ধনীদের জন্য কর ছাড় দিলেন অর্থমন্ত্রী

4

কাজির বাজার ডেস্ক

প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে তার পরিবর্তে শুল্ক বসানোর ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে সেই অবস্থান থেকে সরে এলেন তিনি। অর্থাৎ এমপিরা আগের মতোই গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন।
আবার ধনীদের জন্য কর ছাড় দিলেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট ঘোষণার সময় ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ালেও ধনীদের কর হার কমিয়ে দিয়েছেন তিনি। সর্বোচ্চ কর হার ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হলেও শনিবার (২৯ জুন) অর্থবিল পাসের সময় তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে আগের মতোই সর্বোচ্চ কর হার ২৫ শতাংশ রইল। এতে ধনীদের কম কর দিতে হবে। এ ছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগের প্রস্তাবও পাস করা হয়েছে।
কর প্রস্তাবে এমন বেশ কয়েকটি সংশোধনী এনে শনিবার জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০২৪ পাস করা হয়। বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের প্রস্তাবের ভিত্তিতে অর্থমন্ত্রী হাসান মাহমুদ আলী অর্থবিল পাসের আগে নতুন কিছু সংশোধনী আনেন। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি সর্বসম্মতি ক্রমে পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে বাজেট ঘোষণার সময় তিনি যেসব কর প্রস্তাব করেছেন তা শনিবার সংসদে পাস হয়েছে।
উল্লিখিত প্রস্তাবগুলো ছাড়া শনিবার আরও বেশ কয়েকটি সংশোধনী আনেন অর্থমন্ত্রী। যেমন: বাজেট ঘোষণার সময় অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে কর অবকাশ সুবিধা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন তিনি। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে আগের মতোই শিল্প স্থাপনে কর অবকাশ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। আবার বাজেট ঘোষণার সময় অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে ব্যবহৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শূন্য শুল্ক সুবিধা উঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু সংশোধনীতে এ ক্ষেত্রে শূন্য শুল্ক বহাল রাখার কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে ছোট করদাতাদের স্বস্তি দিতে বাজেটের আগে থেকেই বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছিল। গত ৬ জুন বাজেট ঘোষণার সময় করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি রাখেননি। বরং তখন সর্বোচ্চ কর হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়।
কিন্তু শনিবার অর্থবিল পাসের সর্বোচ্চ কর হার ৩০ শতাংশের প্রস্তাবটি তুলে নেন।
বাজেট ঘোষণার পর কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী এই সুযোগ দেওয়ায় অনড় থাকলেন। আগামী ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছরের জন্য কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থেকে গেল। আপনি ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা নগদ টাকা ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করতে পারবেন। আবার ফ্ল্যাট-প্লট কিনেও তা বৈধ করতে পারবেন। এ জন্য এলাকাভেদে নির্দিষ্ট হারে কর দিতে হবে। এ ছাড়া কোম্পানিগুলোর নিজেদের এই অপ্রদর্শিত অর্থ ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ রয়েছে।
বাজেট ঘোষণার সময় শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সারা দেশে বিয়েশাদি অনুষ্ঠানের জন্য কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করলে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এই কর প্রস্তাব সংশোধনী করে এখন থেকে শুধু সিটি করপোরেশন এলাকার কমিউনিটি সেন্টারে বিয়েশাদি অনুষ্ঠান করলেই রিটার্ন জমা দিতে হবে।
আয়কর ফাইল অডিটের ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়। কোনো করদাতা যদি আগের বছরের চেয়ে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বেশি কর দেন তা হলে ওই করদাতার ফাইল অডিট করা হবে না। কোনো পরিবারের সদস্য যদি কাউকে সম্পদ উপহার দেন, তা হলে তাকে উৎসে কর দিতে হবে না।