এসডিসি’র সহযোগিতায় গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম ও ইউএনডিপির যৌথ আয়োজনে সিলেটে ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জনআকাক্সক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার’ শীর্ষক বিভাগীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১০ ফেব্রæয়ারি) সকালে সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ কর্তৃত্ব, জনবল, আর্থিক সামর্থ্য ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে স্থানীয় জনগণকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হয়। বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাগুলো অত্যন্ত প্রকট। সংসদ সদস্য-উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান-ইউএনওÑ এ ত্রিমুখী টানাপোড়েনে উপজেলা পরিষদ যথাযথ ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হতে পারছে না। আইনে উল্লেখ থাকলেও হস্তান্তরিত কার্যক্রমগুলো এখনও উপজেলা পরিষদের কাছে যথাযথভাবে ন্যস্ত করা হয়নি। বক্তারা বলেন, জেলা পরিষদের কাজ কী, জেলার মানুষের কোন উপকারে তারা পাশে থাকেনÑ এ সম্পর্কে কারোরই কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই। তাই সার্বিক সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কেই জেলা পরিষদে পরিণত করা দরকার। আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও পৌরসভা এলাকার উন্নয়ন কর্মকাÐেও সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের ‘পরামর্শ’ উপেক্ষা করা যায় না। সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে আমাদের ‘নগর সরকার’ গঠনের দিকে অগ্রসর হতে হবে বলেও বক্তারা মন্তব্য করেন।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন এসডিএম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস বৈষ্ণব। গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের সচিবালয় ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা’র স্বাগত বক্তব্য ও সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের ফ্যাসিলিটেটর অনিরুদ্ধ রায়। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলার এডভোকেসি নেটওয়ার্ক কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক ও দেশ টিভি’র সিলেট প্রতিনিধি খালেদ আহমদ। বিভাগীয় সংলাপে স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বর্তমান ও সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, নারী, পেশাজীবী, গণমাধ্যম কর্মী, উন্নয়ন কর্মী, সমাজকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক, যুব প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধি, গৃহবধূ, এনজিও সংগঠিত দলের নেত্রী, শিক্ষক, স্থানীয় ক্লাব, ধর্মীয় নেতা, দলিত, হিজড়া, অতিদরিদ্রসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে কানিজ ফাতেমা বলেন, গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম ২০০৭ সাল থেকে প্রায় পঞ্চাশটির অধিক সংগঠন নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকার বিষয়ে এডভোকেসি ও ক্যাম্পেইন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০০৭ সালে কনভেনশনের মাধ্যমে ফোরাম যে ৪০ দফা দাবিনামা উপস্থাপন করে তার বেশিরভাগই পরবর্তীতে প্রণীত আইনগুলোতে প্রতিফলিত হয়েছে। তবে স্থানীয় সরকার কমিশন কার্যকর না করা এবং সংসদ সদস্যদের উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে ভ‚মিকা রাখার বিধানের ফলাফল ভালো হয়নি। এ ধারাবাহিকতায় বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা
করার জন্যই ফোরামের এ প্রয়াস।
অংশগ্রহণকারীরা মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলোর সাথে একমত পোষণ করে যেসব সুপারিশ ও মতামত তুলে ধরেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা যুগোপযোগী করাসহ সকল সেবাপ্রাপ্তিতে অভিগম্যতা; স্বচ্ছতা, জবাদিহিতা নিশ্চিতকরণে ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্ম পরিকল্পনা ও বাজেট এবং মনিটরিং জোরদার করা; স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারেও সংস্কার গুরুত্ব দেওয়া; স্থানীয় সরকারের সকল সেবার মধ্যে সমন্বয় করে সুশাসন নিশ্চিত করা। বিজ্ঞপ্তি