কে.এম লিমন গোয়াইনঘাট
গোয়াইনঘাট উপজেলার ১০টি গ্রামের আনুমানিক ১০ হাজার মানুষের এখনও যাতায়াতের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। সেখানে একটি ব্রিজ না থাকায় গ্রামবাসীর দুর্ভোগের যেন অন্ত নেই। আর বর্ষা এলে দুর্ভোগ বাড়ে চরমে। ঝড়বৃষ্টিতে বিপজ্জনক হয়ে উঠে সাঁকো পারাপার। যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের। রাস্তাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র আনা-নেওয়ায় ও পড়তে হয় বিরম্ভনায়। দীর্ঘদিন থেকে এই খালের উপর একটি ব্রিজের স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কয়েক হাজার মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাজীপুর-দক্ষিণ প্রতাপপুরের অংশ নিয়ে কইনা জঙ্গল এলাকায় একটি খালের উপর নির্মিত নড়বড়ে বাঁশের ওই সাঁকোটির অবস্থান।
ওই সাঁকো দিয়ে চলাচল করেন হাজীপুর, ঢালার পাড়, পশ্চিম ঢালার পাড়, পানতুমাই, দক্ষিণ পানতুমাই, বালুর ছড়, বাবুর কোনা, আগলসপুড়, প্রতাপপুর, লামাপুঞ্জিসহ ১০টি গ্রামের প্রায় ১০-১৫ হাজারের মত মানুষ। সাঁকো দিয়ে উপজেলা সদরসহ কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ হাটবাজারে যেতে হয়।
সাকোঁটি গ্রামবাসী তাঁদের প্রয়োজনে তৈরি করেন। এরপর প্রতি বছরই গ্রামবাসীর মাধ্যমে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এর সবই চলে স্থানীয় গ্রামবাসির আর্থিক সহায়তায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লোকজন একটু পর পর পায়ে হেঁটে এবং সাইকেল নিয়ে সাঁকো পার হচ্ছেন। সকালে শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে স্কুল-কলেজে যাচ্ছেন। সাকোঁটি পার হতে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ, একটু পা পিছলে গেলে যেকোনো সময় পড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় শিক্ষার্থীরা জানায়, এই রাস্তা দিয়ে আমাদের প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে যেতে অনেক সমস্যা হয়। ধুলোবালিও নাকে ডুকে। রাস্তা নেই, ব্রিজ ভাঙা। গাড়ি চলাচল করতে পারে না। বর্ষাকালে নিচে অনেক পানি থাকে। সব মিলিয়ে অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। তাই দ্রæত রাস্তাটি তৈরি হলে আমরা সহজেই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে পারবো।
শিক্ষার্থী শিমলা রানী দাস জানায়, বর্ষাকালে এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে আমরা পারাপার হই। এই রাস্তা এবং ব্রিজটি যাতো তারাতারি হয় আমরা সেই কামনা করি।
স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন জানান, আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। উপজেলার সাথে যোগাযোগের একটাই রাস্তা। কোন রোগী নিয়ে উপজেলায় দ্রæত যাওয়া কঠিন হয়ে যায়। বর্ষাকালে এই খালটি পানিতে ভরাট থাকে। তখন ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। তখন নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। রাতের বেলায় আলো ব্যবহার করে চলাচল করতে হয়।
স্থানীয় যুব নেতা ও ব্যবসায়ী জুবের আহমেদ বলেন, বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে বাশের তৈরি সাঁকো দিয়ে শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণকে চলাচল করতে হচ্ছে। খালটি প্রশস্তের দিক দিয়ে এতটা বড় না হলেও বর্ষা মৌসুমে ঠিকই খরস্রোতা নদীতে রূপান্তরিত হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমে কোনোমতেই সাঁকো দিয়ে চলাচল করা সম্ভব হয় না।
পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মামুন পারভেজ বলেন, হাজীপুর এবং দক্ষিণ প্রতাপপুরের বড় একটি অংশ এবং কয়েকটি গ্রামের মানুষের এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা হয়। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এখানে একটি ব্রিজ তৈরি করতে অনেক আগে থেকেই চেষ্টা চলতেছে। রাস্তাটি এলজিইডির আইডিভুক্ত না হওয়ায় এলজিইডির সাপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। আর পিআইও অফিস এখানে ব্রিজ করার একটি বরাদ্দ দিয়েছিল। যেটা নন গার্ডার ব্রিজ এবং মাটির কন্ডিশন বালি-মাটির কারণে ইঞ্জিনিয়ার এখানে এলাউ করেনি। পরবর্তীতে ব্রিজটি এখান থেকে সরিয়ে অন্য যায়গায় নেয়া হয়।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিক্লু ইসলাম বলেন, রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এখান দিয়ে বহু মানুষের যাতায়াত। মানুষগুলো চলাচলে খুবই কষ্ট করছে। আমি নিজেও গিয়েছি কয়েকবার করে। কিন্তু এই রাস্তাটি এলজিইডির আইডিভুক্ত নয়। যার কারণে আইডিভুক্ত ছাড়া আমরা ওই রাস্তার উপরে কোন কালভার্ট বা ব্রিজ করতে পারি না। তবে এটার একটি প্রক্রিয়াধীন আছে। উপজেলা প্রশাসন মিটিংয়ে আইডি নাম্বার ফেলে ডিসি অফিসে পাঠাইছি। ডিসি অফিস থেকে এটা প্ল্যানিং কমিশনে যাবে। প্ল্যানিং কমিশনে গেলে আইডিভুক্ত হলে তখন সেখানে একটি সেতু নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি এলজিইডির আইডিভুক্ত করণের জন্য যে কার্যক্রম আছে সেটি উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়টি অচিরেই বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি।