ধান ক্রয়ে অনিয়ম না হয়

17

এবার বিশেষ করে সুবিস্তীর্ণ হাওড় অঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে বইছে প্রবল খুশির বন্যা, আনন্দের ঝিলিক। হিটস্ট্রোক তথা তাপপ্রবাহে কিছু ফসল চিটা হলেও প্রায় সর্বত্র ধানের ফলন ভাল হয়েছে। অসময়ে অকস্মাৎ পাহাড়ী ঢল, প্রবল বৃষ্টিপাত, ঝড়ঝঞ্ঝা, বজ্রপাত হানা দেয়নি বললেই চলে। ফলে সময়ের ফসল যথাসময়ে ঘরে তথা গোলায় তুলতে পেরেছেন কৃষক। করোনা মহামারীর বিপদ-আপদ থাকলেও সারাদিন হাড়ভাঙ্গা কায়িক পরিশ্রম করাসহ রোদে পোড়ায় গ্রামগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের হার অনেক কম। অনন্ত তেমন শঙ্কা নেই। প্রতিবছর যেমন কৃষি শ্রমিকের ঘাটতি থাকে এবার তার অভাব অনুভূত হয়নি তেমন। কেননা সরকার তথা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই, বাছাই, এমনকি গোলাজাত করার কাজটিও করে দিয়েছে আধুনিক হারভেস্টার যন্ত্র। কৃষিতে সেচ-বিদ্যুত-সার-বীজ-যন্ত্রপাতিসহ সবরকম সরকারী সহায়তার সুফল ভোগ করেছেন কৃষক। এবার ধান-চাল কেনার জন্য যে দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার তাতেও কৃষক খুশি। তবে অনেক হাটবাজারে স্থানীয় ফড়িয়া-দালাল ও চাতাল মালিকদের কারসাজিতে কৃষককে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ধান বেচে দিতে হয়েছে। এদিকে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি বাঞ্ছনীয়। সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, কৃষি ও কৃষক বাঁচলে বাঁচবে বাংলাদেশ।
সরকার এবার চলতি বোরো মৌসুমে ৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান, আতপ ও সিদ্ধ মিলিয়ে ১১ লাখ ৫০ হাজার টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে ১ লাখ ৫০ হাজার টন আতপ চাল এবং ২৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান কেনা হবে। ২৯ টাকা কেজি দরে ২৮ এপ্রিল থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছে এবং চাল কেনা হয়েছে ৭ মে থেকে। শেষ হবে ৩১ আগস্ট। সরকার গত বোরো মৌসুমে ৬ লাখ টন ধান এবং ১১ লাখ টন চাল সংগ্রহ করেছিল। উল্লেখ্য, এবার ধান-চালের দাম বাড়ানো হয়েছে, যাতে কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায়। অন্যদিকে ৩০ এপ্রিলের পর বেসরকারী উদ্যোগে চাল আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলেও কৃষকের ধান-চালের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হতে পারে। তবে যাই করা হোক না কেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যেন সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কেনেন তা নিশ্চিত করতে হবে। এ নিয়ে যাতে কোন দুর্নীতি-অনিয়ম কিংবা নয়ছয় না হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।