কাজির বাজার ডেস্ক
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা ২৩ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
মোখলেস উর রহমান বলেন, সম্প্রতি চারজন উপদেষ্টাকে নিয়ে জনপ্রশাসন সম্পর্কিত একটি কমিটি হয়েছে। এই কমিটিতে বড় কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যে নির্বাচন সেটাকে আমরা কেউ বলি বিতর্কিত, কেউ বলি অগ্রহণযোগ্য, কেউ বলি দিনের ভোট রাতে ইত্যাদি। এসব জায়গায় ৩ সময়ের রিটার্নিং অফিসারদের সহযোগিতায় নির্বাচন সম্পন্ন করে সরকার। এই সরকার তিন মেয়াদে থাকায় আমরা এ দুরবস্থায় পড়েছি। ওই সময়ের ডিসিরা অনেক বড় নেগেটিভ ভ‚মিকা রেখেছিলেন। কোনো একজন ডিসিও বলেননি আমি প্রতিবাদ করব, আমি রিটার্নিং অফিসার থাকব না, আমি রিজাইন করলাম, কাজ করব না।’ সিনিয়র সচিব আরও বলেন, ইতোমধ্যে ৪৩ জন ডিসিকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম তাদের ওএসডি করা হয়েছে। আর চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি হলে তাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অবসরে পাঠানো ২২ জনের মধ্যে এখন একাধিক সচিব রয়েছেন। এমন ২২ জনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাকে তালিকা দেওয়া হয়েছে। ওখান থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম হবে তাদের ওএসডি, যাদের ২৫ বছরের বেশি তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, ‘জনগণের হয়ে সরকার অনেক শক্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং এগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিছু কিছু মন্ত্রণালয় নিজস্ব দায়িত্বে কাজ করছে।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কী বার্তা দিতে যাচ্ছেনÑ এমন প্রশ্নে জবাবে সচিব বলেন, সামনে নির্বাচন। ডিসিরা তিনদিনের সম্মেলনে অংশ নিয়ে গেলেন। ডিসিদের বলা হয়েছে, তারা রিটার্নিং অফিসার হবেন, ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সাহসের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে হবে। যারা করবেন না, তারা ফলাফল পেয়ে যাবেন।
বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব, সচিবদের কারও কারও বিরুদ্ধেও ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর’ হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধেও কোনো সিদ্ধান্ত আসছে কীনাÑ এ প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘যাদের নামে দুর্নীতি, অতিরঞ্জন, আইনের বাইরে অতিরঞ্জন কাজ করেছেন, তাদের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। তাদেরও চাকরিবিধি অনুযায়ী সাজা পাবেন।’
অবসরে যাওয়ার পরও যাদের নামে কোটি কোটি টাকার (দুর্নীতির) অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয়ে দুদকে মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিব। তিনি বলেন, ‘অবসরে যাওয়া মানেই যে মুক্তি তা নয়। এই অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, অবসরে যাওয়ার পরও ফলোআপ হচ্ছে। জনস্বার্থে সরকার এখানে ছাড় দেওয়া হবে না।’
বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া এই কর্মকর্তারা হলেনÑ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান, সাবেক স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান; অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা, হামিদুল হক, এসএম আলম, আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, এনামুল হাবীব, তন্বয় দাস, শওকত আলী, তোয়েল ইসলাম, আব্দুল আওয়াল, দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, ফয়েজ আহাম্মদ, মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, রাব্বি মিয়া ও মাসুদ করিম এবং যুগ্ম সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম ও উপসচিব আহমেদ কবির।