এমসি কলেজে তালামীয নেতার উপর শিবিরের হামলার অভিযোগ

6

কাজির বাজার ডেস্ক

ফেসবুকে মন্তব্যের জেরে এমসি কলেজ (মুরারিচাঁদ) আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার এক নেতাকে রড দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে।
মারধরের শিকার মো. মিজানুর রহমানের দাবি, তাঁকে এমসি ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা মারধর করেছেন। তিনি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। গতকাল বুধবার রাত ১২টার দিকে কলেজ ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে।
তবে কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইসমাঈল খান বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নন। ছাত্রশিবিরের জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে তৃতীয় একটি পক্ষ কলকাঠি নাড়াচ্ছে। মূলত কলেজ ছাত্রাবাসে মিজানুর রহমান নামের ওই শিক্ষার্থী ও একই কলেজের জাকিরুল ইসলাম নামের অন্য একজন শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছেন। এতে দুজনই আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত মিজানুর রহমান তালামীযে ইসলাম এমসি কলেজ শাখার সহতথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক সম্পাদক। তিনি বলেন, একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রক্ত দেওয়ার পরও আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখন যারা আসছে, তাদের মধ্যেও তেমনটি দেখা যাচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই এমন মন্তব্য করার অধিকার তাঁর আছে। ওই মন্তব্যের জেরে রাতে কলেজের ১০-১২ জন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী তাঁর কক্ষে গিয়ে মন্তব্যটি বের করে মারধর করেছেন। এ সময় রড দিয়ে তাঁকে বেধড়ক পেটানো হয়। তাঁর কক্ষে থাকা জ্যেষ্ঠ এক শিক্ষার্থী তাঁদের নিবৃত্ত করতে গেলে তাঁর ওপরও চড়াও হয়েছিলেন হামলাকারীরা।
হামলাকারীদের চিনতে পেরেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রশিবিরের ইসমাঈল, নাজমুল, আদনান, সাদমানসহ অনেকে ছিলেন। শিবিরের নেতা-কর্মীরা ‘দাওয়াত’ নিয়ে তাঁর কক্ষে গিয়েছিলেন জানিয়ে বলেন, সে সময় তাঁর কক্ষে ইসলামিক ও হাদিস লেখা কিছু ক্যালেন্ডার পেয়েছিলেন। সেটি তাঁরা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। বলেছিলেন তালামীয ছাত্রলীগের দোসর।
এমসি কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইসমাঈল খান বলেন, কলেজে তিন দিনব্যাপী বইমেলা চলমান। সেখানে শিবিরের একটি স্টল রয়েছে। স্টলে দলের নেতা-কর্মীসহ তিনি দিনরাত থাকেন। বুধবার রাতে ছাত্রাবাসে একটি ঘটনা শুনে সেখানে গিয়ে দেখেন দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। পরে আহত শিক্ষার্থীদের তিনি হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালেও দুজনকেই হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে দুই পরিবারের সদস্যরা তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। হামলার ঘটনার সঙ্গে শিবির জড়িত থাকলে তিনি সেখানে যেতেন না। আহত শিক্ষার্থীদের পরিবারও তাঁদের স্বাগত জানাত না।
আনজুমানে তালামীযে ইসলামের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম মনোয়ার হোসেন বলেন, মিজানুর রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাঁর ওপর নৃশংসভাবে হামলা চালিয়েছেন। পতিত স্বৈরাচারের আমলে যেমন ফেসবুকে পোস্ট-কমেন্ট করলে শিক্ষার্থীদের ওপর ক্যাম্পাসে হামলা হতো। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময় কোনোভাবেই কাম্য নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের কর্মীকে যেভাবে দোসর-স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে, তা নিন্দনীয়।
এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এ বøকেরøসুপার মুসলেহ উদ্দিন খান বলেন, তিনি বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি জানতে পেরে হাসপাতালে দুই শিক্ষার্থীকে দেখতে গিয়েছিলেন। রাতে কী বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে, তা তিনি জানেন না।
কলেজের অধ্যক্ষ আবুল আনাম মো. রিয়াজ বলেন, এ ঘটনায় কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।