জনগণের ভোগান্তি লাঘবে ব্যবস্থা নিতে হবে

5

পহেলা বৈশাখ ১৪৩০ হতে ভূমি মন্ত্রণালয় দেশে অনলাইনে ভ‚মি উন্নয়ন কর প্রদানের নির্দেশনা জারি করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে জমির খাজনা অনলাইনে প্রদানের ব্যবস্থা যুক্তিযুক্ত। নগদ টাকায় ভ‚মির খাজনা তথা কর প্রদানের যে ব্যবস্থা দীর্ঘ দিন হতে চলে আসছে তাতে প্রচুর দুর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটিত হতে দেখা গেছে। একথা শতভাগ সত্য যে, কোন কোন ভ‚মি কর দাতার ভ‚মি কর আসে ৪০ পয়সা/৫০ পয়সা। ভ‚মি অফিসে গিয়ে কর দেয়ার সময় ৪০/৫০ পয়সার দাখিলা প্রদান করলেও ভ‚মি মালিকের নিকট হতে ৫০০ শত টাকা হতে আরো অধিক পরিমাণ টাকা গ্রহণ করে ৪০/৫০ পয়সার রশিদ প্রদান ব্যাপক জালিয়াতি, দুর্নীতি ও জনহয়রানি ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? এ দেশে অধিকাংশ ভ‚মি মালিকের খাজনা মওকুফ রয়েছে দেশিয় আইনে, তবে যাদের খাজনা মওকুফ রয়েছে আইনে তারা জমির মালিকানা অন্য কাউকে হস্তান্তর করতে চাইলে রেজিস্ট্রি অফিসে অবশ্যই ভ‚মির খাজনার রশিদ দাখিল করতে বাধ্য। তাই ভ‚মি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দেশের জনগণকে ভ‚মি অফিসে গিয়ে ভ‚মি কর প্রদানের রশিদ নিতে হয়। এক্ষেত্রে ভ‚মি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ভ‚মি মালিকদের নানা প্রকার আর্থিক হয়রানি করে থাকে। এমতাবস্থায় অনলাইনে ভ‚মিকর প্রদানের নিয়ম চালু হওয়া খুবই যুযোগযোগী। তবে কথা হচ্ছে দেশের অধিকাংশ মানুষ অনলাইন প্রক্রিয়া সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। সাধারণ মানুষের জন্য অনলাইন প্রক্রিয়া জটিল বলে মনে হবে। যে যাই বলুক বর্তমান ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে ভ‚মি উন্নয়ন কর অনলাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পাবার যোগ্য।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে ১ বৈশাখ ১৪৩০ হতে ক্যাশলেস খাজনার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। যা অবশ্যই অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে ভ‚মি মালিকদের। তবে শর্ত হলো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কর দিতে হলে প্রত্যেক জমির মালিককে তার জমির খতিয়ান তৈরি ও নিবন্ধন করাতে হবে। এরপর খাজনা দাখিল করে অনলাইন থেকে কিউআর কোডযুক্ত দাখিলা সংগ্রহ করতে পারবেন। বিষয়টি আমাদের কলমে ও মুখের কথায় যতটা সহজ মনে হচ্ছে তা বাস্তবে অধিকাংশ ভ‚মি মালিকের জন্য অতটা সহজ নয়।
আমরা জানি ভ‚মির মালিকানা বংশ পরম্পরায় এবং ভ‚মি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার কারণে রদবদল হয়ে থাকে। বর্তমানে বিএস জরিপ অনুসারে ভ‚মি হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু দেখা যায় বিএস জরিপ অনুসারে অনেক ভ‚মির মালিক নিজেদের নামে খতিয়ান তৈরি করতে পারেনি। ভ‚মি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া আধুনিকায়নের ফলে অনেকে বিএস জরিপ বাদ দিয়ে আর এস অনুসারে ওয়ারিশ সনদ প্রদান করে ভ‚মি হস্তান্তর করছে। যার ফলে বহু জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এমনও দেখা যায় যে, বাবা আরএস জরিপ অনুসারে নিজের জমি বিক্রি করে দিয়েছে। বাবার বিক্রিত জমি সন্তানরা ওয়ারিশ সনদ উপস্থাপন করে পুনরায় বিক্রি করছে। অনেকে হিস্সা অনুসারে প্রাপ্য জমির চেয়ে বেশি পরিমাণ জমি বিক্রি করে দিয়ে ক্রেতার নিকট হতে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে বিএস অনুসারে ক্রেতারা নামজারি খতিয়ান তৈরি করতে গিয়ে বাধার সম্মুখিন হচ্ছে। এ রকম হাজার হাজার ক্রেতা ভ‚মির নামজারি করতে পারছে না। ফলে দেশের সবখানে ভ‚মি সংক্রান্ত অসংখ্য জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিএস জরিপ সংঘটিত হওয়া এবং ফাইনাল হওয়ার বিষয়টি প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের বিষয়। বিগত পঞ্চাশ বছরে দেশের ভ‚মির মালিকানা অনেক বার রদবদল হয়েছে। ভ‚মি আইন অনুসারে প্রতি ৩০ বছর পরপর নতুন ভ‚মি জরিপ হবার আইন থাকলেও তা দেশে কার্যকর থাকতে দেখা যায় নি। ফলে জমির মালিকানা বিষয়ে বর্তমানে জটিলতাও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায় অনলাইনে ভ‚মিকর প্রদান অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবে না এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের। দেশে বর্তমানে একটি ভ‚মি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে খুবই জরুরি বলে মনে করে বিশেষজ্ঞরা। অনলাইন পক্রিয়ায় ভ‚মি উন্নয়ন কর সংক্রান্ত দুর্নীতি কিছুটা কমলেও সর্বস্তরের জনগণ ভ‚মির মালিকরা এবিষয়ে তেমন উপকৃত হতে পারবে না। কেননা এমন অনেকেই রয়েছে যারা নগদ টাকায় জমি ক্রয় করে খতিয়ান তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভ‚মির মালিকরা সত্য গোপন করে ক্রেতাদের ঠকিয়ে গেছে। পকেটের টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে অনেকে তার নামজারি খতিয়ান সৃষ্টি করতে পারছে না। অনলাইন প্রক্রিয়ায় তারা ইচ্ছা করলেও ভ‚মিকর প্রদান করতে সক্ষম হবে না। অনলাইন প্রক্রিয়াকে শতভাগ কার্যকর করতে সমগ্র দেশে নতুন একটা জরিপ কার্যকর করা প্রয়োজন।