী এইডস থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করার জন্য বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে এবং করছে। কিন্তু সকল প্রচেষ্টা সমূলে ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা বলছে, এইডস রোগের কোন চিকিৎসা নেই। কুরআনে বর্ণিত রয়েছে:- “আল্লাহর পক্ষ থেকে অবশ্যম্ভাবী দিবস আসার পূর্বে তোমরা তোমাদের পালনকর্তার আদেশ মান্য কর। সেদিন তোমাদের কোন আশ্রয় স্থল থাকলে না এবং তা নিরোধকারী কেউ থাকবে না।”- আল-কুরআন, ৪২:৪৭”।
বিভিন্ন জটিল, দুরারোগ্য ও ধ্বংসাত্মক ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র উপায় হলো পবিত্র কুরআনের মহান শিক্ষা গ্রহণ এবং যাবতীয় বিধিনিষেধ যথাযথ ভাবে পালন । আর রাসূলে কারীম স.- এর মহান আর্দশের বাস্তবায়ন। বিশ্বের এই মহা দুর্যোগের সময় ইসলামের এই ধ্র“ব সত্য ও হুঁশিয়ারী বাণী উপলব্ধি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) এইডস প্রতিরোধে ধর্মীয় অনুশাসনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে বাধ্য হয়েছে। তাই ডঐঙ এমর্মে ঘোষণা করেছে।
“এইডস প্রতিরোধ প্রচেষ্টায় ধর্মীয় শিক্ষাদান এবং যথাযথ নির্মল আচরণ প্রবর্তনের চেয়ে আর কোন কিছুই অধিক সহায়ক হতে পারে না যার প্রতি সকল ওহীভিত্তিক ধর্মে সমর্থন প্রদান ও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। “ঘড়ঃযরহম পধহ নব সড়ৎব যবষঢ়ভঁষ রহ ঃযরং ঢ়ৎবাবহঃরাব বভভড়ৎঃ ঃযধহ ৎবষরমরড়ঁং ঃবধপযরহমং ধহফ ঃযব ধফড়ঢ়ঃরড়হ ড়ভ ঢ়ৎড়ঢ়বৎ ধহফ ফবপবহঃ নবযযধারড়ৎ ধং ধফাড়পধঃবফ ধহফ ঃযব ঁৎমবফ নু ধষষ ফরারহব ৎবষরমরড়হং, ঃযব ৎড়ষব ড়ভ জবষরমরড়হ ধহফ বঃযরপং রহ ঃযব ঢ়ৎবাবহঃরড়হ ধহফ পড়হঃৎড়ষ ড়ভ অওউঝ. দি রোল অফ রিলিজিয়ন এন্ড ইথিক্স ইন দ্যা প্রিভিনশন এন্ড কন্ট্রোল অফ এইডস, (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত), অনুচ্ছেদ-৯, পৃ.৩।
ডা. মুহাম্মাদ মনসুর আলী বলেন: বর্তমান কালের সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাধি এইচ. আই. ভি। এইডস এমনই এক সময়ে সমগ্র বিশ্ব চরম আতষ্ক এবং নিরতিশয় হতাশা সৃষ্টি করেছে যখন চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নতির অত্যুঙ্গ শিখরে অবস্থান করছে। এ মরণ ব্যাধি উৎপত্তি এবং বিস্তারের কারণ হিসাবে দেখা গেছে চরম অশ্লীলতা, যৌন বিকৃতি ও কুরুচিপূর্ণ সমকামী ও বহুগামিতার মত পশু সুলভ যৌন আচরণের উপস্থিতি। শতকরা প্রায় ৯৫% সমকামী এবং বহুগামী পুরুষও মহিলাদের মাধ্যমে এইডস সমগ্র বিশ্বে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং দিন দিন এইডস নামক মরণব্যাধিতে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। – আল-উম্মাহ পত্রিকা, রবিউল আখির, ১৪০৬ হিজরী”।
বিশ্বব্যাপি এ ব্যাধি শুরু থেকে ব্যাপক আকারে দেখা দেয়া পর্যন্ত প্রায় ১৩ মিািলয়ন নারী-পুরুষ ও শিশু এইচ,আই,ভি তে আক্রান্ত হয়েছে যা এইডস রোগের কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন এবং এইডস রোগীর সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন হত পারে। প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার লোক এইচ.আই. ভি তে আক্রান্ত হচ্ছে।
প্রচলিত আইনে অশ্লীলতার শাস্তি ঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ আইনই ব্রিটিশ আইনের উত্তরাধিকারী। অশ্লীলতার আইন তার ব্যতিক্রম নয়। ১৭১৭ সালের আগে ইংল্যান্ডে অশ্লীলতার বিচার হতো ….. (অসমাপ্ত)