সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
ফেঞ্চুগঞ্জে সিএনজি অটোরিক্সা চালক মুহাম্মদ রুমেল মিয়া হত্যা মামলায় ২ ঘাতকের মৃত্যুদন্ড (ফাঁসি) আর অপর ২ আসামীর যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও একজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামীকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক মো: ইব্রাহিম মিয়া চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষনা করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামীরা হচ্ছে, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানার বখশিপুর গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর পুত্র জাবের আলী উরফে জাবেদ (২০) ও একই এলাকার মোমিন আলীর পুত্র আখতার (২২) এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হচ্ছে, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানার বখশিপুর গ্রামের মৃত রইছ আলীর পুত্র আব্দুল মুকিত (২৪) ও একই এলাকার নূরুল ইসলামের পুত্র আব্দুল হাফিজ (২২)। খালাসপ্রাপ্ত হচ্ছেন, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানার নয়াটিলা টিলাগাঁওয়ের মৃত ফজল মিয়ার পুত্র খলিল মিয়া (৩৫)। রায় ঘোষণার সময় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী আখতার ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী আব্দুল মুকিত আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত থাকলেও অপর আসামীরা পলাতক ছিলো।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০১২ সালে ১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ফেঞ্চুগঞ্জ থানার পালবাড়ী স্ট্যান্ড যাত্রী ছাউনীর সামনে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মুহাম্মদ রুমেল মিয়ার (২০) মৌলভীবাজার থ-১১-২৩৫৯ নম্বরযুক্ত সিএনজি অটিরিক্সা চুরি করার উদ্দেশ্যে মিথ্যাভাবে তাকে প্রবৃদ্ধ করে কৌশলে ভাড়ার কথা বলে বখশীপুর গ্রামের ভেতরে নিয়ে যায় আসামীরা। এ সময় চালক রুমেল মিয়াকে হত্যা করে তার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পানিতে ফেলে সিএনজি অটোরিক্সাটি নিয়ে পালিয়ে যায় দুবৃর্ত্তরা। পরে তার (মৌলভীবাজার থ-১১-২৩৫৯) নং সিএসজি অটোরিক্সাটি বিক্রি করতে গিয়ে উল্লেখিত আসামীরা গ্রেফতার হলে এর আসল রহস্য বেরিয়ে আসে এবং রুমেলের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এ ঘটনায় ফেঞ্চুগঞ্জ থানার নিজামপুর গ্রামের মো: মখলিছ আলীর পুত্র ও নিহত মুহাম্মদ রুমেল মিয়ার বড় ভাই মো: হারুন মিয়া বাদি হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ্য করে ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ২ (০২-১০-২০১২)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর ফেঞ্চুগঞ্জ থানার এসআই মো: মুজিবুর রহমান ৫ আসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে (৯৭নং) চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন এবং ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারী আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে আদালত এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ২৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামী জাবের আলী উরফে জাবেদ ও আখতারকে ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদেরকে প্রত্যেককে মৃত্যুদন্ড (ফাঁসি) ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রমে কারাদন্ড এবং অপর আসামী আব্দুল হাফিজ ও আব্দুল মুকিতকে এইক ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রমে কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। এছাড়া আসামী খলিল মিয়ার দোষ আদালতে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট জসিম উদ্দিন আহমদ ও আসামীপক্ষে এডভোকেট সৈয়দ শামীমা ইয়াসমিন তামান্না এবং এডভোকেট মো: আতিকুর রহমান মামলাটি পরিচালনা করেন।