বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি : কুশিয়ারার ৫ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত

8

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং ক্রমশ এ অঞ্চলের বাড়ছে নদ-নদীর পানি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ২৯৪ মিলিমিটার। আর ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করলেও কুশিয়ারা নদী ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর পানি পাঁচটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। কেবল পাহাড়ি নদী সারিগোয়াইনের পানি বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার ওপরে অবস্থান করছে। সিলেট নগরীর বেশ কিছু এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে নগরীর মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়ি, কাজিরবাজার, তোপখানা, তালতলা, জামতলা, কুয়ারপাড়, শিবগঞ্জ, শাহজালাল উপশহর, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, মেন্দিবাগ, মজুমদারি, চৌকিদেখী, দক্ষিণ সুরমা, গোটাটিকর, ষাটঘর, শিববাড়ি কিষনপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা।
নগরীর জামতলা এলাকার বাসিন্দা হিমাংশু চন্দ্র শীল বলেন, এ নিয়ে চলতি মৌসুমে তার ঘরে কয় দফা পানি উঠেছে মনে নেই তার। প্রতিবার পানি ওঠার পর ভাড়া ঘরটি ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে চলে যান।
নগরীর শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা নাব্বির হোসেন বলেন, উপশহরে বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যায়। বাসাবাড়ির নিচতলায় থাকা যাচ্ছে না। এর জন্য দ্রæত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, উপশহরে প্রধান সড়ক পর্যন্ত পানিতে তলিয়েছে। বাসাবাড়ির অবস্থা আরও খারাপ।
এদিকে, উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেছে কুশিয়ারা নদী। আবারও প্লাবিত হয়েছে কুশিয়ারার তীরবর্তী জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও বালাগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা। আর মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলা হয়ে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি নদী জুড়ি, কন্টিনালা, ফানাই, আন ফানাই ও সোনাইনদীর পানি সরাসরি হাকালুকি হাওরে এসে পড়ছে। ফলে হাওর তীরবর্তী ছয়টি উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় কুশিয়ার নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল ৮৮ সেন্টিমিটার। গত বন্যার পর কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটারে নেমে আবারও বেড়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া একই সময়ে শেরপুরে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া গোয়াইনঘাটে সারিগোয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহমান রয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পর্যন্ত জৈন্তাপুর সারিঘাটে সারি নদীর বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। মঙ্গলবার সেটি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছে।
আর গত ২৩ জুন থেকে ভারী বর্ষণে কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বেড়ে ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তখন কেবল কুশিয়ারার চারটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এ কয়দিন ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি না হওয়া ও দেশে বৃষ্টি কম হওয়াতে কুশিয়ারার ফেঞ্চুগঞ্জ ব্যতীত অন্যান্য পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে আছে। আর ফেঞ্চুগঞ্জে ধীরগতিতে সোমবার (১ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপরে অবস্থান করছিল। কিন্তু আবহাওয়ার পূর্বাভাসের গত সোমবার সকাল থেকে হওয়া ভারী বর্ষণে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে উপর্যুপরি বন্যার মোকাবিলা করছেন ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জসহ কুশিয়ারার তীরবর্তী উপজেলার বাসিন্দারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন ভোরের পাতাকে বলেন, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) সিলেটে ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর সোমবার বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগের দিন সোমবার ১২ ঘণ্টায় (সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৫৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ দেখানো হয়েছে তিন মিলিমিটার।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছে। বুধবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত থাকবে। আবহাওয়া ভালো হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
গত সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত ভারী বর্ষণে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে বাসা-বাড়িতে ওঠেছে পানি। এছাড়াও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মানুষজন আবারও ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত সোমবার পর্যন্ত জেলায় ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে রবিবার পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০৮ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোক উঠেছেন। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন নেই।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, বন্যার আগাম প্রস্তুতির কথা আগেই বলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।