হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশীট জমা দিয়েছে সিআইডি। গত বুধবার বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি মেহেরুন্নেছা পারুল হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশীট জমা দেন। চার্জশীটে নতুন ১১ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্ত আসামীরা হলেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌর মেয়র জি কে গউছ, বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা হারিছ চৌধুরী, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি তাজ উদ্দিন, মুফতি সফিকুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, বদরুল, মহিবুর রহমান, কাজল আহমেদ, হাফেজ ইয়াহিয়া। একই সাথে পূর্বের চার্জশীটভুক্ত ইউসুফ বিন শরীফ, আবু বক্কর আব্দুল করিম ও মরহুম আহছান উল্লাহকে চার্জশীট থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।
এর আগে এ মামলায় ২০০৫ সালে চার্জশীট ও ২০১১ সালে একবার সম্পূরক চার্জশীট দেয়ার পর বাদীপক্ষ না-রাজি দিয়ে পুন:তদন্তের নির্দেশ দিতে আদালতে আবেদন করেন। বর্তমানে তৃতীয় দফায় মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশের বিশেষ অপরাধ বিভাগ সিআইডি। সর্বশেষ দ্বিতীয় দফায় এ মামলার চার্জশীট দেয়া হয় ২০১১ সালের ২০ জুন। আদালতের নির্দেশের পর ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ফের মামলাটির পুন:তদন্ত শুরু হয়।
হত্যাকান্ডের ৯ বছর পর তৃতীয় দফায় তদন্ত শেষে চার্জশীট জমা দেয়া হলো। ২০০৬ সালে সম্পূরক চার্জশিটে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও চারদলীয় জোট সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী ও নেতাকর্মীর যোগসাজশে হুজি সদস্যদের সহায়তায় একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা, ব্রিটিশ হাইকমিশনারের উপর গ্রেনেড হামলা, আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন কামরানের উপর দুই দফা গ্রেনেড হামলা, জেবুন্নেছা হকের বাসায় হামলা, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় গ্রেনেড হামলা ও শাহ এএমএস কিবরিয়ার জনসভায় হামলা সংঘটিত হয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ছাড়া সম্পূরক চার্জশীটে কাউকে আসামী করা হয়নি। এছাড়া ওই চার্জশীটে দন্ডবিধির ধারার সঙ্গে ২১৮ নম্বর ধারাটি যুক্ত করা হয়। ২১৮ নম্বর ধারা দুদকের তফসিলভুক্ত। ওই ধারা যুক্ত হওয়ায় মামলায় নতুন জটিলতা তৈরি হয়। এ বিষয়টি না-রাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গত চারদলীয় জোট সরকারের সময় বহুল আলোচিত এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে ২০০৫ সালের ১৯ মার্চ সিআইডির সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রথম চার্জশীট দাখিল করেন। ওই চার্জশীটে জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল কাইয়ুম, জেলা বিএনপি কর্মী ও ব্যাংক কর্মকর্তা আয়াত আলী, কাজল মিয়া, জেলা ছাত্রদলের সহদপ্তর সম্পাদক সেলিম আহমেদ, জিয়া স্মৃতি গবেষণা পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী, কর্মী তাজুল ইসলাম, বিএনপি কর্মী জয়নাল আবেদীন, স্থানীয় বিএনপি নেতা জমির আলী, ওয়ার্ড বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন মোমিন ও ছাত্রদল কর্মী মহিবুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়।
চার্জশীট দেয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, নতুন চার্জশীটে যে ৩টি নাম এসেছে, তাতে বুঝা যাচ্ছে কিছু কাজ হয়েছে। তিনি জানান, বুধবার তিনি আমেরিকা যাচ্ছেন। আগামী ১৯ নভেম্বর দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে আওয়ামী লীগের জনসভা শেষে গাড়িতে ওঠার সময় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়া, তার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ছিদ্দিক আলী, আবদুর রহিম ও আবুল হোসেন। এছাড়া হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এডভোকেট মো. আবু জাহির এমপি, এডভোকেট আবদুল আহাদ ফারুক, আবদুল্লাহ সর্দারসহ আহত হন ৭০ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।