বিজ্ঞান কবিতার রূপ রেখা

718

রীনা তালুকদার

বি জ্ঞান কবিতার রূপ রেখা দিয়েছেন কবি হাসনাইন সাজ্জাদী। বিজ্ঞান কবিতার কথা বললে প্রথমেই বলতে হয় বাংলা কবিতার জন্ম কথা। একদিনে বাংলা কবিতা আজকের অবস্থানে আসেনি। এজন্যই আদি ইতিহাস আলোচনায় রাখা দরকার। বাংলা কবিতা জন্মলগ্নে পদ আকারে ছিল। প্রাচীন যুগের সাহিত্য নিদর্শন হচ্ছে চর্যাপদ। পরবর্তীতে চর্যাপদ গীতি হিসাবে রূপ লাভ করে। এ সময় কারো মতে ২৩ কারো মতে, ২৪ জন বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকদের মোট ৫০ বা ৫১টি চর্যাপদ আকারে পাওয়া যায়। এগুলো ছিলো গানের সংকলন বা ভাষায় রচিত। তারপর সাহিত্যে মধ্যযুগ। এ যুগের যুগপ্রবর্তক হিসাবে শ্রী চৈতন্যদেবকে মনে করা হয়। মধ্যযুগ মূলত: দুইপর্বে বিভক্ত যেমনঃ ১৩৫০-১৫৭৫ পর্যন্ত গৌড়ীয় বা স্বাধীন পাঠান কাল অন্যটি ১৫৭৫-১৮০০ পর্যন্ত সময়ে শ্রী চৈতন্যদেবের পরবর্তী যুগ বা মুঘল যুগ। প্রাচীন যুগে ব্যক্তিজীবন মধ্যযুগে এসে ধর্মীয় জীবনে পরিণত হলো। ধর্ম হলো মুখ্য বিষয় আর মানুষ হলো গৌণ। ধর্মের প্রভাবে মানুষ দিশেহারা তখন। এ যুগের প্রথম রচিত গ্রন্থ হচ্ছে ১৪০০-১৪৫০ খিষ্টাব্দে বড়– চন্ডীদাস রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য।
মধ্যযুগের ধর্মের পাশাপাশি কিছুটা লোকসাহিত্য প্রচলিত ছিল। এ সময়ে বৈষ্ণব সাহিত্য, মঙ্গলকাব্য, শাক্তপদ, অনুবাদ সাহিত্য, নাথ সাহিত্য, জীবনী সাহিত্য, লোক সাহিত্য ইত্যাদি ধারা প্রচলিত ছিল। মঙ্গলাকব্যে মনসাদেবী-বেহুলা-ললীন্দর কাহিনী, ধর্মমঙ্গলে লাউসের কাহিনী, কালিকামঙ্গলে দেবী কালির গুণকীর্তন এবং এ সময়ে সংস্কৃত ভাষায় রামায়ণ বা মহাভরত সহ পৃথিবীতে ইলিয়াড ও ওডেসি সহ মোট চারটি মহাকাব্য রচিত হয়। বাল্মীকি সংস্কৃত ভাষার আদি কবি, তিনি সংস্কৃত ভাষায় রামায়ণ রচনা করেন। আর বাংলা ভাষার আদি কবি কৃত্তিবাস। কৃত্তিবাস রামায়ণের প্রথম বাংলা অনুবাদ করেন। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য দেবদেবী স্তুতি মূলক। এ সময় মুসলিম কবিগণও ইউসুফ জোলেখা’র প্রণয়াসক্ত প্রেম কাহিনী, গুলে বকাওলী এবং মধুমালতী হিন্দী, আরবী ও ফারসী ভাষায় রচিত হয়। এছাড়া এ সময় অনেক মুসলিম কবিও বৈষ্ণব সাহিত্য রচনা করেন। আঠার শতাব্দীর শেষে কবিওয়ালা, শায়ের রচনা ও মৈমনসিংহ গীতিকা সংগ্রহ করা হয়। মধ্যযুগে সাহিত্য বিভিন্ন দিক থেকেই বিস্তৃতি লাভ করে।
বিহারী লালের হাত ধরে বাংলা কাব্যে আধুনিক যুগের সূচনা হয়। এ আধুনিক যুগটি পার করেছে দীর্ঘ সময়। এখন মানুষ অত্যাধুনিক যুগে যাত্রা করেছে। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান মানুষকে উন্নতির চরম অবস্থানে নিয়ে গেছে। এই বিশ্বে বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে। তাই এই সময়কে অত্যাধুনিক যুগ নামকরণ করা হয়। যুগের নামকরণে অবশ্যই কোন ব্যক্তি মানুষ বা শতাব্দী ধরে দেয়া মোটেই যুক্তি যুক্ত নয়। কেননা বহু শতাব্দী পার করেছে পৃথিবী আরও বহু শতাব্দী পার করবে। আবার নামের ক্ষেত্রেও এই রকম কারো নামে হলে সেই সময়ে সাহিত্য সাধনায় আরো যারা সফল হয়েছেন তাদের অবস্থান খাটো হয়ে যায়। বাংলায় রবীন্দ্রযুগ, সংস্কৃত চৈতন্য যুগ এবং ইংরেজী সাহিত্যে ভিক্টোরিয়ান যুগ এগুলো থাকাই উচিত না। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতা মানুষ এখন অত্যাধুনিক। মানুষের জীবন যাপনসহ সব কিছুতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তাই অত্যাধুনিক যুগ হিসাবে এই যুগকে অভিহিত করা যায়। একুশ শতকের শুরু মানেই অত্যাধুনিক যুগ শুরু। যেহেতু সাহিত্য যুগ তাই এর যুক্তযৌক্তিকতা থাকা উচিত। কবি/সাহিত্যিকগণ বর্তমানে তাদের লেখায় বিজ্ঞানকে ধারণ করেছেন। মানুষের মাঝে বিজ্ঞানকে বিভিন্ন বিষয়ের মাধ্যমে পরিচয় করে দিচ্ছে সাহিত্যিকরা। সুতরাং নতুন যুগকে অত্যাধুনিক যুগ বলা সঙ্গত। আবার সাহিত্যে এটিকে আমরা বিজ্ঞান কবিতার যুগও বলতে পারি।
অনেকে কবিতাকে দুর্বোধ্য বলছেন। কিন্তু ভাবতে হবে যে বিচ্ছিন্নতার সুর কাজ করে যে কবি মানসে তার লেখা কিছুটা দুর্বোধ্য হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কবি কাজী নজরুল যদি ভিন্ন উপস্থাপন বা ভিন্ন আঙ্গিক সৃষ্টি না করতেন তবে তো রবীন্দ্রনাথের লেখার পরে আর কোনো কিছুই লেখার প্রয়োজন ছিলনা। এমন কোনো বিষয় নেই যা রবীন্দ্রনাথ ভাবেননি। তিনি একাধারে দর্শন, ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র, বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প, আধ্যাত্মিকতা, মহাবিশ্ব, ব্যক্তিগত-পারিবারিক-সামাজিক ও অর্থনৈতক ও রাষ্ট্রীয় অর্থাৎ সৃষ্টি জগতের সকল কিছুই তার লেখায় চিন্তা চেতনায় ধারণ করেছেন। মানুষের জীবন চলমান সময়ে আবর্তিত হচ্ছে বিজ্ঞানকে ঘিরে। অর্থাৎ বিজ্ঞান মানুষকে ঘিরে ফেলেছে চারদিক থেকে। আর কবিরা মোটেও পিছিয়ে নেই। কবিতাও এখন বিজ্ঞানমুখী। বিজ্ঞানে পশ্চাদমুখী কোন বিষয় নেই। আর কবিতা হচ্ছে ভবিষ্যতের আয়না। বিজ্ঞান কল্পলোক থেকে বাস্তবে আসে, সেই সঙ্গে প্রমাণে ব্যস্ত হয়। অন্যদিকে কবিতা মানুষের কল্পশক্তি থেকে বিজ্ঞানের প্রমাণের আগেই সিদ্ধান্তের জায়গায় পৌঁছে দেয়। এখানে কবিতার কল্পশক্তি সমন্বিত হয় দর্শনের সাথে। তারপর পৌঁছে যায় একটা তৃপ্তিদায়ক ধারণায়। আর বিজ্ঞান নাছোড় হয়ে গবেষণায়রত থাকে প্রমাণের অপেক্ষায়। নিউটন, ইলেকট্রন, প্রোটন এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বা বলের কারুকাজও মহাবিস্ফোরণ নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। কবিতায় হাসনাইন সাজ্জাদী বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে বিজ্ঞান যেভাবে মানুষের জীবনের অলিগলি দখল করেছে সেখানে কবিতা পিছিয়ে থাকার কারণ নেই। তিনি তার বইতে অনেকের কথাই উল্লেখ করেছেন এরা সবাই তাদের স্বাভাবিক সুরের মধ্য দিয়েই নিজের অজান্তে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেছেন। বইটিতে আরো যারা বিজ্ঞান কবিতা লেখে তাদের দু’একটি কবিতা উদাহরণ হিসাবে উপস্থাপন করা যেতো। তাহলে পাঠক কিছুটা ভিন্নরকম মেজাজের কবিতার স্বাদ গ্রহণ করতে পারতো বা অনুপ্রেরণা হিসাবে নতুন প্লট পেতো।
কবি সাজ্জাদী তার ‘জাপানি শিশুরা তেজষ্ক্রিয়তায়’ কবিতায় বলেছেন-
……………………………..
পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয়তা এখন জাপানি শিশুদের
তাদের শরীর এখন পারমাণবিক বিপর্যয়ে
থাইরয়েড গ্রান্ডে আক্রান্ত ফুকুশিমার
পঁয়তাল্লিশ শতাংশ শিশুরা
থাইরয়েড গ্রান্ডে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা
বেশি হলে ঝুঁকি থাকে ক্যানসারের
……………………………….।
এখানে কবি জাপানের সেই হিরোশিমা নাগসাকি ঘটনায় আজো জাপানের শিশুরা এর প্রত্যক্ষ শিকার। এখনো সেখানে বিকলাঙ্গ শিশু জন্মায়, থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়। আবার সম্প্রতি ঝড়ের বিপর্যয়ে জাপানের পারমাণবিক চুল্লী ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো এলাকায় তেজষ্ক্রিয়তায় ছড়িয়ে সেখানে বাতাসও দূষিত। যা মানুষের মধ্যে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। সে বিষয়গুলোই তিনি কবিতায় ধারণ করেছেন। তবে তার কবিতা নির্মেদ। কবিতার অলংকারিক দিকটা খেয়াল করে কিছুটা অলংকারিক বিন্যাস করা হলে কবিতাগুলো পাঠকের মন ছুঁয়ে যাবে নিঃসন্দেহে।
কবি হাসনাইন সাজ্জাদী তার ‘একশ কোটি তেজষ্ক্রিয়তা’ কবিতায় বলেছেন-
………………….
এ কেমন ধ্বংসাবশেষ আমার সীমানায়
হত দরিদ্র চেহারা মানবাধিকারের বিলুপ্তি
খাদ্যে রাসায়নিক বিষ টেন্ডারবাজি
পচনশীল রাজনৈতিক উত্তরাধিকার
পথঘাট সবখানে আগাছা পরগাছা
মাঠে মাঠে অনুর্বরতার হাতছানী
ক্রিয়েশনকে গ্রাস করেছে পাইরেসি
……………………………।
এখানে কবি জনসংখ্যার বিস্ফোরণ, বরফ গলে যাওয়া, আবাদী জমির উর্বরতা হ্রাস, বাতাসে শিশা ভাসছে যার পরিমাণ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে, ধুমপানে পরিবেশ নষ্ট, ভূ-ত্বকে পানির লেয়ার নীচে নেমে যাওয়া, রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় মানুষের আক্রান্ত হওয়া, ভূমির পরিমাণ কমে যাওয়া, জলবায়ুর পরিবর্তন, সবুজের পরিমাণ কমে যাওয়া সহ বিভিন্ন বিষয়ে অবতারণা করে মানুষকে ম্যাসেজ দিয়ে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। কবির কবিতার যে শৈলী তাতে কিছুটা পরিবর্তন দরকার। বিজ্ঞানকে যতোটা সহজবোধ্য ও সারল্যের ভাষায় প্রকাশ করা যায় সেটি খেয়াল করা দরকার। সেই সাথে ভাবতে হবে কবিতা কথা নয়। আবার কথাই কবিতা। কিন্তু কথা কখন কবিতা হবে? এই প্রশ্নে অবশ্যই কথাকে কবিতায় রূপ দিতে কবিতার যে অলংকারিক বিন্যাস, সাজগোজ, পোশাক রয়েছে সেগুলো পরিয়ে সৌন্দর্য বাড়াতে হবে। তাহলেই কথা কবিতা। বিজ্ঞান সেখানে সহজ ভঙ্গিতে সহজ কথায় অসাধারণ উপমা বা দর্শনে উপস্থিত হবে। তাহলে পাঠক নীরবে ভাববে নিজস্ব সত্তায় ও মননে। কবির কবিতার ভাষা যদি কবিকে ভাবিয়ে না তোলো তাহলে সে লেখা পাঠকের জন্য নয়, সমাজের জন্য নয়। অগোছালো কথা কবিতা নয়। মনের একতরফা বহি:প্রকাশ হতে পারে।
কবি হাসনাইন সাজ্জাদী তার বইয়ে রাহুল সাংকৃত্যায়নের বরাত দিয়ে চর্যাপদের সাতজন পদ রচনাকারীর নাম উল্লেখ করেছেন। আবার ছকের ২য় কলামে এ সাতজন যাদের শিষ্য ছিলেন তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই ১ম ও ২য় কলাম মিলিয়ে এমনিতেই ১৪ জন দেখা যায়। কিন্তু বর্ণনায় তিনি বললেন সাতজন। অথচ অন্য অনেক গবেষণা গ্রন্থে বলা হয়েছে ২৩ জন কারো মতে ২৪ জন বৌদ্ধ সহজিয়া সাধক। এখানে মনে হয়েছে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পাঠে নতুন পাঠককে কিছুটা বিভ্রান্তি বা দ্বান্দ্বিকতায় ফেলবে। বইটির শুরুর দিকে অর্থাৎ ভূমিকাংশে সাহিত্যের একটা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরেছেন। কেননা বাংলা কবিতা হঠাৎ করেই বিজ্ঞানভিত্তিক হয়নি। তাই এই বর্ণনাটা সঙ্গত কারণেই এসে যায়। সেটি একটি ভালো দিক। তবে বর্ণনায় বিষয়গুলো কিছুটা এলামেলো মনে হয়েছে। অর্থাৎ কবি এখানে আনন্দের আতিশয্যে উত্তেজিত মনের একটিা তড়িঘড়ি আচরণের বহি:প্রকাশ ঘটেছে মনে হয়েছে। দ্বিতীয় সংকলনে কবি যদি এটিকে মুদ্রণ ত্র“টি মেরামত সহ আরো গুছিয়ে নতুনভাবে সমৃদ্ধ করেন তাহলে পাঠক আরো তা বুঝতে পারবে। প্রথম বই হিসাবে বিজ্ঞান কবিতার ইতিহাস সাহিত্যে; প্রথম সাহিত্যের বিজ্ঞানভিত্তিক ইতিহাস রচিত হলো সেটি কিন্তু সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বের একটি বিষয়। এটি বিনা দ্বিধায় প্রশংসার দাবী রাখে। তিনি পথ প্রদর্শক হিসাবে এগিয়ে থাকলেন এখানে। মেলামাইন কোম্পানির বিজ্ঞাপনে একটি সুন্দর কথা দিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া হতো এক সময়, যে পথ দেখায় সে থাকে সবচেয়ে এগিয়ে। এখানেই এগিয়ে থাকলেন কবি হাসনাইন সাজ্জাদী। তিনি ইউনিভার্সেল ইনভেস্টমেন্ট করে রাখলেন। যার লাভ বা সুনাম যুগ যুগ ধরে তার অদৃশ্য একাউন্টে জমা হতে থাকবে। সাহিত্যের ইতিহাসে এটি অনেক বড় একটা অর্জন। আবার গাড়ীর টায়ারের একটি বিজ্ঞাপনে সুন্দর একটি কথা উচ্চারণ করে-গো এ হেড অর্থাৎ আগে বাড়ো। এই যে ছোট্ট সুন্দর কথাটি এর ব্যাপ্তি কিন্তু বিশাল। কবি হাসনাইন সাজ্জাদীর এই বইটি সেই রকম ব্যপ্তি বিশাল। বইটিতে তিনি কালপঞ্জি ব্যবহার করে বিজ্ঞান কবিতার রূপরেখা বই প্রকাশ পর্যন্ত দিক নির্দিষ্ট করেছেন। এটি দরকার ছিল বা যথার্থ। এই বইটি মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা হচ্ছে ১৫৯ টি। তার মধ্যে বইয়ের ভূমিকা বা সর্নিবন্ধনই হচ্ছে ৪৭ পৃষ্ঠা। যে কথাটি কঠোর ভাবে বলতে হয় সেটি হলো যে, তিনি বিজ্ঞানভিত্তিক কবিতার রূপ রেখা দিতে এসে আরো বিস্তৃতভাবে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়গুলো যদি তুলে আনতেন তাহলে পাঠক আচ্ছন্ন হয়ে যেতো। একজন পাঠকের দৃষ্টি থেকে বলবো এই বইটিতে পাঠক আচ্ছন্নতা খুব একটা খেয়াল করা হয়নি। বরং আমার কাছে গবেষণার চোখ থেকে অথবা বিজ্ঞান কবিতা লেখার শিক্ষানবীশ হিসাবে কেবল জানার জন্য পড়তে হবে; এটি মনে হয়েছে।  যদি এখানে মহাবিশ্বের আবর্তন, নভোমন্ডল, ভূ-ত্বক, মহাশূন্যএসব বিষয়গুলো বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ছবি বা চিত্রপট ব্যবহার করে সমৃদ্ধ করা হতো তাহলে পাঠককে এগিয়ে দিতেন অনেক দূর পথ। তারপরও বলা যায় প্রথম দিক নির্দেশনা হিসাবে অবশ্যই গর্ব করার মতোই একটি আবিস্কার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছে নিঃসন্দেহে।
প্রাথমিকভাবে এ অগ্রযাত্রায় কম সংখ্যক সৈনিক মনে হলেও আশাহত হবার কোনো কারণ নেই। রবীন্দ্রনাথের সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন পঞ্চপান্ডব। রবীন্দ্রনাথ যেমন দমে যাননি; তেমনি পঞ্চপান্ডবও পিছু ছাড়েনি। ফলে রবীন্দ্র পরবর্তী প্রতিভায় পঞ্চাপান্ডবের কবি জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসু কবিতায় নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পেরেছেন। বিজ্ঞান কবিতাকেও হয়ত কবি, কবিতা বোদ্ধারাও পাঠক খুব সহজে গ্রহণ করবে তেমনটি মনে করবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে তা একদিন অনায়াসেই গ্রহণ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে আগাম পথ দেখিয়ে দিলেন কবি হাসনাইন সাজ্জাদী। মৃত্যু চিন্তা আছে বলেই মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিকতা কাজ করে। তাই ধর্মের বিলুপ্তির সম্ভাবনা নেই। তেমনি মানুষের জীবন যখন বিজ্ঞান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তখন কবিতা বিজ্ঞান ভিত্তিক না হয়ে পারেই না। কিছুটা সময় এখানে হয়তো বিজ্ঞান কবিতার সৈনিকদের কাজ করে যেতে হবে ধৈর্য ধরে। কবিতা রবীন্দ্রযুগ পার করে অত্যাধুনিক যুগে বিচরণ করছ্ েতাই বিজ্ঞান কবিতার যুগ গঠনের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা খুব অল্প সময়ে বিশ্ব পরিমন্ডলে ছড়িয়ে যাবে এবং সমাদৃত হবে। বিজ্ঞান কবিতা লিখি বলে এ ব্যাপারে আমিও খুব আশাবাদী। বিজ্ঞান কবিতার যুগ প্রতিষ্ঠার স্থান বাংলাদেশ একক দাবীদার হিসাবে গর্ব করতে পারি। আর তা বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে অচিরেই। এ অগ্রযাত্রা সার্থক হবে অবশ্যই। কেননা বিজ্ঞান ছাড়া মানুষ বর্তমান সময়ে একেবারেই অচল। সার্থক হোক বিজ্ঞান কবিদের অগ্রযাত্রা, প্রতিষ্ঠিত হোক বিজ্ঞান কবিতার যুগ, জয় হোক বিজ্ঞান কবিতার। সার্থক হোক বিজ্ঞান কবি হাসনাইন সাজ্জাদীর শ্রম।