সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
সুনামগঞ্জে নৃশংসভাবে খুন হওয়া মা ও ছেলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পৌর শহরের হাছননগর এলাকা থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে। নিহত দুজন হলেন- ফরিদা বেগম (৫০) ও তার ছেলে মিনহাজ আহমেদ (২০)। মিনহাজ সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র। যে বাসায় এই ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি এক লন্ডনপ্রবাসীর।
জানা গেছে, বাসার এক পাশে ফরিদা বেগম ছেলে মিনহাজকে নিয়ে থাকতেন। ফরিদা বেগমের স্বামী জাহিদুল ইসলাম মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে। তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বসিয়া খাউরি গ্রামে। বাসার অন্য পাশে থাকতেন ফরিদা বেগমের খালাতো বোন নারগিস বেগম (৬০), তার দুই ছেলে ফয়সল আহমদ (২২) ও ফাহমিন আহমদ (১৭)। ফয়সল মাদকাশক্ত বলে জানিয়েছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
জাহিদুল ইসলামের ভাতিজা সজীব আহমদ বলেন, তিনি শহরের হুসেস বখত চত্বর এলাকায় থাকেন। সকালে ফরিদা বেগমের বাড়ির গৃহকর্মী নুর জাহান বেগম দৌঁড়ে গিয়ে তাকে ঘটনা জানান। পরে তিনি এসে ঘরের ভেতর লাশ দুটি দেখতে পান। ঘরের সামনের দিকে তালাবদ্ধ ছিল, পেছনের দরজা ছিল খোলা। ফরিদা বেগমের লাশ তার কক্ষের বিছানার ওপর এবং মিনহাজের লাশ পাশের কক্ষের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। সজীব বলেন, ফরিদা বেগমের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে আনফা আক্তার লন্ডনপ্রবাসী। পারিবারিক কোনো কলহ ছিল বলে তার জানা নেই। মা ও ছেলে এখানে নিরিবিলি বসবাস করতেন।
গৃহকর্মী নুরজাহান (৫০) বলেন, তিনি সকাল ৮ টার দিকে এসে বাসার সামনের উঠান ঝাড়ু দেন। পরে সামনের দিকের স্টিলের গেটে সরিয়ে ফরিদা বেগমকে ডাকতে থাকেন। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বারান্দার গ্রিলের পর্দা সরিয়ে দেখেন, কক্ষের দরজা খোলা এবং মেঝেতে মিনহাজ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। এরপর তিনি দৌড়ে সজীব আহমদের বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানান।
প্রতিবেশী ও স্বজনরা জানান, পাঁচ বছর আগে ফরিদা বেগমের স্বামী জাহেদুল ইসলাম মারা যান। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছেলের কাছে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে তিনি ওখানেই থাকছেন। বাসায় থাকতেন ফরিদা বেগম ও তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে মিনহাজুল ইসলাম। সম্প্রতি খালাতো বোন নার্গিস বেগম ও তার মাদারাসা পড়ুয়া ছেলে ফাহমিদও এই বাসাতে থাকতে শুরু করেন। তিন দিন আগে ঢাকা থেকে এই বাসায় আসেন নারগিস বেগমের ছেলে ফয়সল আহমদ (৩০)। ফয়সল মাদকাশক্ত বলে জানিয়েছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। ঘটনার পর ফয়সল ও ফাহমিদকে পাওয়া যাচ্ছে না। ফয়সলকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। তাদের মা নারগিস বেগমকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়, পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ফরিদা বেগমের বোন ছুফিয়া আক্তার বলেন, সোমবার রাত ১০টার পরেও ফরিদা বেগমের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তার। তিনি ফোনের চার্জারের জন্য কল দিয়েছিলেন। ওই সময় বাসায় মিনহাজুলও ছিল। সকালে আত্মীয়-স্বজনরা দুর্ঘটনার খবর জানান।
সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, ফরিদার খালাতো বোন নারগিস বেগমের দুই ছেলের খোঁজ মিলছে না। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, পারিবারিক বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, নিজের বাসায় নৃশংস জোড়া খুনের এই রহস্য উদঘাটনে সিলেট থেকে ছুটে গেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর টিম। পাশাপাশি জেলা ডিবি পুলিশও তদন্ত করছে। একইসঙ্গে পুলিশও কাজ করছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জেলা পুলিশ সুপার আ. ফ . ম মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ব শত্রæতার জেরে পরিকল্পিতভাবে এমন নৃশংস ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাÐের রহস্য উদঘাটনে ডিবি ও পিবিআই’র টিম কাজ করছে। আশা করছি দ্রæতই ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হবে।